Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Farmers

হিমঘরে মজুত প্রচুর আলু, চিন্তায় চাষিরা

গত সপ্তাহখানেকের মধ্যে পূর্ব বর্ধমানের কালনা ও জামালপুরে দুই চাষির অপমৃত্যুতে পরিজনেরা অভিযোগ তুলেছেন, হিমঘরে রাখা আলুর দর পড়ছে বলেই ক্ষতি নিয়ে চিন্তায় আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁরা।

এখনও হিমঘরে মজুত প্রায় ৩৭% আলু।

এখনও হিমঘরে মজুত প্রায় ৩৭% আলু। ফাইল চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২২ ০৬:১৮
Share: Save:

খারাপ আবহাওয়ার কারণে গত মরসুমে কমেছিল ফলন। পরে দাম আরও বাড়বে, সে আশায় অনেক চাষিই আলু মজুত রাখেন হিমঘরে। বাজারে দাম বেড়েছে ঠিকই। তবে উত্তরবঙ্গ ও ভিন্ রাজ্যে ভাল উৎপাদনের সৌজন্যে তা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে ছিল। নতুন আলু চাষের সময় এসে গিয়েছে। এখনও কিন্তু হিমঘরে মজুত প্রায় ৩৭% আলু। ফলে হিমঘরে মজুত আলুর বন্ডের দাম পড়ছে। তাতেই বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। যে বড় চাষিরা আলু হিমঘরে রেখেছিলেন, বিপদ বাড়ছে তাঁদেরও। ফলে উদ্বেগে আলু ব্যবসায়ী সমিতি।

গত সপ্তাহখানেকের মধ্যে পূর্ব বর্ধমানের কালনা ও জামালপুরে দুই চাষির অপমৃত্যুতে পরিজনেরা অভিযোগ তুলেছেন, হিমঘরে রাখা আলুর দর পড়ছে বলেই ক্ষতি নিয়ে চিন্তায় আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁরা। ‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’র চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও রাজ্যে মজুত আলু রয়েছে ২৩ লক্ষ টন, যা মোট মজুতের প্রায় ৩৭%। হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদ ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করার বিষয়ে আর্জি জানানোর কথা ভাবা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, আজ, রবিবার বাঁকুড়ার কোতুলপুরে সমিতির একটি বৈঠক রয়েছে। তার পরেই কৃষি বিপণন দফতরে আবেদন জানানো হবে।

এই পরিস্থিতি তৈরি হল কেন? আলু ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বারই জেলার চাষি ও ব্যবসায়ীদের একাংশ বাড়তি লাভের আশায় হিমঘরে আলু মজুত করেন। এ বারও তা করেছিলেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ বছর দক্ষিণবঙ্গে আলুর ফলন কিছুটা মার খেলেও, উত্তরবঙ্গে ভাল ফলন হয়েছে। সেই আলু বাজারে এসেছে। উত্তরপ্রদেশ থেকেও আলু এসেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বিহার, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ যে সব রাজ্যে এখান থেকে প্রচুর আলু সরবরাহ হত, সেখানের বাজারেও এ বার উত্তরপ্রদেশের আলু গিয়েছে। ফলে, হিমঘর থেকে বেশি আলু বার করার মতো চাহিদা তৈরি হয়নি।

চাষিদের দাবি, মাস দুয়েক আগেও প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলুর দাম ছিল ৭০০ টাকার আশপাশে। কিন্তু এখন প্রতি বস্তা আলুর দাম দাঁড়িয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা। মেমারির আলু চাষি গোপেশ্বর প্রামাণিকের দাবি, ‘‘নতুন মরসুমে চাষের বীজ, রাসায়নিক সার কেনা, জমি তৈরির জন্য মোটা টাকা প্রয়োজন হয়। হিমঘরে রাখা আলু বিক্রি করে সেই টাকা মেলে। কিন্তু এখন আলুর যা দাম দাঁড়িয়েছে, চাষের খরচ জোগাড় করাই চিন্তার!’’

পূর্ব বর্ধমান জেলা হিমঘর মালিক সংগঠনের চেয়ারম্যান নবকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘আলুর বন্ডের দাম রোজই কমছে। লোকসানের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা আলু কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অনেকে আলু মজুত রেখে ঋণ নেন হিমঘর কর্তৃপক্ষর কাছে। সে টাকা বকেয়া থাকছে। ফলে, হিমঘর ব্যবসাও ক্ষতির মুখে পড়ছে।’’

আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তা লালু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, এই পরিস্থিতিতে তাঁর সরকারের কাছে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার আর্জি জানাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Potatoes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE