Advertisement
E-Paper

জল নামলেও, বড় ক্ষতি ধানচাষে

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে জেলার বেশ কিছু এলাকা। মাটির বাড়ি ধসে, কৃষিজমি এবং রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। লাভপুর-সহ জেলার যে যে অংশগুলি সমস্যা ছিল সোমবার তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু, যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ পাঠানো থেকে অন্যান্য সমস্যা মিটিয়ে নতুন করে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জনজীবনে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়েই সিউড়ির সার্কিট হাউসে একটি পূর্ণাঙ্গ বৈঠক করলেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৪১
এ ভাবেই বিঘার পর বিঘা ধান জমি চলে গিয়েছে জলের তলায়। সোমবার সাঁইথিয়া-লাভপুর রাস্তায় শিমুলিয়াহাট ও ইন্দিরা গ্রামের মাঝে তোলা নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই বিঘার পর বিঘা ধান জমি চলে গিয়েছে জলের তলায়। সোমবার সাঁইথিয়া-লাভপুর রাস্তায় শিমুলিয়াহাট ও ইন্দিরা গ্রামের মাঝে তোলা নিজস্ব চিত্র।

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে জেলার বেশ কিছু এলাকা। মাটির বাড়ি ধসে, কৃষিজমি এবং রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। লাভপুর-সহ জেলার যে যে অংশগুলি সমস্যা ছিল সোমবার তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু, যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ পাঠানো থেকে অন্যান্য সমস্যা মিটিয়ে নতুন করে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জনজীবনে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়েই সিউড়ির সার্কিট হাউসে একটি পূর্ণাঙ্গ বৈঠক করলেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। পাশাপাশি আলোচনা হল আরও বৃষ্টি হলে কী কী করণীয়, সেই বিষয় নিয়েও।
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী, জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার, জেলার দুই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, এসআরডিএ-র চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলাশাসক সাধারণ শ্যামল মণ্ডল, এসডিও (সিউড়ি সদর) অরুন্ধতী ভৌমিক এবং প্রভাবিত ৭টি ব্লকের বিডিও-রা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, পূর্ত দফতর, কৃষি, সেচ-সহ একাধিক দফতরের কর্তারাও ওই বৈঠকে যোগ দেন। বেলা দেড়টা থেকে ঘণ্টা খানেকের বৈঠক সেরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘কুঁয়ে নদীর ডান দিকের পাড় ভেঙে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে লাভপুরের থীবা, লাভপুর ১ এবং মহম্মদবাজারের চৌহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০টি গ্রাম। বোলপুর মহকুমার চারটি ব্লক ও মহম্মদবাজার ছাড়াও সাঁইথিয়া ও খয়রাশোল বৃষ্টি প্রভাবিত। তবে, আমরা ফোকাস করছি লাভপুরে। সেখানে ২০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।’’ তিনি জানান, লাঘাটা রাস্তার উপর এখনও প্রবল বেগে জল বইছে। দু’টি নৌকার ব্যবস্থা রাখা হলেও জলের স্রোতের জন্য সেগুলি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আজ, মঙ্গলবার থেকে সেখানে নৌকাগুলি চালানো যাবে বলে তাঁর আশা।

এ দিকে, বৈঠক শেষে জেলাশাসক এ দিন আরও বলেন, ‘‘প্রায় দু’ হাজার মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় ত্রাণ সামগ্রী, যেমন জামাকাপড়, ত্রিপল ও চাল পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।’’ তিনি জানান, হিংলো জলাধারে এখন জল বিপদসীমার অনেক নীচে থাকায় নতুন করে জল ছাড়তে হয়নি। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে থাকা শাল হিংলো কজওয়ে চালু রয়েছে। বীজতলা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কী ভাবে তার মোকাবিলা করা যায়, ভাবা হচ্ছে।

তবে, সাঁইথিয়া ও মহম্মদবাজারের যে সব জায়গা জলে ডুবে গিয়েছিল, গত দু’তিন দিন টানা বৃষ্টি না হওয়ায় অধিকাংশ স্থানেই জল নেমে গিয়েছে। যাঁদের বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের ত্রিপল ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। সাঁইথিয়ার ও মহম্মদবাজারের বিডিও অতুনু ঝুরি এবং‌ সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আর তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় এবং নদ-নদী থেকে বেশি জল না ছাড়ায় পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। তবে, আমোদপুর এলাকায় বন্যা দুর্গতদের এখনও পাঁচটি শিবির চলছে।’’ এরই মাঝে রবিবার সন্ধ্যা থেকে ওই এলাকায় মাঝে মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে কালো মেঘে মুখ ভার করেছে আকাশ। সাঁইথিয়া-সহ অনেক জায়গায় ঝেপে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।

অন্য দিকে, জলের নীচে থাকা ধান ও বীজতলার পরিমাণ এ দিন আরও বেড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে কৃষি দফতর। জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল জানিয়েছেন, সোমবার পর্যন্ত যে তথ্য দফতরে এসেছে তাতে ১০১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭৩৯টি মৌজায় ১৯,৮৯৩ হেক্টর জমির ধান বৃষ্টির জলে ডুবেছে। বীজতলা ডুবেছে ৪,৯৯৬ হেক্টর। বিশেষ করে ময়ূরেশ্বর ১, রামপুরহাট ২, মুরারই ২, লাভপুর, নানুর, বোলপুর, ইলামবাজার, মহম্মদবাজার, দুবরাজপুর, খয়রাশোল এবং সাঁইথিয়া ব্লক এলাকায় বন্যায় আমন ধান ও বীজতলায় প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। অল্পবিস্তর ক্ষতি হয়েছে সিউড়ির দু’টি ব্লকেও। হেক্টর প্রতি ১৩,৫০০ টাকা ক্ষতির সরকারি ধার্য মাত্রা রয়েছে। সেই হিসাবে সব মিলিয়ে বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রায় ৩৩ কোটিরও বেশি টাকার ধান এবং বীজতলা। ক্ষতির অঙ্ক আরও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে কৃষি দফতরের আশঙ্কা। অমরবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘এখনও টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। যে সব জমিতে ধান বা বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেই সব জমিতে রবি চাষে জোর দেওয়া হবে।’’

ঘটনা হল, বন্যা পরিস্থিতিতে একটি বড় চিন্তার বিষয় হল, জল নামার পরে এলাকায় জলবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। তার মোকাবিলার জন্যও প্রশাসন প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলাশাসক যেমন এ দিন বলেছেন, ‘‘এ দিনই জেলায় কেন্দ্রীয় প্রকল্প শুরু হয়েছে। পেটের রোগে আটকাতে কী কী করণীয়, তার প্রচার চালানো হচ্ছে। সেটা যেমন চলবে, তেমনই জলাশয়ে ব্লিচিং পাওডার বিলি করা হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য দফতর।’’ প্রায় একই বক্তব্য রাজ্যের শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ওষুধও রয়েছে।’’

Farmers heavy rain problem Chandranath singh paddy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy