Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সৎকার অন্যের দেহ, আক্ষেপ যাচ্ছে না বাবার

‘বাবা হয়ে নিজের মেয়েকে চিনতে পারব না’— গত রবিবার মর্গে এক তরুণীর দেহ দেখে বড় মুখ করেই পুলিশকে কথাটা বলেছিলেন দাসপুরের সুনীল দোলই। দেহ শনাক্ত করে সৎকারও করে ফেলেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল ও কাঁথি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৬
Share: Save:

‘বাবা হয়ে নিজের মেয়েকে চিনতে পারব না’— গত রবিবার মর্গে এক তরুণীর দেহ দেখে বড় মুখ করেই পুলিশকে কথাটা বলেছিলেন দাসপুরের সুনীল দোলই। দেহ শনাক্ত করে সৎকারও করে ফেলেছিলেন।

তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাড়িতে হাজির মাম্পি দোলই, যে মেয়েকে ‘মৃত’ ভেবে দাহ করেছেন সুনীলবাবু ও তাঁর পরিজনেরা। মেয়ে ঘরে ফেরায় হাঁফ ছেড়েছেন বছর পঁয়তাল্লিশের সুনীলবাবু। কিন্তু তা ছাপিয়ে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে অন্যের মেয়ের দেহ দাহ করার অপরাধবোধ। বৃহস্পতিবার তাঁর আক্ষেপ, “দেহটা আরও ভাল করে দেখা উচিত ছিল। যাঁদের মেয়েকে দাহ করলাম, তাঁরা এ বার কিছু জানতে চাইলে কী জবাব দেব!”

৮ অগস্ট বছর পনেরোর মাম্পি নিখোঁজ হয়। থানা-পুলিশ করেও হদিস মেলেনি। ২০ তারিখ দিঘায় অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর দেহ মেলে। সেই ছবি খবরের কাগজে দেখেই দিঘা যান সুনীলবাবু। কারণ, ছবিতে যে মেয়ের আদল। ২১ অগস্ট কাঁথি হাসপাতালের মর্গে ‘মেয়ের দেহ’ শনাক্ত করেন তিনি। সোমবার হয় সৎকার। ইতিমধ্যে মঙ্গলবার কৈখালি থেকে পুলিশ মাম্পিকে উদ্ধার করে। সে নিখোঁজ হওয়ার দিনই টুম্পা পাল নামে এক তরুণীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে দেবু পাল, বাচ্চু আলি, সাহেব আলি নামে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁরা সকলেই জেল হেফাজতে। বাচ্চুর সঙ্গে মাম্পির সম্পর্ক রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। তবে বাচ্চুর সঙ্গেই সে চলে গিয়েছিল কি না তা স্পষ্ট নয়। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় মাম্পি জানিয়েছে, সে নিজের ইচ্ছেতেই বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল। তবে বাকিদের সঙ্গে ঘটনার সম্পর্ক জানতে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।

অবশ্য ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন— বাবা হয়ে মেয়েকে চিনতে ভুল হল কী করে! পুলিশ সূত্রে খবর, দিঘার ঝাউবনে পাওয়া দেহের নাক থেকে মুখের নীচ পর্যন্ত অংশ ক্ষতবিক্ষত ছিল। দেহ ফুলেও গিয়েছিল। পুলিশের দাবি, তারা সুনীলবাবুকে এ-ও বলে, যে তরুণীর দেহ পাওয়া গিয়েছে তার সঙ্গে মাম্পির বয়সের ফারাক আছে। কিন্তু সুনীলবাবু মৃতদেহের বুকে কালো দাগ দেখে দাবি করেন, এ তাঁরই মেয়ে। তারপর আর দেহ হস্তান্তরে দেরি করেনি পুলিশ।

নিয়ম অনুযায়ী, অজ্ঞাতপরিচয় দেহের ছবি বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়। ভিসেরা-নখ-রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করে রাখা হয়, যাতে প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়। এ ক্ষেত্রেও তরুণীর দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয় বলে দাবি পুলিশের। কাঁথির এসডিপিও ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই তরুণীর দেহের ছবি রাজ্যের বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়। বাকি নিয়মও মানা হয়েছে। কিন্তু সুনীলবাবু দেহ শনাক্তকরণে ভুল করেছেন। এ ক্ষেত্রে কী-ই বা করার আছে।’’ দিঘায় যে তরুণীর দেহ পাওয়া গিয়েছিল, তার পরিচয় জানতে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cremation Father
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE