Advertisement
E-Paper

শোক-সংস্কার দূরে সরিয়ে বৌমার বিয়ে দিলেন কৃষক দম্পতি

মুকুন্দ বলছেন, ‘‘ও আমার বৌমা নয়, নিজের মেয়েই। ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আবার বিয়ে দিলাম।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৬
নবদম্পতির সঙ্গে মুকুন্দ মাইতি। নিজস্ব চিত্র

নবদম্পতির সঙ্গে মুকুন্দ মাইতি। নিজস্ব চিত্র

পুত্রশোক এখনও দগদগে। আটপৌরে চাষির ঘরে সংস্কারও তো থাকার কথা!

সে সব দূরে সরিয়ে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর বছর ঘোরার আগেই নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে পুত্রবধূর অন্যত্র বিয়ে দিলেন এক কৃষক দম্পতি। জন্মের দ্বিশতবর্ষে ফিরে এল বিদ্যাসাগরের স্মৃতি। যে মানুষটা ছেলে নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে এক স্বামীহীনার বিয়ে দিয়ে নজির গড়েছিলেন, তাঁর জেলাতেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মুকুন্দ মাইতি। অমিতাভ বচ্চন, রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত ২০০৬ সালের হিন্দি ছবি ‘বাবুল’-এর চিত্রনাট্যও যেন সত্যি হয়ে উঠল ডেবরার মাইতি পরিবারে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বাড়জেশুয়া গ্রামের বাসিন্দা মুকুন্দ সোমবার পাশের পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার ভবতারিণী মন্দিরে পুত্রবধূ উমার বিয়ে দিয়েছেন। তার আগে খুঁজেপেতে পাত্র পছন্দ করেছেন। মুকুন্দ বলছেন, ‘‘ও আমার বৌমা নয়, নিজের মেয়েই। ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আবার বিয়ে দিলাম।’’

প্রচলিত রীতিতে তো পরিজনের মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে পরিবারে শুভ কাজ হয় না? মুকুন্দ বলছেন, ‘‘একটা মেয়ের ভবিষ্যতের থেকে রীতি-সংস্কার বড় হতে পারে না।’’

মুকুন্দের ছেলে অমিত মাইসুরুতে সোনার কাজ করতেন। পাশের গ্রাম মুকুন্দপুরের উমা জানার সঙ্গে অমিতের প্রেমের বিয়েতে মুকুন্দ ও তাঁর স্ত্রী শেফালির মত থাকলেও উমার বাপের বাড়ির সায় ছিল না। ২০১৬ সালে বিয়ের পরে তাই শ্বশুর-শাশুড়িই হয়ে ওঠেন উমার আপনজন। তবে সংসার বেশিদিন সুখের হয়নি উমার। ২০১৮-এর ডিসেম্বরে মাইসুরু থেকে ফেরার সময় ট্রেনেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় অমিতের। কন্যাস্নেহে উমাকে কাছে টেনে নেন পুত্রহারা বাবা-মা।

দ্বিতীয় বিয়েতে উমা অবশ্য গোড়ায় রাজি ছিলেন না। কিন্তু মুকুন্দ হাল ছাড়েননি। পরে উমাকে বুঝিয়ে রাজি করান মুকুন্দ। সব জেনেই উমাকে বিয়ে করতে রাজি হন পাঁশকুড়ার মাইশোরার শ্যামসুন্দরপুর পাটনা গ্রামের স্বপন মাইতি। পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী স্বপনের বাবা-মাও রাজি হন। মঙ্গলবার স্বপনের বাড়িতে ছিল বৌভাত। স্বপন বলছেন, ‘‘আমি মন থেকেই এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তবে এই বিয়েতেও সায় ছিল না উমার বাপের বাড়ির। আমন্ত্রণ জানালেও আসেননি কেউ। উমাও বলছেন, ‘‘মুকুন্দপুর নয়, আমার বাপের বাড়ি বাড়জেশুয়ায়।’’ অষ্টমঙ্গলায় ওই বাড়িতেই ফিরবেন উমা।

Father in law ,Marriage Panskura Daughter in law
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy