Advertisement
E-Paper

ভরসা করেছিলেন সরকারে, ছেলের লাশ নিয়ে ফিরতে হল বাবাকে

ক্যানসার আক্রান্ত অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেকে পিঠে করে কলকাতায় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে পারলেন না রিকশা ভ্যান চালক বাবা। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসার আশ্বাসে ভরসা রেখে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:১৮
স্বজন হারানোর কান্না গোকুলের পরিবারে।— নিজস্ব চিত্র।

স্বজন হারানোর কান্না গোকুলের পরিবারে।— নিজস্ব চিত্র।

ক্যানসার আক্রান্ত অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেকে পিঠে করে কলকাতায় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে পারলেন না রিকশা ভ্যান চালক বাবা। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসার আশ্বাসে ভরসা রেখে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান তাঁরা। অভিযোগ, সেখানে যেতে মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে। কোথায় নিখরচায় চিকিৎসা। চিকিৎসকের মুখে প্রায় সাত লক্ষ টাকা খরচের কথা শুনে সব আশা ছেড়ে তাঁরা গত বৃহস্পতিবার বিকালে ট্রেনে উঠে বসেন। ট্রেন ছাড়তেই চোদ্দ বছরের ছেলে গোকুল দাসের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বর্ধমান স্টেশনের কাছে সে মারা যায়। শনিবার সকালে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপাটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মদন সিংহ পাড়ার বাড়িতে দেহ পৌঁছতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এদিন গ্রাম জুড়ে একই প্রশ্ন ফিরেছে গ্রামের গরিব মানুষের কি সরকারি হাসপাতালে কোন চিকিৎসা মিলবে না! বাসিন্দাদের বিশ্বাস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ না ফিরিয়ে দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে পাচিরাম নাহাটা স্কুলের পড়ুয়া গোকুলের দেহ কফিন বন্দি হয়ে গ্রামে ফিরত না। স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মণের দাবি, “সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য টাকা চাওয়া হয়েছে এটা ওঁরা জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যেত। টাকার অভাবে চিকিৎসা হবে না এটা মেনে নেওয়া যাবে না।”

পরিবারে দুই ছেলের মধ্যে গোকুল ছোট। ভ্যান রিকশা চালক বাবা মইলেন দাস জানান, ছোট ছেলে কয়েক মাস থেকে গলা ব্যাথায় ভুগছিল। ব্যাথা বেড়ে চলায় গত ৬ অক্টোবর জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের আউটডোরে নিয়ে যান। সেখানে তিন সপ্তাহ চিকিৎসার পরে গোকুলকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। গত ২৩ নভেম্বর রোগীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বায়োপসি পরীক্ষার পরে গত ১ ডিসেম্বর কলকাতায় নীলরতন সরকার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়। মইলেন বাবু জানান, কলকাতায় যাওয়ার কথা শুনে বাড়ির সবাই ঘাবড়ে যায়। আর্থিক সাহায্যের জন্য স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি কিছু টাকা দেন। সাংসদ তহবিল থেকেও সাহায্যের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। আত্মীয়রা এগিয়ে আসে। গত ৩০ নভেম্বর ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় রওনা দেন। সঙ্গে নেন ছোট ভাই জয়দেবকে।

মইলেনবাবু বলেন, “১ ডিসেম্বর কলকাতায় নেমে সোজা নীলরতন সরকার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাই। লম্বা লাইন। ছেলে হাফাচ্ছে। অনেককে বলেও তাড়াতাড়ি দেখানোর ব্যবস্থা করাতে পারিনি। অবশেষে যখন সামনে গেলাম বলা হল ৬ নম্বর ঘরে যেতে। সেখানে যেতে চিকিৎসক জানালেন আজকে কিছু হবে না বৃহস্পতিবার যেতে হবে।” ওই পরিস্থিতি দেখে রাতেই তাঁরা আরজিকর হাসপাতালে চলে যান। সেখানে চিকিৎসক ক্যানসার বিভাগে যোগাযোগের কথা বলে ছেড়ে দেন। গোকুলের কাকা জয়দেব দাস বলেন, “কোথায় ক্যানসার বিভাগ খুঁজে বেড়াতে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। রাতে হতাশ হয়ে হোটেলে ফিরে যাই। ওখানে কিছু হবে না ভেবে ২ ডিসেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে চিকিৎসক জানান আজকে হবে না। আগামিকাল আসতে হবে। অনেক অনুরোধ করেছি চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু লাভ হয়নি। কলকাতায় সরকারি চিকিৎসার অনেক সুযোগ আছে শুনি। কিন্তু দেখে তো বিঝতে পারিনি।”

৩ ডিসেম্বর গোকুলকে নিয়ে তাঁরা ফের মেডিক্যাল কলেজে যান। বাবা মইলেনবাবু বলেন, “চিকিৎসক সব দেখে বলেন ছয় মাস চিকিৎসা করালে ছেলে সুস্থ হবে। এজন্য প্রায় ৭ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে। চিকিৎসা শুরু করতে এখনই ২ লক্ষ টাকা জোগাড় করতে হবে। শুনে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করে। চিকিৎসককে বলি আমি রিকশা ভ্যান চালাই। এত টাকা কোথায় পাব! তিনি জানান তাঁর কিছু করার নেই। এর পরে সব আশা ছেলেকে নিয়ে স্টেশনের দিকে চলে যাই।” ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ গোকুলকে নিয়ে বাবা ও কাকা উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে বসেন। বাবা জানান, ট্রেন ছাড়তে ছেলের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বর্ধমান স্টেশনের কাছে মারা যায়। এর পরে সেখান থেকে দেহ ময়না তদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গোকুলের মা বেলগরি দেবী কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “কত সরকারি সাহায্যের কথা শুনি কোথায় কি। আমার ছেলে কিছুই পেল না। ”

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy