Advertisement
E-Paper

মেয়ের জন্য বিধায়কের কাছে গিয়েছিলেন আমিন

বড় মেয়েকে বড় স্কুলে পড়ানোর সাধ বাবার। শুনেছিলেন, সে জন্য নাকি বিধায়কের শংসাপত্র দরকার। তৃণমূল নেতা সারফুদ্দিন খানের সঙ্গে পরিচিতি ছিল মেয়ের বাবা আমিন আলি সর্দারের।

সমীরণ দাস

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৭

বড় মেয়েকে বড় স্কুলে পড়ানোর সাধ বাবার। শুনেছিলেন, সে জন্য নাকি বিধায়কের শংসাপত্র দরকার। তৃণমূল নেতা সারফুদ্দিন খানের সঙ্গে পরিচিতি ছিল মেয়ের বাবা আমিন আলি সর্দারের। সারফুদ্দিনই ভরসা দেন, শংসাপত্রের ব্যবস্থা করে দেবেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দু’জনের দেখা হয়েছিল জয়নগরের দুর্গাপুর পেট্রল পাম্পের কাছে। একটু পরেই এলাকায় আসার কথা বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের। সারফুদ্দিন অপেক্ষা করতে বলেন আমিনকে।

হঠাৎই বদলে গেল পরিস্থিতি। বিধায়কের গাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। গুলি-বোমায় প্রাণ হারিয়েছেন সারফুদ্দিন, আমিন। মারা গিয়েছেন গাড়ির চালক মইনুল হক মোল্লা ওরফে বাবুও। তিনটি পরিবারই বুঝে উঠতে পারছে না, কেন এমন বেঘোরে মরতে হল তাঁদের।

জয়নগরের শ্রীপুর পঞ্চায়েতের রামকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আমিন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করতেন। বড় মেয়ে মেহজামিনের বয়স বছর দশেক। ছোট মেহনাজ সবে ছ’য়ে পা দিয়েছে। পড়শিরা জানান, বড় মেয়েটার পড়াশোনায় মাথা ভাল। গত বছরই তাকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করেছিলেন আমিন। কিন্তু ইচ্ছে, আরও ভাল স্কুলে যদি পড়ানো যায় মেয়েকে।

এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন আমিন। তাঁর দাদা মহসিন আলি সর্দার বলেন, ‘‘বেঘোরে মারা গেল ভাইটা। মেয়ে দু’টোর কী হবে ভেবে পাচ্ছি না।’’ শুক্রবার বাড়ির উঠোনে বসে মা নাজিমাকে জড়িয়ে ধরে অঝোর কেঁদে চলেছিল মেহেজামিন। একটাই কথা, ‘‘আব্বুর কাছে যাব।’’ মেয়েকে সান্ত্বনা দেবেন কী, নিজেই চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না নাজিমা। আমিনের মা মারা গিয়েছেন মাস তিনেক আগে। সেই শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ছেলের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে হতভম্ব বাবা মওলা আলি সর্দার। আত্মীয়েরা জানালেন, ছেলের নাম ধরে ডাকছেন।

একই চিত্র মইনুল হক মোল্লার বাড়িরও। মায়ের চিকিৎসা, বোনের পড়াশোনার দায়িত্ব ছিল মইনুলের উপরে। অটো চালিয়ে সব দিক সামলে উঠতে পারছিলেন না। বাড়তি রোজগারের আশায় চার চাকার গাড়ি চালানো শেখেন। সুযোগ পেলে ভাড়ার গাড়ি চালাতেন। পরিবার সূত্রের খবর, দিন দশেক ধরে বিধায়কের গাড়ি চালানোর দায়িত্ব পান মইনুল। বছর দেড়েক আগে বাবা মারা গিয়েছেন তাঁর। মা প্রায় শয্যাশায়ী। একমাত্র বোন ইয়াসমিন বারাসত কলেজে পড়েন। শুক্রবার পরীক্ষা দিতে যেতে পারেননি। উঠোনে দাঁড় করানো অটোর দিকে দেখিয়ে মইনুলের মা নুরবানু মোল্লা চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, ‘‘কেন যে অটো ছেড়ে গাড়ি চালাতে গেল!’’

বাবার কী হয়েছে, সেটা বুঝে ওঠার বয়স হয়নি নিহত সারফুদ্দিনের দুই ছেলেমেয়ের। শুক্রবার হাসানপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বড় মেয়ে বছর পাঁচেকের অনিকা ব্যস্ত মোবাইল গেমে। ছোট ছেলে বছর তিনেকের তানভির খেলছে এক বন্ধুর সঙ্গে।

TMC Murder Joynagar TMC MLA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy