Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Ramadan

সেহরি খাওয়াতে ঘুম ভাঙাবেন অরুণ, রুদ্রেন্দুরা

আগামী বুধবার থেকে শুরু হতে চলেছে রমজান মাস। রমজান শেষে খুশির ইদ। মুসলিমদের বড় উৎসব।

একসঙ্গে: নাদিয়ালের একটি মসজিদের সামনে দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন।

একসঙ্গে: নাদিয়ালের একটি মসজিদের সামনে দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন। নিজস্ব চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২১ ০৭:১২
Share: Save:

ভোরে সেহরি (রোজা বা উপবাস শুরুর আগে খাবার) খাওয়ার জন্য ঘুম ভাঙাতে মুসলিম মহল্লায় ঘুরবেন রুদ্রেন্দু পাল, বীরবল গিরি, অরুণ রায়, অসিতরঞ্জন জোয়ারদার, সুরজিৎ অধিকারীরা। ঘুম ভাঙাতে ওঁরা গাইবেন গজল। আর এ জন্য মহল্লার জুম্মান, রাকিবুল, মফিজুল, রমজানদের থেকে সকাল-সন্ধ্যে গজলের গান শিখছেন। আসন্ন রমজান মাসে এমন কিছুর সাক্ষী রাখতে বন্দর এলাকার নাদিয়ালে জোরকদমে চলেছে প্রস্তুতি।

আগামী বুধবার থেকে শুরু হতে চলেছে রমজান মাস। রমজান শেষে খুশির ইদ। মুসলিমদের বড় উৎসব। চার দিকে মেরুকরণের হাওয়ায় দুই সম্প্রদায়ের মিলনক্ষেত্র হিসেবে বরাবরই নজির গড়েছে বন্দর এলাকার গঙ্গা পাড়ের নাদিয়াল। করোনাকালের রমজান মাসেও সেই ছবিই দেখা যাবে। সারা দিনের রোজা ভাঙতে সন্ধ্যায় ফুটপাতবাসী মুসলমানদের শরবত, ফল, তেলেভাজার ব্যবস্থা করছেন নাদিয়াল থানার উদ্যোগে তৈরি ‘পিস কমিটি’র হিন্দু ভাইয়েরা।

গত বছর লকডাউনের সময়ে ইদুজ্জোহা, মহরম, দুর্গাপুজোয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিল নাদিয়াল। হিন্দু সদস্যেরা ইদুজ্জোহায় এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সে বার মোড়ে মোড়ে মোটরবাইক নিয়ে টহল দিয়েছিলেন। আবার দুর্গাপুজোয় মণ্ডপ তৈরি এবং আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা হিন্দুদের পঞ্চমীর দিন থেকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন পাড়ার মুসলমান ভাইয়েরা। একই ভাবে বুধবার থেকে শুরু রমজান মাসে পাশে দাঁড়াবেন কমিটির হিন্দু সদস্যেরা। পিস কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রুদ্রেন্দু পালের কথায়, “একটি রাজনৈতিক দল যে ভাবে দুই সম্প্রদায়ের সম্পর্কে চিড় ধরাতে চাইছে, তা কাম্য নয়। নাদিয়ালের হিন্দু-মুসলমান জোট বেঁধেছে, একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ রেখে থাকব। কেউ বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না।”

রমজান মাসে মুসলিম অধ্যুষিত নাদিয়ালের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় থানার তরফে সম্প্রতি পিস কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। নাদিয়াল থানার ওসি ময়ূখময় রায় বলেন, “এলাকার হিন্দু-মুসলমানরা বিভিন্ন উৎসবে যে ভাবে একে অন্যের পাশে দাঁড়ান, এটাই তো সর্বত্র হওয়া উচিত। এ দেশের সংস্কৃতি সেটাই।”

নাদিয়ালের পিস কমিটির সদস্য তথা এলাকার একটি পুজো কমিটির সম্পাদক বীরবল গিরির কথায়, “গজল আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এটা কেবল মুসলমানরা গাইবেন, হিন্দুরা নন—তা একেবারেই ঠিক নয়। এখান থেকেই ওরা-আমরা বিভেদের সৃষ্টি হয়। সম্প্রীতির এই সুরকে এক তারে বাঁধতে আমাদের ছোট্ট প্রয়াস।” আরও এক পুজো কমিটির সদস্য সুরজিৎ অধিকারীর কথায়, “ঠাকুর্দার আমল থেকে এখানে বাস। এখানে হিন্দু-মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থেকেছি, থাকব। কেউ সেই ভালবাসায় চিড় ধরাবে, এটা কোনও মতেই হতে দেব না। আমরা আরও হাতে হাত রেখে, আরও বেঁধে বেঁধে থাকব।”

রুদ্রেন্দু বলছন, “করোনা, লকডাউনে এখানকার বড় কারবার, বস্ত্র ব্যবসা বিপর্যস্ত। ওই ব্যবসায়ীরা সারা দিন উপবাস করবেন। ওঁদের পাশে একটু মানবিক হতে ইফতারের ব্যবস্থা থাকবে।” কমিটির আরও এক যুগ্ম সম্পাদক মহম্মদ ওয়ারিশের কথায়, “সর্বত্র এই সম্পর্ক ধরে রাখতেই হবে।”

আর ডিসি (বন্দর) জাফর আজমল কিদোয়াই বলছেন, “নাদিয়াল সারা দেশে সম্প্রীতির নজির গড়ে তুলুক, সেটাই কাম্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muslim hindu Ramadan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE