Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

পাওনা চেয়ে অশোক শুনলেন ধারের গীত

দোকানে দোকানে চালু কথা— আজ নগদ। কাল ধার। তারই উল্টো এক সংস্করণ রাজ্য সরকার চালু রেখেছে বিরোধীদের জন্য। ধার করেছিলেন কাল বা পরশু? তা হলে আজ আর নগদে পাওনা চাইবেন না! শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের অভিজ্ঞতা অন্তত তেমনই বলছে। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের কাছে পুরসভার জন্য বকেয়া পাওনা চাইতে গিয়ে তাঁকে শুনতে হল বাম আমলের ধারের গঞ্জনা! যে আমল পেরিয়ে দু-দু’বার ক্ষমতায় চলে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

দোকানে দোকানে চালু কথা— আজ নগদ। কাল ধার।

তারই উল্টো এক সংস্করণ রাজ্য সরকার চালু রেখেছে বিরোধীদের জন্য। ধার করেছিলেন কাল বা পরশু? তা হলে আজ আর নগদে পাওনা চাইবেন না!

শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের অভিজ্ঞতা অন্তত তেমনই বলছে। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের কাছে পুরসভার জন্য বকেয়া পাওনা চাইতে গিয়ে তাঁকে শুনতে হল বাম আমলের ধারের গঞ্জনা! যে আমল পেরিয়ে দু-দু’বার ক্ষমতায় চলে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সাইকেল বিলি থেকে ইমাম-ভাতা, ক্লাবের জন্য খয়রাতি থেকে কলেজের উৎসবে অনুদান, সবই চলছে নির্দ্বিধায়। শুধু বিরোধীরা পাওনা চাইলেই সেই ঋণের পুরনো গীত!

নানা প্রকল্পে শিলিগুড়ি পুরসভার বকেয়া পাওনা জমতে জমতে প্রায় ১০০ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী, পুরমন্ত্রী, জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী-সহ নানা জনের কাছে দাবি জানানোর পরে অশোকবাবু বুধবার ফোন করেছিলেন অর্থমন্ত্রীকে। বাম জমানার পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর ফোন পেয়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রী শুনিয়ে দিয়েছেন, আগের সরকার দু’লক্ষ কোটি টাকার ঋণের দায় রেখে গিয়েছে। সেই ঋণ শুধতেই বর্তমান সরকারের নাজেহাল দশা! টাকা চাইলেই পাওয়া যাবে কোথা থেকে? অশোকবাবু অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, সেই ঋণের পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটেও রাজ্যের অন্য সব পুরসভাকে তো টাকা দিচ্ছে সরকার! শুধু বিরোধীদের হাতে-থাকা দু-একটা পুরসভার দাবি শুনলেই ঋণের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে?

অমিতবাবু অবশ্য এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। আর অশোকবাবুর অভিযোগ, নানা অজুহাত দেখিয়ে রাজ্য সরকার আসলে বিরোধীদের পরিচালিত পুরসভায় আর্থিক অবরোধ তৈরি করেছে। যা অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, অনৈতিক এবং বেআইনি। বিধানসভা চত্বরে দাঁড়িয়ে এ দিন অশোকবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করছেন। বামেরা জানিয়ে রেখেছে, রাজ্যের নায্য পাওনা আদায়ের জন্য প্রয়োজনে একসঙ্গে দিল্লিতে দরবার করতেও আপত্তি নেই। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী যদি বলেন, তাঁর পতাকা না ধরলে টাকা মিলবে না, সেটা কি মুখ্যমন্ত্রী মানবেন? অশোকবাবুর কথায়, ‘‘ওঁদের (তৃণমূল সরকার) মানসিকতা হচ্ছে, ওঁঝের ঝান্ডা ধরে আত্মসমর্পণ করতে হবে! নইলে কিছুই মিলবে না!’’

বস্তুত, ঘরোয়া আলোচনায় রাজ্যের এক মন্ত্রীও কবুল করছেন, বিরোধীদের হাত থেকে পুরসভা নিজেদের দখলে নিতে গিয়ে আবার অন্য মুশকিল হচ্ছে! বিরোধীদের পুরসভাকে তা-ও ঋণের গল্প বলে ঠেকিয়ে রাখা যায়। তৃণমূলের পুরবোর্ড হয়ে গেলে তো টাকা না দিয়ে উপায় নেই!

এক দিকে অর্থনৈতিক অবরোধ এবং অন্য দিকে পুরবোর্ড দখল করে নেওয়ার জন্য তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের প্রকাশ্য হুমকি যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তার প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে মহামিছিলের ডাক দিয়েছে বামেরা। পরের দিন বাম কাউন্সিলরদের নিয়ে ধর্না-অবস্থান হবে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) দফতরের সামনে। তার পরে শিলিগুড়ির কাউন্সিলরদের কলকাতায় এনে রাজভবন অভিযান। তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit mitra Ashok Bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE