Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
নিশানায় সেই নানুরের কাজল

মন্ত্রীর মুখে এ বার ‘মীরজাফর’

আগে ‘দুষ্কৃতী’ বলে তোপ দেগেছিলেন। নানুরের বাসাপাড়ায় দলের শহিদ সমাবেশে নানুরের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা কাজলকে এ বার ‘মীরজাফর’ বলে কটাক্ষ করলেন পূর্তমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম!

নানুরের বাসাপাড়ায় শহিদ সমাবেশে পূর্তমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম! ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

নানুরের বাসাপাড়ায় শহিদ সমাবেশে পূর্তমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম! ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

আগে ‘দুষ্কৃতী’ বলে তোপ দেগেছিলেন। নানুরের বাসাপাড়ায় দলের শহিদ সমাবেশে নানুরের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা কাজলকে এ বার ‘মীরজাফর’ বলে কটাক্ষ করলেন পূর্তমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম!

২০০০ সালের ২৭ জুলাই সূচপুর-কাণ্ডের বর্ষপূর্তির সভায় হরেক প্রসঙ্গে বারে বারে ফিরে এল কাজলের নাম। কাজলের সঙ্গে সিপিএমের গোপন বোঝাপড়ার ফলেই নানুর বিধানসভার আসনটি হাতছাড়া হয়েছে, বুধবার ফের সেই ব্যাখ্যা হাজির করেন ফিরহাদ। শহীদ সমাবেশের মঞ্চ থেকে কাজলের নাম না নিয়ে ফিরহাদের তোপ, ‘‘শুধু মীরজাফরের মতো পিছন থেকে ছুরি মারাই নয়, যাঁরা নিজের ভাইয়ের রক্তে হোলি খেলেছে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নানুরে হারিয়ে কেউ কেউ ভেবেছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকেই তৃণমূলকে হঠিয়ে দেওয়া যাবে। তা হয়নি। হবেও না। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আছেন।’’ এরপরেই তাঁর টিপ্পনি, ‘‘আমরা চিমটি কাটলেই ও শেষ হয়ে যাবে।’’

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পূর্তমন্ত্রী দাবি করেন, কাজল শেখ দলের কেউ নয়। একই সুরে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডলকেও বলতে শোনা যায়, ‘‘দলে মীরজাফরের কোনও জায়গা নেই।’’ কেষ্টর চ্যালেঞ্জ, ‘‘পরের বিধানসভা নির্বাচনে নানুরে ৪০ হাজার ভোটে জিতব। না হলে রাজনীতিই ছেড়ে দেব।’’ কাজলকে উদ্দেশ্য করে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ আনেন এলাকার পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী গদাধর হাজরাও।

এ দিনের সমাবেশে অন্যদের মধ্যে রাজ্য সম্পাদক অলোক দাস, জেলার দুই মন্ত্রী-সহ অন্য বিধায়কেরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন শহিদ পরিবারের সদস্যরাও। অন্য বক্তাদের কথায় নানা ভাবে উঠে আসে ২০০০ সালের ২৭ জুলাইয়ের সেই দিনের কথা— তৃণমূলের বরাবরের অভিযোগ ওই দিন সিপিএমের হাতে ১১ জন দলীয় সমর্থক খুন হন। এঁদের সকলেই খেতমজুর। পরের বছর থেকে বাসাপাড়ায় তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে শহিদ দিবসের আয়োজন করে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে অবশ্য তিনি শহিদ সমাবেশে আসেননি।

এ বারে শহিদ সমাবেশ অনেক দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এত দিন সমাবেশের মাঠ ভরাতে কাজলের অন্যতম ভূমিকা ছিল বলে দলেরই অনেকের মত। পের গোষ্ঠী সংঘাতের জেরে পরোক্ষে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গদাধরকে হারানোর অভিযোগ ওঠে কাজলের বিরুদ্ধে। তারপরই দলে কার্যত ব্রাত্য হয়ে পড়েন কাজল। তাকে বার্তা দিতেই শক্তি পরীক্ষার জন্য এ বার বাইরে থেকে লোক আনার পরিবর্তে নানুরের কর্মী-সমর্থক দিয়ে মাঠ ভরানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

দিনের শেষে সেই চ্যালেঞ্জ ‘সফল’ বলেই দাবি নেতৃত্বের। তৃণমূল নেতৃত্বের হিসেবে লোক হয়েছিল ১৫ হাজারেরও বেশি। পুলিশের হিসেবে সংখ্যাটা ১৩ হাজার। বিরোধীদের দাবি, মেরেকেটে ওই সংখ্যা ১০ হাজার। গদাধর হাজরা এবং ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার। শুধুমাত্র নানুর থেকেই সেই লক্ষ্যমাত্রা পার করে দিয়েছি। এই ঘটনায় প্রমাণ করে দলে একা কেউ সব নয়।’’

গোটা ঘটনায় কাজলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁর এক অনুগামীর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘দাদা কারও সঙ্গে মীরজাফরের মতো কাজ করেননি। বরং কেউ কেউ তার সঙ্গেই মীরজাফরের মতো আচরণ করে তাঁকে শেষ করতে চেয়েছিল।’’ তিনি যোগ করছেন, ‘‘শহীদ সমাবেশের জমায়েত দেখেও কিছু প্রমাণ হয় না। কেননা বিষয়টির সঙ্গে মানুষের সহমর্মিতা জড়িয়ে রয়েছে। না ডাকলেও অনেকে হাজির হন। দাদাকে দোষ না দিয়ে দলের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেখালে প্রমাণ হত ওই সব নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা আদৌ আছে কিনা!’’ পাল্টা শ্লেষ কাজল-অনুগামীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nanur Firad Hakim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE