E-Paper

জঞ্জালের স্তূপ ভরে দাহ্য বস্তুতে, মঙ্গলাহাটের বাড়ি যেন আস্ত জতুগৃহ!

মিটার বক্স বা জয়েন্ট বক্সগুলিও বিপজ্জনক ভাবে ঢাকনা খোলা অবস্থায় রয়েছে। সোমবার হাওড়ার মঙ্গলাহাটের মডার্ন হাট নামে ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেল, অব্যবস্থার এমন নগ্ন চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ ০৯:০৫
সঙ্কীর্ণ রাস্তার পাশে পর পর দোকান। সোমবার, মঙ্গলাহাটের মডার্ন হাটে।

সঙ্কীর্ণ রাস্তার পাশে পর পর দোকান। সোমবার, মঙ্গলাহাটের মডার্ন হাটে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

লম্বা বাড়িটির দু’প্রান্তে ও মাঝখানে রয়েছে তিনটি সিঁড়ি। প্রতিটি তলার রাস্তা রীতিমতো সঙ্কীর্ণ। তার পাশে লোহার গ্রিলের খাঁচার মধ্যে ছোট ছোট দোকান এবং গুদাম। চারতলা উঁচু বাড়িটির প্রতিটি তলার এই একই ছবি। বহুতলটিতে যেমন কোনও জলাধার নেই, তেমনই নেই অগ্নি-নির্বাপণের ব্যবস্থাও। উল্টে, প্রতিটি তলায় ডাঁই হয়ে পড়ে কাগজের বাক্স, প্যাকেট, কাগজের মতো দাহ্য বস্তুর ঠাসা আবর্জনা। মিটার বক্স বা জয়েন্ট বক্সগুলিও বিপজ্জনক ভাবে ঢাকনা খোলা অবস্থায় রয়েছে। সোমবার হাওড়ার মঙ্গলাহাটের মডার্ন হাট নামে ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেল, অব্যবস্থার এমন নগ্ন চিত্র। হাওড়া ময়দান সংলগ্ন নিত্যধন মুখার্জি রোডের গা ঘেঁষে থাকা ওই বাড়িটি যে কার্যত জতুগৃহ, তা মানছেন ব্যবসায়ীরাই।

এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, প্রতি সোমবারের মতোই হাট বসেছে বাড়িটিতে। তবে তিন ও চারতলার অধিকাংশ দোকান বন্ধ। যে দোকানটিতে আগুন লেগেছিল, সেটির শাটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দোকানের ভিতরের সব সামগ্রী পুড়ে ছাই। হাটের এক ব্যবসায়ী জানান, বাড়িটির বৈদ্যুতিক লাইনের তারগুলির এমন অবস্থা যে, মাঝেমধ্যেই শর্ট সার্কিট হয়। তিনি বলেন, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে পুরনো তারগুলি না বদলানোর জন্য শর্ট সার্কিট হচ্ছে। সেই কারণেই রবিবার আগুন লাগে। না-হলে আগুন লাগবে কী করে? আসলে পুরো বাড়িটাই একটি জতুগৃহ।’’ আতঙ্কিত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রবিবারের বদলে ওই অগ্নিকাণ্ড সোমবার সকালে হলে আরও বড় বিপদ হতে পারত। এমনকি, হুড়মুড়িয়ে নামতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃৃত্যুর আশঙ্কাও ছিল।

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, প্রায় ২০-২৫ বছর আগে বাড়িটি তৈরির সময়েও পুর আইন না-মানার অভিযোগ ওঠে। প্রথমত, বাড়িটি রাস্তার পাশের একটি নর্দমার উপরে তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, বাড়িটির তেতলা পর্যন্ত তৈরির অনুমোদন থাকলেও চতুর্থ তলাটি বেআইনি ভাবে গড়া হয়। এ জন্য সেই তলাটি ভাঙার নোটিস দেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে তা কার্যকর করা হয়নি। কিন্তু ওই হাটে জলের লাইন কাটা কেন? হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন জলের লাইন কাটা, তা বলতে পারব না। আমরা হাটের কোনও জলের লাইন কাটিনি।’’

হাওড়া হাট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মডার্ন হাটের চারতলা জুড়ে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান রয়েছে। অভিযোগ, হাট মালিকেরা বাড়িটির প্রতিটি অংশ ব্যবসায়ীদের ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। কয়েকটি শৌচাগারও গুদাম হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী বা ক্রেতাদের নিরাপত্তার কথা ভাবা হয়নি বলেই অভিযোগ। এ দিন হাওড়া মঙ্গলাহাট ব্যবসায়ী সমিতির (সেন্ট্রাল) সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার সাবা বলেন, ‘‘শুধু এই হাট নয়, যে বাড়িগুলিতে হাট বসে, সেগুলির অধিকাংশেরই বেহাল অবস্থা। সেখানে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। তাই আমরা অবিলম্বে হাটগুলির সংস্কার চেয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেব। না-হলে এক দিন বড় অঘটন ঘটবে।’’

হাওড়ার দমকল সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার ওই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন হাওড়ার জেলাশাসক। তার পরেই সিদ্ধান্ত হবে, ওই হাটের মালিকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fire Manglahaat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy