Advertisement
E-Paper

গোর্খাল্যান্ড চেয়েও সুর বেশ নরমই

যদিও বন্‌ধ তোলা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, তবু এই নমনীয়তাকেই সাফল্য হিসেবে দেখছে প্রশাসন। তাদের মতে, প্রথমত, পাহাড়ের প্রধান দলগুলিকে আলোচনার টেবিলে আনা সম্ভব হয়েছে। সেখানে মোর্চার প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে এসেছেন ‘নতুন মুখ’ বিনয় তামাঙ্গ। এটা বড় ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৫২
বিনয় তামাঙ্গ।

বিনয় তামাঙ্গ।

পাহাড়ে অচলাবস্থা কাটাতে প্রথম সর্বদল বৈঠকে নমনীয় হল সব পক্ষই। এক দিকে বিনয় তামাঙ্গ-সহ পাহাড়ের সব নেতা জানিয়ে দিলেন, গোর্খাল্যান্ড তাঁদের প্রধান দাবি। তবে আলোচনার প্রক্রিয়া চলুক, সেটা তাঁরাও চান। উল্টো দিকে, একমত না হয়েও গোর্খাল্যান্ডের দাবির কথা শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটাই গণতন্ত্র।’’

যদিও বন্‌ধ তোলা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, তবু এই নমনীয়তাকেই সাফল্য হিসেবে দেখছে প্রশাসন। তাদের মতে, প্রথমত, পাহাড়ের প্রধান দলগুলিকে আলোচনার টেবিলে আনা সম্ভব হয়েছে। সেখানে মোর্চার প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে এসেছেন ‘নতুন মুখ’ বিনয় তামাঙ্গ। এটা বড় ঘটনা।

দ্বিতীয়ত, ওঁরা গোর্খাল্যান্ডের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। দাবি মানা হোক বা না হোক, কথাটা শোনার প্রয়োজন ছিল। পরে সাংবাদিক বৈঠকেও সে কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘গোর্খাল্যান্ড পাহাড়ের একটা আবেগের বিষয়। তবে আমার এ নিয়ে এক্তিয়ার নেই। আমি না চাইলেও ওঁদের দাবির কথা শুনতে পারি। এটাই গণতন্ত্র।’’ উল্টো দিকে বিনয়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা গোর্খাল্যান্ডের দাবির কথা বলেছি। উনি সহমত না হলেও তা মন দিয়ে শুনেছেন। এটাই তো গণতন্ত্র।’’

আরও পড়ুন: বন্‌ধ তুলছি না, হুঙ্কার গুরুঙ্গের

তৃতীয়ত, বন্‌ধ তুললে পাল্টা আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘ওঁদেরও অনুরোধ করেছি, পাহাড়বাসীর অসহনীয় যন্ত্রণার কথা ভেবে বন্‌ধ তুলে নিতে। ওঁরা ফিরে গিয়ে দলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আলোচনা শুরু হওয়ায় আমি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী। আলোচনাও জারি থাকবে।’’ ঠিক হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হবে ১২ সেপ্টেম্বর। শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যায় বেলা ৩টেয় হবে ওই সর্বদল বৈঠক। বিনয়রাও জানিয়েছেন, পাহাড়ে ফিরে আলোচনা করে বন্‌ধ তোলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কেউ কেউ বলছেন, বন্‌ধ যদি উঠে যায়, তা হলে আলোচনা দ্রুত ইতিবাচক দিকে এগোতে পারে। পাহাড় স্বাভাবিক হলে অর্থনৈতিক কাজকর্মও শুরু করা সম্ভব।

আলোচনা: বিনয় তামাঙ্গের (বাঁ দিকে) সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। পাশে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস এবং গৌতম দেব।

মুখ্যমন্ত্রী তাই এক কথায় বৈঠককে ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেছেন। বিনয়ও বলেন, ‘‘আমরাও চাই সুসম্পর্ক বজায় রেখে আলোচনা চলতে থাকুক। অতীতে আন্দোলন হয়েছে। আগামী দিনেও হবে। কিন্তু, আলোচনার রাস্তা খোলা রাখলে জনজীবন বিপর্যস্ত হবে না।’’

বিনয় আরও জানান, দ্বিতীয় বৈঠকের আগে পাহাড়ে বন্‌ধ তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি নিয়ে বিবেচনা করতে দু’তিন দিনের মধ্যেই মোর্চা, জিএনএলএফ, জন আন্দোলন পার্টি (জাপ) বৈঠকে বসবে।

জাপের নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী খোলা মনে সব শুনেছেন। সে জন্য আলোচনাটা ভাল হয়েছে। আগামী দিনে তাড়াতাড়ি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়া দরকার। দ্বিতীয় দফায় সেটা নিয়েই জোর দেব।’’ জিএনএলএফের তরফে নীরজ জিম্বা জানিয়ে দেন, তাঁরা পাহাড়ে গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকে বন্‌ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এই বার্তা নিয়ে পাহাড়ের মানুষকে কতটা বোঝাতে পারবেন মোর্চার বিনয় তামাঙ্গ? পাহাড়ে বিকল্প নেতা হিসেবেই বা কতটা শক্ত হবে তাঁর ভিত? কেউ কেউ বলছেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পরে পাহাড়ের মানুষ এখন চাইছেন, বন্‌ধ উঠে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। কিন্তু একই সঙ্গে বেশির ভাগই ভয় পাচ্ছেন মোর্চার কট্টরপন্থীদের। বিশেষ করে গুরুঙ্গের ডাকে যদি ফেরার সঞ্জয় থুলুং নতুন করে পাহাড়ে হাঙ্গামা বাধাতে চান, তা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা। অনেকেই বলছেন, বিস্ফোরণ কিন্তু এখনও বন্ধ হয়নি।

তবু আলোচনা শুরু হওয়ায় আশায় অধিকাংশ পাহাড়বাসী। তা ছাড়া গুরুঙ্গ-বিরোধী জোট সর্বদল বৈঠকে আরও ঠাসবুনোট হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। ফলে গোপন ডেরা থেকে পাহাড় শাসন মোর্চা-প্রধানের পক্ষে এখন আর অতটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন পাহাড়বাসীরা।

এখন তাঁরা পুজোর মরসুমের আগে বন্‌ধ ওঠার অপেক্ষায়।

নিজস্ব চিত্র।

meeting Darjeeling West Bengal Goverment GJM Mamata Banerjee গোর্খাল্যান্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy