Advertisement
E-Paper

২৫০ ফুট নীচে পড়ল গাড়ি, সিকিমে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

পাহাড়ের রাস্তা থেকে গাড়ি পিছলে প্রায় আড়াইশো ফুট নীচে গিয়ে পড়ায় মারা গেলেন একই পরিবারের ৫ জন। সোমবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ পশ্চিম সিকিমের নামচি ঘুরে কালুকের দিকে যাচ্ছিলেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০১
মৃত বিভাসকান্তি পাঠক (বাঁ দিকে) ও ব্রজেন্দ্রনাথ পাঠক।

মৃত বিভাসকান্তি পাঠক (বাঁ দিকে) ও ব্রজেন্দ্রনাথ পাঠক।

পাহাড়ের রাস্তা থেকে গাড়ি পিছলে প্রায় আড়াইশো ফুট নীচে গিয়ে পড়ায় মারা গেলেন একই পরিবারের ৫ জন। সোমবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ পশ্চিম সিকিমের নামচি ঘুরে কালুকের দিকে যাচ্ছিলেন তাঁরা। নয়াবাজার থেকে ঋষিবাজার হয়ে কালুকের পথে দুর্ঘটনায় পড়ে গাড়িটি। ঋষিবাজার পেরোনোর পরেই রঙ্গিত নদীর ধারের জঙ্গলে পড়ে যায় গাড়িটি।

হাবরার মসলন্দপুরের চিকিৎসক বিভাসকান্তি পাঠক (৪২) তাঁর আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে গিয়েছিলেন সিকিম ঘুরতে। দুর্ঘটনায় বিভাস মারা গিয়েছেন। মারা গিয়েছেন তাঁর বাবা ব্রজেন্দ্রনাথ পাঠক (৭১), মা আশালতাদেবী (৬১), জ্যাঠতুতো দিদি লিলি পাঠক (৫২) এবং মামা নীহারেন্দু বিশ্বাস (৫৭)। লিলির স্বামী তুষারকান্তি পাঠক, তাঁদের আর এক আত্মীয় প্রতাপ বিশ্বাস ও গাড়ির চালক অসীম রাই গুরুতর আহত।

সিকিম থেকে ৫ জনের দেহ নিয়ে পর্যটক দলের বাকিরা শিলিগুড়ি পৌঁছন রাত পৌনে ১২টা নাগাদ। এই ৫ জনের ময়নাতদন্ত হয়েছে সিকিমের গেজিং হাসপাতালে। পর্যটকদের পরিজনেরা অপেক্ষা করছিলেন শিলিগুড়ির মৈনাক লজে। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ দু’টি ছোট গাড়ি নিয়ে তাঁরা কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন।

(বাঁ দিক থেকে) আশালতা পাঠক, নীহারেন্দু বিশ্বাস ও লিলি পাঠক। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: দড়ি ধরে নেমে এক এক করে তুলে আনি

দেগঙ্গার শান্তিনিকেতন ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তুষারকান্তি শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তুষারকান্তি জানান, দু’টো গাড়িতে মোট ১৭ জন ছিলেন। নামচির কিছু জায়গা ঘুরে সন্ধ্যার পরে তাঁরা কালুকের হোটেলের দিকে ফিরছিলেন। একটি গাড়ি কালুকে পৌঁছোয়। অন্য গাড়িটিতে ছিলেন তুষারকান্তিবাবুরা। তিনি বলেন, ‘‘আমি গাড়ির পিছন দিকে ছিলাম। আমার স্ত্রী সামনের দিকে এবং বাকিরা মাঝখানের সিটে বসেছিলেন। মাঝপথে হঠাৎ একটা প্রবল ঝাঁকুনিতে ঘুমের ঘোর কেটে যায়। আমাদের গাড়িটা গড়াতে গড়াতে নীচে নামছিল। সবাই চিৎকার জুড়ে দেন। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’’ নীচে তখন অন্ধকার নেমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গাড়িটা কয়েকবার উল্টেপাল্টে একটি বাঁশঝাড়ে গিয়ে আটকায়। তখনই পিছন দিকের দরজার কাচ ভেঙে আমি বাইরে পড়ে গিয়ে বাঁশঝাড়ে আটকে যাই। মিনিট তিরিশেক পরে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের উদ্ধার করেন।’’ স্থানীয় বাসিন্দারাই তাঁদের কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সিকিম পুলিশ দেহগুলিকে গ্যালসিং হাসপাতালে পাঠায়। আহত দু’জনকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নামিয়ে আনা হয়। বাকি ৯ জন সারা দিন গ্যালসিং এলাকাতেই ছিলেন।

চালকের বাড়ি সিকিমেই। গাড়িটিও নতুন। তার নম্বরপ্লেটও সিকিম পরিবহণ দফতর এখনও দেয়নি। তাই যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি না তা-ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। কারণ, নম্বর প্লেট হওয়ার মেলার আগে কোনও গাড়ি বাণিজ্যিক ব্যবহার বেআইনি। কেনার পরে ‘ফিটনেস’ পরীক্ষার পরেই নম্বর প্লেট দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার জন্য চালকই দোষী কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে প্রাথমিক তদন্তে সিকিম পুলিশের অনুমান, কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় বাঁকের মুখে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যান। পশ্চিম সিকিমের পুলিশ সুপার তেনজিং লোডেন লেপচা বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে কুয়াশা ছিল ওই এলাকায়। তবে কেন দুর্ঘটনা হয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। বিশদে তদন্ত হচ্ছে। চালক সুস্থ হলে জেরা হবে।’’

ঘটনার পরপরই ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলে পর্যটন দফতর। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কলকাতায় দেহ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা ও যারা সুস্থ রয়েছেন তাদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থাও পর্যটন দফতর থেকেই করা হচ্ছে।’’ পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘পর্যটন দফতরের পাশাপাশি আমরাও সমন্বয় রেখে কাজ করছি।’’

Machhalandapur Family Car Accident Died Sikkim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy