হোলমেটহীন: মোটরবাইক সওয়ারি বিজেপি নেতা। নিজস্ব চিত্র
বন্যায় ডুবে গিয়েছে বাড়ি। রায়গঞ্জের জগদীশপুর পঞ্চায়েতের মকদমপুরের বাসিন্দা ভ্যানচালক সূর্যকান্ত দাসের ঠিকানা এখন নদীবাঁধ। শনিবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে কাছে পেতেই ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘দিলীপদা স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে টানা একসপ্তাহ নাগর নদীর বাঁধে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করেছি। প্রশাসন ত্রিপল, চিড়ে, গুড়, পানীয় জল, কিছুই দেয়নি।’’
ইটাহারের দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের হাসুয়া এলাকাতেও একই ছবি। গৃহবধূ মালতি বর্মন ও চাষি রবিউল হক দিলীপবাবুকে ক্ষোভ জানিয়ে বললেন, ‘‘বন্যায় ভিটেমাটি ডুবে গিয়েছে। পরিবার নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। প্রশাসন ত্রিপল দিলেও প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল ও বাচ্চাদের খাওয়ানোর দুধ দিচ্ছে না। আমরা বিচার চাই।’’
শুধু সূর্যকান্ত, মালতি ও রবিউলই নয়, শনিবার দিনভর রায়গঞ্জ ও ইটাহার ব্লকের জগদীশপুর, ভাতুন, বাহিন, গৌরি ও দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকার কয়েকশো বন্যাদুর্গত বাসিন্দা দিলীপবাবুকে ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। এ দিন দিলীপবাবু দলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি নির্মল দাম, সহ সভাপতি পবিত্র চন্দ-সহ দলের জেলা নেতাদের নিয়ে ওই পাঁচটি পঞ্চায়েতের মকদমপুর, মসলন্দপুর, সুভাষগঞ্জ, বাহিন, শঙ্করপুর, ঝিটকিয়া, ভিটিহার, নয়াটুলি, দুপদুয়ার, কাজলবাড়ি ও হাসুয়া এলাকায় গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। দুর্গতদের মধ্যে বিস্কুট, গুঁড়োদুধ ও পানীয় জলও বিতরণ করেন তাঁরা।
এ দিন দুপদুয়ার এলাকায় বন্যা দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে নৌকায় চেপে নাগর নদী পার হয়ে নয়াটুলি এলাকায় ফেরেন দিলীপবাবু। নয়াটুলি এলাকার রাস্তা সঙ্কীর্ণ হওয়ার কারণে তাঁর গাড়িটি প্রায় ৫০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েছিল। সে সময় দলের এক নেত্রীকে নিয়ে ফের বিনা হেলমেটে মোটরবাইক চালিয়ে গাড়ি পর্যন্ত গিয়ে বিতর্কে জড়ান দিলীপবাবু। সেই সময় এলাকার দুই বধূ, চেনমানু খাতুন ও বাফাতুন খাতুন দৌড়ে দিলীপবাবুর সামনে এসে তাঁর সামনে হাতজোড় করে বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা টানা আটদিন জলবন্দি অবস্থায় থাকলেও প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা আসেননি। ওই আটদিন সকলেই আধপেটা খেয়ে ছিলাম।’’
দিলীপবাবু বলেন, ‘‘রায়গঞ্জ ও ইটাহার ব্লকের হাজার হাজার বন্যাদুর্গত চরম দুর্দশা ও কষ্টে রয়েছেন। রাজ্য সরকার দুর্গতদের ত্রিপল, খাবার ও পানীয় জল দিতে ব্যর্থ। মুখ্যমন্ত্রী ইটাহারে এসে চটি ভিজিয়ে চলে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দুর্গতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি চাষের ক্ষতিপূরণ ও বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার দাবি জানাব।’’ জেলাশাসক আয়েশা রানি অবশ্য বলেন, ‘‘প্রশাসন দুর্গতদের পর্যাপ্ত ত্রাণ বিলি করেছে। কাউকে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy