পশ্চিমবঙ্গের দত্তকপুত্র হতে চান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাই কেরল থেকে এ রাজ্যে নিজের ভোটাধিকার স্থানান্তর করছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার তাঁর হাতে প্রয়োজনীয় ফর্ম-৮ তুলে দিয়েছেন বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও) এবং বিএলও সুপারভাইজ়ার। এখন রাজ্যপাল কাগজপত্র জমা দিলেই এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম যোগ হয়ে যাবে।
কেরলের কোট্টামের বাসিন্দা বোসের নামেও রয়েছে বাংলার ছোঁয়া। তিনি ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হয়ে আসেন। পরের বছর সরস্বতীপুজোয় রাজভবনে বাংলায় তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল। কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল পদাধিকারইবলে সে রাজ্যের প্রথম নাগরিক। তাই চাইলেই তিনি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভোটার হতে পারেন। কিন্তু বোসের তরফে প্রথম থেকে তেমন কোনও আবেদন আসেনি। এখানকার নাগরিক না হওয়ায় তাঁর নামে আসেনি কোনও এনুমারেশন ফর্মও। সূত্রের খবর, এসআইআর পর্বেও এ বিষয়ে রাজভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু রাজ্যপাল এ রাজ্যের নাগরিক হতে চাননি। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি কেরলের ভোটারই থাকবেন।
আরও পড়ুন:
রাজ্যে বৃহস্পতিবার এসআইআর-এর এনুমারেশন ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন। ভোলবদল করে রাজ্যপাল এই দিনেই ফর্ম-৮ গ্রহণ করলেন। জানিয়ে দিলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক হতে চান। রাজভবন থেকে তিনি বলেন, ‘‘আজ এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে, আমিও আমার কাগজপত্র জমা দেব। মানসিক ভাবে আমি পশ্চিমবঙ্গের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেক দিন ধরে এখানে আছি। বাংলার মাটির সঙ্গে আমার আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। এখানকার মানুষ, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আমাকে টানে। আমি বাংলার দত্তকপুত্র হতে চাই। তাই এখানকার ভোটার হওয়ার কথা ভেবেছি।’’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কথা উল্লেখ করে এর পর রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি এখানে থাকতে ভালবাসি। যে বাতাসে রবীন্দ্রনাথ শ্বাস নিয়েছেন, আমি তাতে শ্বাস নিতে ভালবাসি। নেতাজি বোস যে পথে হেঁটেছিলেন, আমিও সেই পথ দিয়ে হাঁটতে চাই। এটা আমার কাছে দারুণ সুযোগ। এ রাজ্যের ভোটার হলে পশ্চিমবাংলার সঙ্গে আমার একাত্মতার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে।’’
সাধারণ ভাবে, কোনও কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের ১০ দিন আগে পর্যন্ত ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করা যায়। তবে রাজ্যপাল চাইলে যে কোনও সময় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভোটার হতে পারেন। তাঁর ক্ষেত্রে কোনও সময়সীমা প্রযোজ্য হয় না। পশ্চিমবঙ্গের পূর্বতন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এ রাজ্যের ভোটার হয়েছিলেন। ভোটও দিয়েছিলেন। কিন্তু বোসের ক্ষেত্রে প্রথম থেকে ভোটার হওয়ার বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। যদিও প্রথম দিন থেকে তিনি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বিশেষ যোগের ইঙ্গিত দিয়েছেন। জানিয়েছেন, নেতাজিই তাঁর নায়ক। অবশেষে এনুমারেশন পর্বের শেষ দিনে ভোটার হওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত বদল করলেন বোস।