বেশি বয়সে মাধ্যমিক পাশ করা নতুন নয়। নতুন নয় এই পরীক্ষায় জেলবন্দির সাফল্যও। আট বছর আগে জেলে আসা প্রৌঢ় বন্দি যদি মাধ্যমিকে পাশ করেন, তাতেও তেমন অবাক করার মতো কিছু নেই। কিন্তু মঙ্গলবার ৫৩ বছরের ভোলা মালাকারকে
আলাদা করে চিনিয়ে দিল তাঁর অন্য রকম এক সাফল্য। কারণ গত আট বছরে কার্যত নিরক্ষরতা থেকে নিজেকে এই জায়গায় তুলে এনেছেন তিনি।
প্রায় আট বছর আগে ৪৫ বছরের ভোলা যখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে এসেছিলেন, তখন প্রথাগত শিক্ষা দূরে থাক, অক্ষরজ্ঞানই সে ভাবে ছিল না তাঁর। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে এসেই কার্যত হাতেখড়ি হয় দশ বছর কারাবাসের সাজাপ্রাপ্ত বন্দিটির। বেশ কিছু দিন কারারক্ষী ও জেলের অফিসারদের কাছে তালিম নিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন ভোলা। এ দিন জেলে মাধ্যমিকের ফল এলে দেখা যায়, ৫৩ বছরের প্রৌঢ় ৩৮৬ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন। পেয়েছেন ‘বি+’ গ্রেড।
এ দিন দুপুরে ভোলাকে ঘিরে ছিলেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের অন্য আবাসিকেরা। পড়াশোনা করলে, পরীক্ষায় পাশ করলে যে এমন সম্মান পাওয়া যায়, তা এ দিনই প্রথম উপলব্ধি করলেন ৫০ পেরোনো এই মানুষটি। জেলে না থাকলে তাঁর যে
মাধ্যমিক পাশ করা হয়ে উঠত না, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহই নেই ভোলার। তাঁর কথায়, ‘‘পড়াশোনার ক্ষেত্রে জেল যে ভাবে আমার পাশে থেকেছে, বাইরে থাকলে বোধহয় এই বয়সে আমি এমন ভাবে পড়াশোনাটা করতেই পারতাম না।’’
এক বার যখন শুরু করেছেন, তখন আর থামতে চান না প্রৌঢ়। ১০ বছর কারাদণ্ডের প্রায় সাড়ে সাত বছর কেটে গিয়েছে। ‘ভাল আচরণ’-এর জন্য হয়তো মেয়াদ ফুরোনোর আগেই ছাড়া পেয়ে যাবেন তিনি। তার আগে যতটা বেশি সম্ভব পড়াশোনা করে নিতে চান।
জেল থেকে বেরিয়ে কী করবেন তিনি?
ভোলা বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পাশ তো করলাম। পড়াশোনা আরও কিছুটা এগিয়ে নিতে চাই। জেলে অনেক হাতের কাজ শিখেছি।
তার মধ্যে কোনও একটিকেই বেছে নিতে হবে।’’ মাধ্যমিক পাশের পরে জেল কর্তৃপক্ষের প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি তিনি।
শুধু ভোলাই নন, এ বার জেল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৯ জন বন্দি। পরীক্ষায় বসেছিলেন ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন বিচারাধীন এবং ২০ জন সাজাপ্রাপ্ত। রাজ্য কারা দফতরের ডিজি অরুণকুমার গুপ্ত জানান, সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন এক মহিলা বন্দি। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মধুমিতা শর্মা নামে ওই বন্দির প্রাপ্ত নম্বর ৪১৩।
রাজ্য কারা দফতর সূত্রের খবর, এ বার জলপাইগুড়ি, আলিপুর সেন্ট্রাল এবং আলিপুর মহিলা জেল থেকেই মূলত বন্দিরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল জেল থেকে পরীক্ষা দেন ২৬ জন। আলিপুর জেল এবং আলিপুর মহিলা জেল থেকে যথাক্রমে ৩ জন ও ১ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অরুণবাবু জানান, মাধ্যমিকে এ বছর যে ২৯ জন বন্দি পাশ করেছেন, তার মধ্যে ১২ জন পেয়েছেন ‘বি+’ গ্রেড। ‘বি’ গ্রেড পেয়েছেন ১১ জন। ‘সি’ পেয়েছেন ৬ জন।
আলিপুর জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ভোলা ছাড়াও ওই জেল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন শেখ খইরুল এবং হাসান সর্দার নামের দুই সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। ২৮ বছরের খইরুল পেয়েছেন ৩৮৭ এবং ২৪ বছরের হাসান পেয়েছেন ৩৬৫। জলপাইগুড়ি জেলের ২৬ জন বন্দির মধ্যে ২৫ জনই পাশ করেছেন। সবচেয়ে বেশি নম্বর (৩৯৯) পেয়েছেন বছর তিরিশের জাহির আলম। জলপাইগুড়ি থেকে মহিলা বন্দি সঙ্গীতা প্রসাদও এ বার বি গ্রেড-সহ মাধ্যমিক পাশ করেছেন।