Advertisement
E-Paper

অর্থের অভাবে ধুঁকছে লোকশিল্প

পুরুলিয়ার একদল ছৌ শিল্পী মঞ্চে তখন পা আর হাতের সঞ্চালনায় ফুটিয়ে তুলছেন মহাকাব্য বা পুরাণের গল্প। নাচের তালে সঙ্গত দিচ্ছে ঝুমুরের সুর। আর তা দেখে আসানসোলের রবীন্দ্রভবন প্রেক্ষাগৃহে তখন দর্শকদের হাততালির ঝড়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। লোকশিল্পীদের আক্ষেপ, সরকারি অনুদান আর বিপণন কৌশলের অভাবে দর্শকদের হাততালি মিললেও বরাত মেলে না তেমন। বিকোয় না লোকশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রীও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০১:৫১
চলছে ঘোড়ানাচ। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে ঘোড়ানাচ। —নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়ার একদল ছৌ শিল্পী মঞ্চে তখন পা আর হাতের সঞ্চালনায় ফুটিয়ে তুলছেন মহাকাব্য বা পুরাণের গল্প। নাচের তালে সঙ্গত দিচ্ছে ঝুমুরের সুর। আর তা দেখে আসানসোলের রবীন্দ্রভবন প্রেক্ষাগৃহে তখন দর্শকদের হাততালির ঝড়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। লোকশিল্পীদের আক্ষেপ, সরকারি অনুদান আর বিপণন কৌশলের অভাবে দর্শকদের হাততালি মিললেও বরাত মেলে না তেমন। বিকোয় না লোকশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রীও।
রাজ্য সরকারের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার থেকে আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে বসেছে লোকশিল্পের আসর। রয়েছে লোকশিল্পের প্রদর্শনীও। তবে রবিবার উৎসব প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ শিল্প ও শিল্পীই আর্থের অভাবে ধুঁকছেন। পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পী অজিত মাহাতো যেমন বলেন, ‘‘এই পেশায় তেমন আয় হয় না। শুধুমাত্র সরকারি অনুষ্ঠানের উপর ভরসা করে সারা বছর চলতে হয়।’’ ছৌ নাচ সাধারণত ছোট জায়গায় হয় না। তাই বেসরকারি কোনও অনুষ্ঠানেও তেমন একটা ডাক পড়ে না ছৌ শিল্পীদের। এক সময় গোটা বাংলা জুড়েই মাঠে-ঘাটে প্রায়ই দেখা যেত ঘোড়া নাচ। তবে এখন তা বিলুপ্তপ্রায়। তবে আসানসোলের বাসিন্দারা সেই নাচও দেখতে পেলেন বর্ধমানের নাদন রায়ের কল্যাণে। নাদনবাবু বলেন, ‘‘শুধুমাত্র দর্শকদের হাততালির টানেই এখনও এই শিল্পটাকে আঁকড়ে ধরে আছি।’’ যাথাযথ সংগ্রহ না হওয়ায় ভাওয়াইয়া, ভাদু, টুসু-সহ বিভিন্ন লোকসঙ্গীতগুলিও কালের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ শিল্পীদের।

উৎসব উপলক্ষে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে। বর্ধমানের দরিয়াপুর থেকে এসেছেন ডোকরা শিল্পী সন্দীপ কর্মকার, গৌরাঙ্গ কর্মকার। মূলত সঙ্কর ধাতু ঢালাই করে ডোকরার কাজ করা হয়। ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলের মতো কাব্যেও ডোকরা শিল্পীদের দেখা মেলে। এই শিল্পটি নিয়ে গবেষণা করেছেন বিনয় ঘোষ, আশুতোষ ভট্টাচার্য, বরুণ চক্রবর্তীর মতো গবেষকেরা। কিন্তু সঠিক প্রচার না হওয়ায় ডোকরা শিল্পের ঐতিহ্যও আজ ম্লান। সন্দীপবাবুরা বলেন, ‘‘বিদেশে মোটামুঠি বাজার থাকলেও দেশে তেমন বিক্রি হয় না আমাদের কাজ।’’ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আউশগ্রামের গোপীনাথমাঠ গ্রামের প্রায় ৩৫টি পরিবার এক সময় ডোকরার কাজ করত। কিন্তু এখন তা’র সংখ্যা অর্ধেকেরও নীচে। একই অবস্থা শোলা শিল্প বা নকশি কাঁথারও। বনকাপাশির সোলা শিল্পী হরগোপাল সাহা জানান, বাজারে চাহিদা থাকলেও পুঁজি নেই। ভাল শোলা আনতে গেলে বাংলাদেশের যশোহর থেকে আনতে হয়। কিন্তু তার জন্য কোনও ব্যাঙ্ক ঋণ বা সরকারি সাহায্যও মেলে না বলেই দাবি হরগোপালবাবুর। বাংলার এক সময়ের গর্ব ছিল নকশি কাঁথার কাজ। পাঁচশ বছরেরও আগে লেখা ‘চৈতন্যচরিতামৃত’তেও নকশি কাঁথার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে ‘রূপাই-সাজু’র ভালবাসার নকশি কাঁথাও কিন্তু এখন সঙ্কটের মুখে। অন্তত তেমনটাই জানালেন বর্ধমানের ভেদিয়া থেকে আসা নকশি কাঁথার শিল্পী নুরজাহান। বছর চারেক আগে রাজ্য সরকারের পুরস্কার পেলেও এখন পুঁজির অভাবে শিল্প ও ব্যবসা—দুই’ই প্রায় লাটে উঠতে বসেছে।

ঘরে ফেরার পথে তাই অনেকেরই আশঙ্কা অবিলম্বে সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংগঠন এই শিল্পগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়েো না এলে অচিরেই হারিয়ে যাবে গ্রাম-বাংলার আদি সম্পদগুলি।

folk artist huge financial crisis chhau artist jhumur music jhumur dancs gambhira dance financial crisis folk artist struggle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy