Advertisement
E-Paper

কমিশনার হয়ে ফিরলেন প্রাক্তন ডিএসপি

রাজ্যের প্রথম মহিলা পুলিশ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন চিলিং সেমিক লেপচা। সোমবার বিকেলে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে আইপিএসদের বদলির নতুন নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তাতে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার হিসাবে মনোজ বর্মার পরিবর্তে চিলিং সেমিক লেপচাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০২:২৭
তখনও কমিশনার হননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি প্রশাসনিক অনুষ্ঠানে চিলিং সেমিক লেপচা।  —ফাইল চিত্র।

তখনও কমিশনার হননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি প্রশাসনিক অনুষ্ঠানে চিলিং সেমিক লেপচা। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের প্রথম মহিলা পুলিশ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন চিলিং সেমিক লেপচা। সোমবার বিকেলে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে আইপিএসদের বদলির নতুন নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তাতে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার হিসাবে মনোজ বর্মার পরিবর্তে চিলিং সেমিক লেপচাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ১৯৯৯ ব্যাচের অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন শিলিগুড়ির ডিএসপি (টাউন) হিসাবেই। তার পরে নানা পদোন্নতি, বদলির পর বর্তমানে তিনি মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি পদে আছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি নতুন দায়িত্ব বুঝে নেবেন। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের উত্তরবঙ্গের স্পেশাল সুপারের দায়িত্ব সামলানো ছাড়াও অন্য পদে থেকেও স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের উত্তরবঙ্গের দায়িত্ব সফল ভাবে সামলেছেন।

পাহাড়ে আন্দোলন বা কেএলও-র আন্দোলন—প্রতি ক্ষেত্রেই তাঁর কাজের ছাপ রাইটার্স বিল্ডিং থেকে নবান্নে পৌঁছেছে। তাই নতুন সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে কাজের সুবাদে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অফিসার হয়ে উঠেছেন বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। নতুন দায়িত্ব পেয়ে খুশি চেলিং সিমিক লেপচাও।

এ দিন রাতে টেলিফোন তিনি বলেন, ‘‘এখনও নির্দেশের কপি হাতে পাইনি। দ্রুত পেয়ে যাব আশা করছি। আর শিলিগুড়ি তো আমার পুরানো জায়গা। নতুন ভাবে অনেক কাজ করতে হবে। সবার সহযোগিতায় নিশ্চয়ই শিলিগুড়ি পুলিশ বরাবরের মতো ভাল কাজ করবে।’’

বাম আমলে ২০০০ সাল নাগাদ শিলিগুড়িতে চাঁদমণি চা বাগান উচ্ছেদের ঘটনা একটি ইতিহাস। তিন ধনুকের সজ্জিত শ্রমিকদের একাংশের মোকাবিলা করতে গিয়ে পুলিশকে গুলি পর্যন্ত চালাতে হয়েছিল। সেই দিন সকাল থেকে পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন নতুন পুলিশ কমিশনার। বাহিনীর কর্মী, অফিসারদের কাছে ‘সিএস ম্যাডাম’ নামে পরিচিত অফিসারকে সে দিন আক্রান্ত হতে হয়েছিল। তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তিনি ইটের ঘায়ে মুখে, মাথায় জখম হয়ে দীর্ঘ দিন নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু এলাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে বাগানের কব্জা মোটামুটি নিয়ে নিয়েছিল পুলিশ। তার পরেই শুরু হয়, পাহাড় আন্দোলন। তাঁকে দার্জিলিঙে জেলা গোয়েন্দা দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার করে পাঠানো হয়। তাও তিনি দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। তাতে বাম আমলেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার তাঁকে রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের উত্তরবঙ্গের স্পেশাল সুপার হিসাবে নিয়োগ করে।

পুলিশের একটি অংশ জানিয়েছেন, পাহাড়ে লেপচা থেকে ভুটিয়া নানা আলাদা বোর্ড তৈরিতে সরকারকে তিনি বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছিলেন। এতেই ধীরে ধীরে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনজরে চলে আসেন। তিনি মালদহে বদলি হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত চোরাচালান, নারী পাচার সংক্রান্ত বিষয় কড়া হাতে মোকাবিলার চেষ্টা করে গিয়েছেন। এর মধ্যে কারলিয়াপ্পন জয়রামনের পরিবর্তে জাভেদ শামিম, জগমোহন হয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার হন মনোজ বর্মা। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, গত দেড় বছর মনোজ বর্মা শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন একাধিক নির্বাচন হয়। তবে কোনও নির্বাচনেই শাসক দলের আশানুরূপ ফল হয়নি। প্রথমে লোকসভা ভোটে শিলিগুড়িতে লিড পায় বিজেপি। পরবর্তীতে পুরসভা ও মহকুমা পরিষদ নিবার্চনে পরপর বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে। শেষ, বিধানসভা নির্বাচনেও সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টচার্যের কাছে তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া হেরেছেন।

প্রকাশ্যে শাসক দলের নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে তেমন ভাবে বিষাদগার না করলেও পুলিশ কমিশনারের ভূমিকায় খুব একটা খুশি ছিলেন না তৃণমূল নেতারা। বিশেষ করে, পুরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটের সময় কমিশনের নির্দেশেই পুরোপুরি চলেছেন কমিশনার। তাই ভোটের পর তাঁর বদলি শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা ছিল বলেই পুলিশ সূত্রের খবর। আর মনোজ বর্মার মেয়াদ দেড় বছরের মাথায় শেষ করার ক্ষেত্রে নবান্নকে মহিলা পুলিশ কমিশনার হিসাবে চেলিং সিমিক লেপচার পরিবর্তে অন্য কোনও নাম ভাবতে হয়নি। যদিও রাতে বদলি প্রসঙ্গে মনোজ বর্মা বিশেষ কিছু মন্তব্য করতে চাননি। বিষয়টি ‘রুটিন বদলি’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।

chiling semik lepcha commissioner mamata bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy