Advertisement
E-Paper

মেধা-তালিকায় হুগলির চার জন

উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে চার-চারটি জায়গা দখল করে নিল হুগলি। রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম দু’টি স্থানেও রয়েছে এই জেলা। ৪৮৫ নম্বর পেয়ে মেধা-তালিকার ছয় নম্বর স্থানের অধিকারী উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠের অনীশকুমার বসু। তার এই ফলে বাবা-মা থেকে স্কুলের শিক্ষক— সবাই উচ্ছ্বসিত। ফল প্রকাশের পর থেকে অভিনন্দনের বন্যায় ভেসেছে অনীশ। উত্তরপাড়া স্টেশনের কাছেই ভুপেন্দ্রনাথ রোডে অনীশদের বাড়ি। বাবা অমিতবাবু একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানার থেকে কয়েক বছর আগে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। মা নিবেদিতাদেবী গৃহবধূ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০২:০৯

উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে চার-চারটি জায়গা দখল করে নিল হুগলি। রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম দু’টি স্থানেও রয়েছে এই জেলা।

৪৮৫ নম্বর পেয়ে মেধা-তালিকার ছয় নম্বর স্থানের অধিকারী উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠের অনীশকুমার বসু। তার এই ফলে বাবা-মা থেকে স্কুলের শিক্ষক— সবাই উচ্ছ্বসিত। ফল প্রকাশের পর থেকে অভিনন্দনের বন্যায় ভেসেছে অনীশ। উত্তরপাড়া স্টেশনের কাছেই ভুপেন্দ্রনাথ রোডে অনীশদের বাড়ি। বাবা অমিতবাবু একটি অ্যালুমিনিয়াম কারখানার থেকে কয়েক বছর আগে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। মা নিবেদিতাদেবী গৃহবধূ।

অনীশ জানায়, তার সাত জন গৃহশিক্ষক ছিল। পরীক্ষার আগে ১২-১৪ ঘণ্টা করে পড়েছে। ‘ফেলুদা’, ‘কাকাবাবু’ বা রোমহর্ষক ইংরেজি গল্প ভীষণ প্রিয় শান্ত স্বভাবের ছেলেটির। এ বার সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়। তাই জয়েন্টের ফলের দিকে তাকিয়ে আছে। এ দিন অনীশের ফলে স্কুলে সকাল থেকেই ছিল উৎসবের মেজাজ। প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ পাল বলেন, ‘‘কয়েক দশক পরে স্কুলের কোনও পড়ুয়া মেধা-তালিকায় জায়গা পেল। আমরা সবাই অত্যন্ত খুশি। অনীশের ফল আগামী দিনে পড়ুয়াদের উৎসাহিত করবে।’’

৪৮৩ নম্বর পেয়ে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছে আরামবাগ গার্লস স্কুলের রিখিয়া ভুক্ত। সার্বিক ফলের বিচারে সে অষ্টম স্থানে রয়েছে। এমন ফল করেও অবশ্য পুরোমাত্রায় খুশি নয় মেয়েটি। অঙ্কে সে পেয়েছে ৯৫। কী করে ৫ নম্বর কাটা গেল, তা নিয়েই সে ভেবে আকুল। স্কুলের প্রধান শিক্ষকা মায়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পঞ্চম শ্রেণি থেকেই পড়াশোনায় রিখিয়া নজর কেড়েছিল। পড়াশোনার প্রতি তীব্র খিদেই ওকে এত দূরে পৌঁছে দিয়েছে।’’

পুরোদস্তুর পড়াশোনার পরিবেশে বড় হয়েছে রিখিয়া। দাদু বাসুদেববাবু, ঠাকুমা নমিতাদেবী, বাবা অনিন্দ্যবাবু, বড় পিসি নন্দিতাদেবী, ছোট পিসি সোমাদেবী সকলেই শিক্ষক। মা লাবণীদেবী গৃহবধূ হলেও অর্থনীতির কৃতী ছাত্রী। নমিতাদেবী বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম, রিখিয়া প্রথম দশে থাকবে। ও সেই আশা পূর্ণ করেছে।’’

মাধ্যমিক পর্যন্ত রিখিয়া কোনও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়েনি। পড়াশোনার জন্য বাবা-পিসি-ঠাকুমা-দাদুর সঙ্গে পরামর্শ করেছে। উচ্চ মাধ্যমিকে অবশ্য বিভিন্ন বিষয়ে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের আগে নিয়মিত রাত দেড়টা পর্যন্ত পড়েছে। পড়াশোনার বাইরে সে ছবি আঁকতে, গান শুনতে এবং গান করতে ভালবাসে। ব্যাডমিন্টন এবং ক্যারাম খেলাও তার প্রিয়। রিখিয়া জানায়, বাবার মতোই অর্থনীতি নিয়ে পড়তে চায় সে।

রিখিয়ার থেকে ১ নম্বর কম পেয়ে মেধা-তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে সিঙ্গুর মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ত্রিদীব প্রতিহার। তার বাড়ি কামারকুণ্ডুতে। পরীক্ষার আগে ১০-১২ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করেছে সে। ত্রিদীবের কথায়, ‘‘স্কুলের শিক্ষক এবং গৃহশিক্ষকদের সাহায্য আমাকে এই ফল এনে দিয়েছে।’’ তার বাবা রবীন্দ্রবাবু একটি বেকারি সংস্থায় ম্যানেজার পদে চাকরি করেন। মা তাপসীদেবী গৃহবধূ। ত্রিদীব চিকিৎসক হয়ে গ্রামাঞ্চলে মানুষের সেবা করতে চায়। টিভিতে ক্রিকেট এবং ফুটবল খেলা দেখতে সে ভালবাসে।

চুঁচুড়া বালিকা বাণী মন্দিরের কলা বিভাগের ছাত্রী সুভদ্রা চক্রবর্তী রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। সামগ্রিক ভাবে মেধা-তালিকায় সে রয়েছে দশম স্থানে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৮১। সুভদ্রার কথায়, ‘‘ফল ভাল হবে জানতাম। কিন্তু তা বলে এতটা ভাল হবে, ভাবতে পারিনি।’’ উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি হিসেবে দিনে আট থেকে দশ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে ওই কিশোরী। বাবা কালীদাস চক্রবর্তী ডাক বিভাগের কর্মী। মহুয়াদেবী গৃহবধূ। নিজের কৃতিত্ব শিক্ষক এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চায় সে। সুভদ্রাদের বাড়ি চুঁচুড়ার কনকশালিতে। অবসরে টিভি দেখে সুভদ্রা। তবে সিনেমা বা সিরিয়াল নয়, খবরের চ্যানেল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতেই সে পছন্দ করে। মাঝেমধ্যে গানের অনুষ্ঠান দেখে। সুভদ্রা জানায়, এ বার সে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়বে। ভবিষ্যতে কলেজ-শিক্ষক হতে চায় সে। ইংরেজিতে সে পেয়েছে ৯৭।

কালীদাসবাবু বলেন, ‘‘আর্টস পড়ে মেয়ে যে এত নম্বর পাবে, কল্পনাও করতে পারিনি। আমরা ভীষণ খুশি।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জ্যোতি বিশ্বাস বলেন, ‘‘সুভদ্রা পড়াশোনায় কেমন, তা ওর রেজাল্টই বলে দিচ্ছে। আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে।’’

hooghly higher secondary merit list student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy