Advertisement
E-Paper

১৪ দিনের জেল হেফাজত, প্রভাবশালী তত্ত্বেই জামিন নয় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে

মদন মিত্রের পরে এ বার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতার হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে কি তাঁকেই বিপদে ফেলে দিল দল! ‘প্রভাবশালী’ তকমা লেগে গেল তৃণমূলের এই সাংসদের গায়েও?কারণ এ দিন সেই তত্ত্বেই মদনের মতো সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ঘায়েল করতে তৎপর হল সিবিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৯

মদন মিত্রের পরে এ বার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতার হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে কি তাঁকেই বিপদে ফেলে দিল দল! ‘প্রভাবশালী’ তকমা লেগে গেল তৃণমূলের এই সাংসদের গায়েও?

কারণ এ দিন সেই তত্ত্বেই মদনের মতো সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ঘায়েল করতে তৎপর হল সিবিআই।

২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বরে রাজ্যের তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার পরেই পথে নেমেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তখনই সিবিআই মদনের জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রভাবশালী তত্ত্ব সামনে এনেছিল সিবিআই। তার পর থেকে টানা প্রায় দু’বছর মদনের আইনজীবীরা বহু বার জামিনের আবেদন করলেও প্রতিবারেই ওই প্রভাবশালী তত্ত্বে তা আটকে গিয়েছিল। দিল্লি থেকে তাবড় আইনজীবী উড়িয়ে এনেও জামিন পাননি মদন। শেষে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর জামিন পান তিনি।

বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বর আদালতে সুদীপের ক্ষেত্রেও সেই অস্ত্রই কাজে লাগাল সিবিআই। আর তাতেই নাকচ হয়ে গেল সুদীপের জামিনের আবেদন। সিবিআইয়ের এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘এই অস্ত্র তো আমাদের হাতে সুদীপবাবুর দলই তুলে দিয়েছে!’’

সিবিআই আইনজীবীদের দাবি, ৩ জানুয়ারি সুদীপ গ্রেফতার হওয়ার পরে কলকাতার রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাতে নেমে পড়েন তাঁর দলেরই নেতা-কর্মীরা। বিজেপি অফিস ভাঙচুর হয়। বিক্ষোভ ছড়ায় অন্যত্রও। দিল্লিতে সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। সুদীপকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানে সিবিআই অফিসের সামনেও বিক্ষোভ হয়।

এই সংক্রান্ত সমস্ত ছবি ও সংবাদপত্রের কাটিং নথি আদালতে পেশ করে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা বিচারককে বলেন, সুদীপ কত প্রভাবশালী, সেটা বোঝানোর জন্য আর কোনও তথ্যপ্রমাণের প্রয়োজন আছে বলে তাঁরা মনে করছেন না।

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ সব কথা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বলা হচ্ছে। এ সব অর্থহীন কথা।’’ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

‘প্রভাবশালী’ সুদীপকে ভুবনেশ্বরে বিশেষ আদালতের বিচারক প্রশান্ত মিশ্রের এজলাসে হাজির করলেও নিজেদের হেফাজতে রাখার জন্য আর আবেদন করেনি সিবিআই। তাঁকে জেলে পাঠানোর আবেদন করে তারা। সুদীপের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলেও বিচারক তা খারিজ করে সাংসদকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় সুদীপকে নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়পদা জেলে। কিন্তু শরীরে অস্বস্তি হওয়ায় অল্পক্ষণের মধ্যেই তাঁকে জেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালেই আছেন তাপস পালও।

এ দিন সুদীপের বিরুদ্ধে তথ্য জাল করার অভিযোগও এনেছে সিবিআই। সিবিআইয়ের আইনজীবীরা বলেন, ‘‘সুদীপকে প্রথম দিন ডেকে জেরা করার সময়ে তিনি বেশ কিছু নথিপত্র দিয়েছিলেন। প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, তিনি রোজ ভ্যালির থেকে টাকা নেননি। পরে যাচাই করে দেখা গিয়েছে, বিদেশ সফর ও গাড়ি কেনার বিষয়ে তিনি যা নথিপত্র দাখিল করেছেন, তা জাল।’’ সুদীপের আইনজীবীর অভিযোগ, কোনটা আসল, কোনটা নকল বলে ওরা দাবি করছে, তা স্পষ্ট বলেনি সিবিআই। ফলে অনেক প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

এ দিন আদালতে সিবিআই অভিযোগ করে, গৌতমের ছেলেকে নামী স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য সুদীপ সুপারিশ করেছিলেন। সিবিআই সূত্রের খবর, এই সময়ে সুদীপ এক টুকরো কাগজ হাতে নিয়ে বিচারককে বলেন, ‘‘হুজুর, আমি কিছু বলতে চাই।’’ অনুমতি পেয়ে সুদীপ বলেন, ‘‘গৌতম ব্যবসায়ী জানতাম, কিন্তু কী ব্যবসা করেন, তা জানতাম না। আমি জনপ্রতিনিধি। আমার এলাকার ভোটাররা আমাকে চেনেন। আমি নানা লোকের জন্য হাসপাতাল-স্কুল-কলেজে সুপারিশ করেছি। সব সুপারিশের বিষয় আমার মনে নেই।’’

রোজ ভ্যালির বিভিন্ন কর্মীসভায় তাঁর উপস্থিতি নিয়ে সুদীপ বলেন, ‘‘রোজ ভ্যালির দু’টি কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু রোজ ভ্যালিতে টাকা রাখুন, এ কথা কোথাও বলিনি। আমি জনপ্রতিনিধি। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অভ্যস্ত।’’

সিবিআই আদালতে অভিযোগ করে, রোজ ভ্যালিতে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে নিজের ঘনিষ্ঠ এক যুবককে গৌতমের আপ্ত সহায়ক হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন সুদীপ। সেই যুবক এখনও রোজ ভ্যালিতে কর্মরত। সিবিআইয়ের দাবি, এ দিন আদালতে প্রসঙ্গটি উঠতে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যান সাংসদ। ওই বিষয়ে শুনানি চলাকালীন বেশ কয়েক বার জল চেয়ে খান। মুখ নিচু করে হাতের নখও কাটতে দেখা যায় তাঁকে।

এ দিন আদালতে ঢোকার সময়ে সুদীপ বলেন, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলাম। সেই কারণে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি নিজেকে শক্ত রেখেছি। আমি লড়াই করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ।’’

আবেদনে সিবিআই

রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যেতে চায় বলে বৃহস্পতিবারে ভুবনেশ্বরের আদালতে আবেদন করেছে সিবিআই। গৌতম এখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন। ভুবনেশ্বর জেলে রেখে সিবিআই তাঁকে জেরা করতে চায়। সারদা মামলার দুই প্রধান অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কেও ১৭ জানুয়ারি গুয়াহাটিতে নিয়ে যেতে চায় বলে কারা দফতরকে জানিয়েছে সিবিআই। ও দিনই সুদীপ্ত ও দেবযানীর ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা। কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘দেবযানী ও সুদীপ্ত দু’জনেই বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। আদালতের অনুমতি পেলে ওঁদের গুয়াহাটি পাঠানো হবে।’’ এ দিনই আশি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে কলকাতা পুলিশ একটি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তা অশোক বসুকে গ্রেফতার করেছে।

Sudip Bandyopadhyay Jail Custody
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy