Advertisement
E-Paper

'সিগারেটের মতো জলে ফেলেছি ওকে'

গভীর জল দেখতে গঙ্গার দিকে ঝুঁকেছিল জগদ্দলের পূর্বাশার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অভিষেক চৌবে (প্রিন্স)। পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা খেয়ে সেই গভীর জলেই তলিয়ে গিয়েছিল ছেলেটি।   

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২০
অভিষেক চৌবে। ছবি: ফেসবুক

অভিষেক চৌবে। ছবি: ফেসবুক

হুগলি ঘাটের জুবিলি সেতুর ঠিক মাঝখানে এসে বছর সতেরোর ছেলেটিকে তার ‘বন্ধু’ বলেছিল, ‘‘দ্যাখ, কত জল!’’

গভীর জল দেখতে গঙ্গার দিকে ঝুঁকেছিল জগদ্দলের পূর্বাশার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অভিষেক চৌবে (প্রিন্স)। পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা খেয়ে সেই গভীর জলেই তলিয়ে গিয়েছিল ছেলেটি।

শনিবার বিকেলে জগদ্দল থানায় বসে শীতল মুখে সে দিনের কথা বলে যাচ্ছিল অভিষেকের বছর বাইশের ‘বন্ধু’ মহম্মদ জাহিদ হোসেন, ‘‘সিগারেট খেয়ে লোকে যে ভাবে ফেলে দেয়, আমরা সে ভাবেই ওকে নদীতে ঠেলে ফেলি।’’ টেবিলের উল্টো দিকে থানার পোড়খাওয়া অফিসার তা শুনে থ! সাত দিনে অন্তত তিন বার পুলিশের মুখোমুখি হয়েছে সে। কিন্তু তাকে দেখে কখনও পুলিশের মনে হয়নি বেড়াতে যাওয়ার নাম করে বন্ধুকে ডেকে গঙ্গায় ফেলে দিয়েছে সে!

অভিষেক নিখোঁজ রহস্যের তদন্তে নেমে শনিবার বিকেলে গ্রেফতার করা হয় জগদ্দলের গোলঘরের বাসিন্দা জাহিদকে। তাকে জেরা করে ওই এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হয় জাহিদের বন্ধু মহম্মদ সরফরাজ এবং মহম্মদ ওয়াকিল নামে তাদের এক সঙ্গীকে।

পুলিশ তখনও জানত না, ২০ জানুয়ারি পড়তে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বছর সতেরোর অভিষেক মারা গিয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় ব্যারাকপুরের বিএন বসু হাসপাতালের মর্গে গিয়ে অভিষেকের দেহ শনাক্ত করেন তার বাড়ির লোকেরা। গত ৩০ জানুয়ারি দেহটি মিলেছিল খড়দহে গঙ্গার ঘাটে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘খুনের চেষ্টার অভিযোগে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ বার ওদের বিরুদ্ধে খুনের মামলাও রুজু হবে।’’

কিন্তু কেন খুন হল অভিষেক?

তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় জাহিদ জানিয়েছে, দামি মোটরবাইক নিয়ে ঘুরত অভিষেক। সব সময় দামি জামা-জুতো-ঘড়ি পরত। বলত, দিল্লি থেকে জামাইবাবু সেগুলি তাকে পাঠাতেন। বাড়িতেও তার প্রচুর টাকা। এ সব শুনেই অভিষেককে অপহরণের ছক কষে জাহিদ এবং সরফরাজ। ২০ জানুয়ারি তাকে নিয়ে হুগলি ঘাটে যায় তারা। সেখানে মদ খায়। তার পরে বেড়ানোর নাম করে পৌঁছয় জুবিলি সেতুর মাঝখানে। অভিষেককে গঙ্গায় ঠেলে ফেলার পরে মুক্তিপণ আদায়ের ফোন করার জন্য ওয়াকিলকে দলে নেয়। তবে শেষমেশ মুক্তিপণ তারা পায়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি ছেলে না-ফেরায় অভিষেকের মা রেণু চৌবে পরের দিন জগদ্দল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরের দিন বিকেলে ছেলের মোবাইল থেকে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ‘মেসেজ’ পান রেণুদেবী।

তাতে বলা হয়, ‘অভিষেককে অপহরণ করা হয়েছে’। সে দিন রাতে ফের ফোন আসে প্রিন্সের মোবাইল থেকে। মুক্তিপণের ১০ লক্ষ টাকা আগরপাড়ার একটি জায়গায় রেখে আসতে বলা হয়। পরে ফের ফোনে ঠিকানা বদলে টাকা রেখে আসতে বলা হয় জগদ্দলের একটি জায়গায়। রেণুদেবী পুরো ঘটনা থানায় জানান। তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

কিন্তু কী ভাবে খোঁজ মিলল জাহিদদের? পুলিশের এক কর্তা জানান, অভিষেকের মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ ছিল জগদ্দলই। অভিষেকের সব বন্ধু ও পরিচিতদের দফায় দফায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সময় প্রত্যেকের মোবাইল নম্বর নিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই সময় জাহিদ এবং সরফরাজ একাধিকবার পুলিশের সঙ্গে দেখা করেছিল। কিন্তু তাদের দেখে কখনওই মনে হয়নি তারা এই ঘটনায় জড়িত। কিন্তু ‘টাওয়ার লোকেশন’ থেকে দেখা যায়, ২০ জানুয়ারির পরেও অভিষেক এবং জাহিদের মোবাইল মাঝেমধ্যেই একই জায়গায় থাকছে। জাহিদের পরিকল্পনায় এটাই ছিল ফাঁক।

জেরার সময় এক তদন্তকারী জাহিদের কাছে জানতে চান, অভিষেক কী কোনও ভাবে বেঁচে যেতে পারে? জাহিদের নির্লিপ্ত উত্তর ছিল, ‘‘নেশা করেছিল সাব। বাঁচা মুশকিল।’’ সেটাই সত্যি হল। কিন্তু অভিষেককে বাঁচিয়ে রেখে কি মুক্তিপণের দাবি করা যেত না? জাহিদের উত্তর, ‘‘ওকে লুকিয়ে রাখার মতো কোনও জায়গা ছিল না। তাই মেরেই ফেলতে হল।’’ পুত্রহারা রেণুদেবীর এখন একটাই প্রশ্ন, ‘‘জাহিদদের তো ছেলের বন্ধু হিসেবে জানতাম। ওরা এটা কী করল?’’

Hoogly Crime Drowning Death Murder অভিষেক চৌবে
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy