Advertisement
E-Paper

টাটা আসুক সিঙ্গুরে, জিতেই ঘোষণা লকেটের

অপেক্ষার প্রহর যখন শেষ হল, বৃহস্পতিবার ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে ৪টে। দুধসাদা গাড়িটা মুহূর্তে আবিরের রঙে গেরুয়া। হুগলি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় গাড়ি থেকে নামতেই পাগলের মতো ঘিরে ধরল ভিড়।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৪:০১
জয়ের পরে। ছবি: তাপস ঘোষ

জয়ের পরে। ছবি: তাপস ঘোষ

সকাল থেকেই একটু একটু করে ব্যবধানটা বাড়ছিল। কারবালা মোড়ের কাছে জোড়াফুল শিবিরের ভিড়টা দুপুরেই বিলকুল ফাঁকা। তার কিছুটা দূরে, হুগ‌লি মোড়ের তিন নম্বর গেটের কাছে গেরুয়া শিবিরের দলীয় কার্যালয় ঘিরে ক্রমেই বাড়ছিল উচ্ছ্বাস।

কিন্তু তিনি কোথায়?

অপেক্ষার প্রহর যখন শেষ হল, বৃহস্পতিবার ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে ৪টে। দুধসাদা গাড়িটা মুহূর্তে আবিরের রঙে গেরুয়া। হুগলি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় গাড়ি থেকে নামতেই পাগলের মতো ঘিরে ধরল ভিড়। সরকারি ভাবে তখনও ঘোষণা না-হলেও সকলের জানা হয়ে গিয়েছে, টানা দু’বারের তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগকে হারিয়ে হুগলির নয়া সাংসদ হয়েছেন লকেট। গোলাপি শাড়ি-ব্লাউজ় আর ম্যাচিং জুতো পরা লকেটের সঙ্গে তাই নিজস্বী তোলার ধুম। ঢোল বাজল, বাজি ফাটল। সমর্থকদের সঙ্গে মাতলেন লকেট নিজেও। দলের হুগলি সাংগঠ‌নিক জেলা সভাপতি সুবীর নাগকে জড়িয়ে ধরলেন।

অতঃপর গন্তব্য দলীয় কার্যালয়। সেখানে কথা প্রসঙ্গে উঠল সিঙ্গুরের কথা। এই লোকসভা কেন্দ্রেই রয়েছে আট বছর আগে রাজ্যে পরিবর্তনের ধাত্রীভূমি সিঙ্গুর। লকেট বললেন, ‘‘ওখানে আন্দোলনের নামে মানুষের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুর দিয়ে ওদের উত্থানের শুরু হয়েছিল। পতনেরও সূচনা হল সিঙ্গুর দিয়েই। আমি ওখানে নজর দেব। চাইব, ওখানে শিল্প হোক। টাটা আসুক।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার প্রথম কাজ হবে হুগলিকে সন্ত্রাসমুক্ত করা।’’

আরও পড়ুন: তিন লাখে মিমি-নুসরত, দু’ লাখে বাবুল, বিপুল ব্যবধানে জয়ী রাজ্যের এই তারকারা

তৃণমূ‌ল পরিচালিত রাজ্য সরকারের সাহায্য না-পেলেও মানুষের স্বার্থে প্রয়োজনীয় লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়ে দেন বিজেপি নেত্রী। মিনিট কুড়ি দলীয় কার্যালয়ে কাটিয়ে মিছিল করে এইচআইটি কলেজে (হুগলি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) যান লকেট। সঙ্গে দিদি মালা চট্টোপাধ্যায় এবং দলের কয়েক জন মহিলা কর্মী।

সকাল থেকে অবশ্য লকেট সংবাদমাধ্যমের ফোন ধরেননি। জেতা নিয়ে সংশয় ছিল কি না, তা জানা যায়নি। তবে আত্মীয়েরা জানান, তিনি নরেন্দ্রপুরের বাড়িতে ছিলেন। দুপুরে জয় নিশ্চিত হতে হুগলিতে আসেন। ভোট পর্বে ব্যান্ডেলে লকেট বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। এ দিন জানিয়ে দিলেন, ভোটের বাক্সে তৃণমূলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করেছেন জনগণ। তাই মানুষের কাজের জন্য তিনি নিজের কেন্দ্রে পাকাপাকি ভাবে থাকবেন‌।

তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে অবশ্য স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রত্নাদেবীর হার ‘অপ্রত্যাশিত’। রত্নাদেবী ফোন ধরেননি। দলের নেতাদের একাংশের ভাবমূর্তির জেরে মানুষ যে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন, জেলা তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই তা মানছেন। তবে হারের কারণ হিসেবে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের দাবি, এক দিকে সিপিএম-কংগ্রেসের ভোট বিজেপিতে চলে গিয়েছে। অন্য দিকে, ধর্মীয় বিভাজন নিয়ে বিজেপির অপপ্রচারে এক শ্রেণির মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছেন। তপনবাবুর কথায়, ‘‘এই ফল অপ্রত্যাশিত। এত উন্নয়নের পরেও মানুষ কেন ওদের ভোট দিল, পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।’’ তবে জমি আন্দোলনের সময় সিঙ্গুরে মমতার অন্যতম সেনাপতি, অধুনা হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নার সন্দেহ, ‘‘ইভিএমে কারচুপি হয়েছে।’’

২০০৯ সালে রত্নাদেবী হুগলিতে প্রথম বার সাংসদ হন সিপিএমের পোড়খাওয়া সাংসদ রূপচাঁদ পালকে হারিয়ে। সে-দিনও অনেকের কাছে সেই ফল অপ্রত্যাশিত ঠেকেছিল। দশ বছর বাদে ফের ‘অপ্রত্যাশিত’ ফল।

এ দিন জোড়াফুলের নেতা-কর্মীরা যখন নীরস মুখে বাড়ি ফিরছেন, তখন ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে মুখরিত হুগলির প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষার অঙ্গন।

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 BJP Singur Locket Chatterjee TATA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy