Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
General Election Results 2019

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী দলের তকমাও পাবে না তৃণমূল, দাবি মুকুলের

এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ২০১১ সালে রাজ্যে বাম শাসনের অবসান হওয়ার পর একের পর এক পুরসভা-পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে আসছিল।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ১৯:২৫
Share: Save:

এক জন জানালেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ‘বিরোধী দলের তকমাও জুটবে না তৃণমূলের’। অন্য জনের দাবি, ‘সাত দফা দলবদলের এটাই প্রথম ধাপ’। প্রথম জন মুকুল রায়। দ্বিতীয় কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তৃণমূলের ৩ বিধায়ক এবং ৫০ জনেরও বেশি কাউন্সিলরকে দলে ভিড়িয়ে এমনই হুঙ্কার ছাড়লেন বিজেপির দুই নেতা।

এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ২০১১ সালে রাজ্যে বাম শাসনের অবসান হওয়ার পর একের পর এক পুরসভা-পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে আসছিল। বাম এবং কংগ্রেসের কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্যরা দলে দলে ভিড়ছিলেন শাসক দলে। ক্ষমতার হাত বদল হতে হতে এক সময় কার্যত গোটা রাজ্যেই সমস্ত পুরসভা ও পঞ্চায়েত চলে যায় তৃণমূলের হাতে। বাকি ছিল শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি পুরনিগম। এ বার লোকসভা ভোটে তৃণমূলের বিপর্যয় এবং বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থানের পর কি সেই পরিস্থিতিই ফিরে আসছে? মঙ্গলবার তিন বিধায়ক এবং ৫০ জনেরও বেশি কাউন্সিলরের তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রাজ্য রাজনীতিতে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

ব্যারাকপুর লোকসভা এবং ভাটপাড়া বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের হারের পর বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় তাঁর বাবা তথা বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। তার পরই ৬ বছরের জন্য দল থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল তৃণমূল। তখনই বোঝা গিয়েছিল, শুভ্রাংশুর বিজেপিতে যোগ দেওয়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা। অবশেষে মঙ্গলবার দিল্লিতে শুধু নিজেই যোগ দিলেন না, শুভ্রাংশু সঙ্গে নিয়ে গেলেন আরও অনেক কাউন্সিলর। শুভ্রাংশু ছাড়া অন্য দুই বিধায়কের এক জন বিষ্ণুপুরের এবং অন্য জন হেমতাবাদের। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য কংগ্রেস থেকে জিতেছিলেন। পরে তিনি দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দেন। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদান পর্ব হয়নি। হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ও এ দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

রাজ্যে প্রচারে এসে মোদী বলেছিলেন, ৪০ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে সাত দফায় লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল। আমরাও সেই রকম সাত দফা কর্মসূচি নিয়েছি। এই ৭ দফায় রাজ্যের আরও অনেক তৃণমূল নেতা-নেত্রী বিজেপিতে যোগ দেবেন।’’ মমতার শাসনে যে তৃণমূল নেতারা ‘দমবন্ধ’ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন এবং তাঁরা মুক্তির পথ খুঁজছেন, সেই মন্তব্যও এ দিন করেছেন কৈলাস।

আরও পড়ুন: ৩ বিধায়ক-সহ ৫০ জনেরও বেশি কাউন্সিলরের দলবদল, ৪ পুরসভা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে

আরও পড়ুন: শপথের আগে প্রণবের আশীর্বাদ নিলেন মোদী, মিষ্টি খাইয়ে শুভেচ্ছা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির

বিধায়কদের চেয়েও কার্যত বিজেপির বড় সাফল্য এল পুরসভায়। উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচড়াপাড়া, হালিশহর, নৈহাটি এবং ভাটপাড়া— এই চার পুরসভাতেই ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি। ২৪ আসনের কাঁচড়াপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান-সহ ১৭ জন কাউন্সিলর এ দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। নৈহাটি ও হালিশহর পুরসভার মোট আসন যথাক্রমে ৩১ ও ২৩। দুই পুরসভা থেকেই ১৭ জন করে তৃণমূল কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ভাটপাড়া পুরসভার ১১ তৃণমূল কাউন্সিলর আগেই যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। আজ মঙ্গলবার আরও ৮ জন যোগ দেওয়ায় সংখ্যালঘু হয়ে পড়ল তৃণমূল। এই পুরসভায় মোট আসন ৩৫।

শুধু পুরসভাই নয়, বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আরও শোচনীয় ফল হবে তৃণমূলের। দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়ের দাবি, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী দলের তকমাও ধরে রাখতে পারবে না তৃণমূল।’’ লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃণমূলের পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন ফের কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন মুকুল রায়। বলেন, ‘‘পুরোটাই নাটক। বাংলার মানুষ ওঁকে ক্ষমতা থেকে না সরালে উনি কোনও দিনই মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়বেন না।’’

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE