Advertisement
E-Paper

জিটিএ কর্মীদের বেতন বন্ধের ভাবনা, রেশনের ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি

নবান্ন সূত্রে খবর, প্রথমত, বন্‌ধে জিটিএ দফতরগুলিতে হাজিরা কেমন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নবান্নের এক কর্তা জানাচ্ছেন, বন্‌ধ শুরুর পর থেকে জিটিএ অফিসগুলি খোলা যায়নি। তাদের অধীনে যে ১৮ হাজার কর্মী কাজ করেন, তাঁরাও কেউ আসেননি। জিটিএ কর্মীদের বেতন দিতে মাসে ৩৮ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০৫:৪৮
পাহাড়ে মোর্চার প্রতিবাদ। ছবি এএফপি।

পাহাড়ে মোর্চার প্রতিবাদ। ছবি এএফপি।

হিংসা ছেড়ে আলোচনায় আসুন, প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। শিলিগুড়িতে সর্বদল বৈঠক ডেকে হাজির ছিলেন মন্ত্রী, আমলারা। কিন্তু সেই ডাকে কান দেয়নি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তাই এখন আর নরমপন্থা নয়। বরং সংবিধানের রক্ষক হিসেবে আপাতত কঠোর নীতি নিয়েই পাহাড় পরিস্থিতি সামলাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসন।

নেদারল্যান্ডস থেকে ফিরে এসে মঙ্গলবার নবান্নে পাহাড়ের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক কাজকর্ম এবং আইন-শৃঙ্খলা, দু’দিকই খতিয়ে দেখে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, নিয়ম মেনে কাজ করুক সরকার। কী সেই কাজ?

নবান্ন সূত্রে খবর, প্রথমত, বন্‌ধে জিটিএ দফতরগুলিতে হাজিরা কেমন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নবান্নের এক কর্তা জানাচ্ছেন, বন্‌ধ শুরুর পর থেকে জিটিএ অফিসগুলি খোলা যায়নি। তাদের অধীনে যে ১৮ হাজার কর্মী কাজ করেন, তাঁরাও কেউ আসেননি। জিটিএ কর্মীদের বেতন দিতে মাসে ৩৮ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। ওই কর্তার বক্তব্য, গরহাজিরার কারণে সরকার ওই কর্মীদের বেতন দেওয়ার কথা ভাবছে না। দ্বিতীয়ত, জেলাশাসকের অধীন বিভিন্ন দফতরের হাজিরা খতিয়ে দেখে অর্থ দফতরের নিয়ম অনুযায়ী গরহাজির কর্মীদের বেতনও কাটা হবে।

আরও পড়ুন: জিএসটি অনুষ্ঠান বয়কট মমতার

সমস্যা তৈরি হয়েছে পাহাড়ে রেশন পৌঁছনো নিয়েও। মোর্চার ডাকা বন্‌ধে পাহাড়ে বাজার, রেশন দোকান বন্ধ। তেমনই বন্ধ ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস বন্ধ। এটিএমেও টাকা নেই। তার মধ্যেই চলছে সরকারি অফিসে ভাঙচুর, আগুন দেওয়া। অভিযোগ, রেশন দোকানের মালিকদের খুনের হুমকি দিচ্ছেন মোর্চা সমর্থকেরা। এই পরিস্থিতিতে খাদ্য দফতরও চাল, গম, চিনি পাঠাতে বাড়তি উৎসাহ দেখাচ্ছে না। রেশন লুঠ এবং কালোবাজারির আশঙ্কা করছে তারা। এক খাদ্য কর্তা বলেন, ‘‘পাহাড়ে বন্‌ধ চলছে। এখন যদি ভর্তুকির খাদ্যপণ্য পুরোটাই ডিলাররা তুলে নেন, তা হলে বুঝতে হবে তা শিলিগুড়ির খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।’’ তাই আপাতত রেশন সরবরাহে বিশেষ উদ্যোগী হচ্ছে না রাজ্য সরকার।

বন্‌ধের মধ্যে সরকারি বাস চালানো নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ, কয়েকটি বাসে এর মধ্যেই আগুন দিয়েছেন মোর্চা সমর্থকেরা। এখন মাত্র পাঁচটি সরকারি বাস শিলিগুড়ি-দার্জিলিং যাতায়াত করছে। এমন ভাবে জ্বালিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা থাকলে এই সংখ্যাও কমতে পারে, ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা।

আগুন শুধু বাসেই দেওয়া হয়নি, পোড়ানো হয়েছে একাধিক সরকারি অফিসও। বুধবারই জিটিএ-র একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অফিসে আগুন লাগানো হয়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব রাখা হচ্ছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মোর্চা সমর্থকেরা ৪-৫ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি পুড়িয়েছে। তা ছাড়াও ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।’’ চা বাগান মালিকরা ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’ দার্জিলিং চায়ের পাতা তুলতে না পারার জন্য ১০০ কোটি ক্ষতির কথাও বলেছেন।

মোর্চার এই ‘ধ্বংসাত্মক’ আন্দোলনে আখেরে পাহাড়েরই ক্ষতি, বলছেন পাহাড়েরই কেউ কেউ। জিটিএ-র এক কর্তা যেমন বললেন, ‘‘সরকারি অফিসের পর জিটিএ অফিসে আগুন দিচ্ছে ওরা। এর পর কোথায় আগুন দেবে ওরা? নিজেদের বাড়িতে?’’ পাহাড়ের মানুষের মধ্যে এই চাপা অসন্তোষ বাড়তে পারে মাস পয়লায়, যখন খাদ্যসঙ্কট আরও বাড়বে। হাতে টাকাও থাকবে না।

এখন পর্যন্ত সেই সময়েরই অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ-প্রশাসন।

GJM Darjeeling Violence গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy