Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তটরক্ষীদেরই সুপারিশ মেনে পর্যটক-সুরক্ষা

প্রশাসন সূত্রের খবর, গত দু’বছরে শুধু বকখালিতেই তলিয়ে গিয়েছেন ন’জন। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য পর্যটকেরা দায়ী। কেননা অনেকে মদ্য পান করে গভীর সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যান।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও দিলীপ নস্কর
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৮
Share: Save:

এত দিনে বুঝি টনক নড়ল!

পরের পর দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জেরে বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ উপকূলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে এক গুচ্ছ সুপারিশ পাঠাল উপকূলরক্ষী বাহিনী। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে ওই উপকূলে সুরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে চলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।

উপকূলরক্ষী বাহিনীর পর্যবেক্ষণ, শুধু পর্যটকদের অসাবধানতাকে দায়ী করলে হবে না। বকখালি উপকূলে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাই নেই। উপকূলরক্ষী বাহিনীর পরামর্শ: • সকলকে সতর্ক করার জন্য যথেষ্ট নৌকা রাখতে হবে। • উপকূলে রাখতে হবে নিরাপত্তারক্ষী এবং দক্ষ সাঁতারু লাইফসেভার। তাঁদের দিতে হবে ওয়াকিটকি, টর্চ। • হাওয়া দিয়ে ফোলানো যায়, এমন নৌকা রাখতে হবে। • জোয়ার, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বার্তা দেওয়া এবং নজরদারির জন্য ওয়াচ টাওয়ার বা নজরমিনার তৈরি করতে হবে। • বিপজ্জনক এলাকা চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহার করতে হবে ভাসমান ‘বয়া’।

প্রশাসন সূত্রের খবর, গত দু’বছরে শুধু বকখালিতেই তলিয়ে গিয়েছেন ন’জন। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য পর্যটকেরা দায়ী। কেননা অনেকে মদ্য পান করে গভীর সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যান। আবার সাঁতার না-জেনেও অনেকে মেতে ওঠেন জলখেলায়। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার কোটালে ভাটার সময় জ‌ল নেমে যায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার। বহু পর্যটক তখন সেই বেলাভূমি পেরিয়ে জলের কাছে চলে যান। আচমকা জোয়ার চলে এলে সেই আকস্মিক আগ্রাসী জলরাশি ঠেলে ফিরতে পারেন না অনেকেই।

এর উপরে হেনরি আইল্যান্ড-সহ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে চোরা স্রোত। চরিত্রে তা অনেকটা চোরাবালিরই মতো। তাতেও তলিয়ে যান অনেকে। গত ২৩ জুন হেনরি আইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে ডুবে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কম্যান্ডার সোমরাজ গুপ্ত, তাঁর সাত বছরের মেয়ে এবং এক বন্ধুর স্ত্রী। ওই তিন জন চোরা স্রোতের টানেই তলিয়ে গিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার পরেই ওখানে পর্যটক-নিরাপত্তা বাড়াতে জেলাশাসকের কাছে এক গুচ্ছ সুপারিশ পাঠান উপকূলরক্ষী বাহিনীর ফ্রেজারগঞ্জ ঘাঁটির প্রধান কম্যান্ডান্ট অভিজিৎ দাশগুপ্ত।

উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক অভিজ্ঞ অফিসার বলেন, ‘‘নজরমিনার, নৌকা, রক্ষী-সহ নানান ব্যবস্থা রয়েছে গোয়ায়, মহারাষ্ট্রে। এগুলো না-থাকলে যে-কোনও সময়ে বিপত্তি ঘটে যেতে পারে।’’ তাঁর অভিজ্ঞতা, পরিকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে প্রাথমিক সেবাশুশ্রূষা দিয়ে বিপন্নকে সাহায্য করতে হবে, রক্ষীদের সেই জীবনদায়ী কৌশলও শেখানো দরকার। প্রাথমিক শুশ্রূষা না-মিললে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই বিপন্ন পর্যটকের মৃত্যু হতে পারে।

বকখালির চার কিলোমিটার লম্বা সৈকতে অবশ্য নিষেধাজ্ঞা লেখা বোর্ড রয়েছে। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পুলিশের অন্দরমহলেই। কারণ, সৈকতের চার কিলোমিটার এলাকায় নজরদার পুলিশের সংখ্যা নগণ্য। হেনরি আইল্যান্ডে কোনও নজরদারই নেই। এবং সেখানে কারও স্নান করতে নামারও কথা নয়। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘নিরাপত্তা বাড়াতে ইতিমধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে নিয়ে এক দফা আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই সুরক্ষা বাড়ানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE