Advertisement
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লগ্নির নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ী কেশরীনাথও

রাজ্যে লগ্নি কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে সংশয়ের সুর খোদ রাজ্যপালের গলাতেও। বৃহস্পতিবার বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের ১৬০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “লগ্নির ক্ষেত্রে ব্যবসা এবং শিল্প চায় নিরাপত্তা ও সহায়তা। তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব সকলের। যার মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকারও (বিজনেস অ্যান্ড ইনডাস্ট্রিয়ালিস্টস ... রিকোয়্যার সিকিওরিটি অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্স ইন ম্যাটার রিলেটিং টু ইনভেস্টমেন্ট)।” একই সঙ্গে, তাঁর সংযোজন, “নিছক কথার কথা নয়, এ জন্য চাই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ (নট মিয়ার টকস, কংক্রিট স্টেপস আর নেসাসারি)।”

বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের সভায় রাজ্যপাল।  —নিজস্ব চিত্র

বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের সভায় রাজ্যপাল। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

রাজ্যে লগ্নি কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে সংশয়ের সুর খোদ রাজ্যপালের গলাতেও।

বৃহস্পতিবার বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের ১৬০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “লগ্নির ক্ষেত্রে ব্যবসা এবং শিল্প চায় নিরাপত্তা ও সহায়তা। তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব সকলের। যার মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকারও (বিজনেস অ্যান্ড ইনডাস্ট্রিয়ালিস্টস ... রিকোয়্যার সিকিওরিটি অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্স ইন ম্যাটার রিলেটিং টু ইনভেস্টমেন্ট)।” একই সঙ্গে, তাঁর সংযোজন, “নিছক কথার কথা নয়, এ জন্য চাই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ (নট মিয়ার টকস, কংক্রিট স্টেপস আর নেসাসারি)।”

জমি-জট থেকে শুরু করে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (সেজ) তকমা দিতে অনীহা শিল্প নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন অবস্থানের কারণে বড় অঙ্কের লগ্নি এমনিতেই আজ বহু দিন অধরা। সেই গোদের উপর আবার বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে সিন্ডিকেট-রাজ আর তোলাবাজি। সম্প্রতি যার কারণে সমস্যায় পড়েছে কয়েকটি কারখানা। ঠারেঠোরে নিরাপত্তা আটোসাঁটো করার কথা বলেছে শিল্প মহল। তাই সেই পরিস্থিতিতে এ দিন রাজ্যপালের এই মন্তব্যকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষত গুরুত্ব পাচ্ছে তাঁর কথার শেষ অংশ, যেখানে নেহাত মৌখিক প্রতিশ্রুতির বদলে সরকারকে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করতে বলছেন তিনি।

ত্রিপাঠী বলেন, চূড়ান্ত অর্থাভাব দূর করতে রাজ্যে শিল্পায়ন জরুরি। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন লগ্নির অনুকূল পরিস্থিতি। অনেকের মতে, রাজ্যের মুখ যে সেই মাপকাঠিতে যথেষ্ট শিল্পবান্ধব নয়, তা ঘুরপথে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

যে কোনও জায়গায় বিনিয়োগের শর্ত হিসেবে নিরাপত্তার কথা প্রথমে বলে শিল্প। কারণ, এক বার টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেখানে প্রকল্প বা কর্মীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে, প্রবল সমস্যার মুখে পড়ে তারা। অনেক সময় বইতে হয় বিপুল আর্থিক ক্ষতিও। সেই কারণেই লগ্নি টানতে কোমর বাঁধা দেশ বা রাজ্য আগে লগ্নি এবং শিল্পের নিরাপত্তার কথা বলে। যেমন, এ দিনই মেক ইন ইন্ডিয়া-র অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিল্পপতিদের আশ্বাস দিয়েছেন, “আপনাদের টাকা মার যাবে না।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গাপুর সফরের সময় সে দেশের বিদেশমন্ত্রী এস ষন্মুগমও বলেছিলেন এই নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার কথা।

গত মাসে কলকাতায় এসে নিরাপত্তার এই অভাবের কথা বলেছিলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন কর্ণধার রতন টাটা। জানিয়েছিলেন, চূড়ান্ত প্রতিকূলতার মধ্যে দাঁড়িয়েই এ রাজ্য থেকে ন্যানো প্রকল্প সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। কারণ, সেখানে কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল।

স্থানীয় শিল্পমহলের অনেকেই বলছেন, রতন টাটা খোলাখুলি ওই কথা বলতে পেরেছেন। রাজরোষের ভয়ে এ নিয়ে মুখ খোলার সাহস তাঁরা পান না। কিন্তু সিন্ডিকেটের তোলাবাজিতে এখানে লগ্নির সিদ্ধান্ত যে একাধিক ক্ষেত্রে ধাক্কা খেয়েছে, তা নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ যথেষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পকর্তার দাবি, রাজ্যের ভাবমূর্তি নিয়ে সমস্যা ছিলই। এখন যোগ হয়েছে তোলাবাজির সমস্যা। যা আইন-শৃঙ্খলা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেয়। রাজ্যপাল কোন প্রসঙ্গে নিরাপত্তার কথা বলেছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ বণিকসভার কর্তা এন জি খেতান। তাঁর দাবি, যে কোনও জায়গায় লগ্নির জন্য পোক্ত আইন-শৃঙ্খলা থাকা জরুরি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে কেউ বিনিয়োগ করবে না।

নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, এ দিন লগ্নি টানায় রাজ্যকে অবশ্য কিছুটা নম্বর দিয়েছেন ত্রিপাঠী। তিনি জানান, সম্ভাব্য লগ্নিকারীদের সামনে রাজ্যকে তুলে ধরতে দিল্লি, মুম্বই ও সিঙ্গাপুরে শিল্প সম্মেলন আয়োজন প্রশংসনীয়। তাঁর আশা, এ ধরনের শিল্প সম্মেলনের ফলে আগামী দিনে বিনিয়োগ টানতে সফল হবে রাজ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE