Advertisement
০১ মে ২০২৪
Governor CV Ananda Bose

ধর্নামঞ্চ থেকে ‘জমিদারি’ কটাক্ষ, কয়েক ঘণ্টাতেই অভিষেককে জবাব দিলেন রাজ্যপাল, কী বললেন?

রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে রাজ্যপালকে ‘জমিদারি মানসিকতা’ নিয়ে কটাক্ষ করেন তিনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তারই জবাব দিয়ে দিলেন রাজ্যপাল।

Governor CV Ananda Bose counters TMC’s Zamindar allegations

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ২২:২৩
Share: Save:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জমিদারি’ কটাক্ষের জবাব দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলির উত্তর চলে এল। শুধু তা-ই নয়, পাল্টা বাংলার শাসকদলের দিকে ‘নব্যজমিদারি প্রথা’র অভিযোগ ছুড়ে দিলেন রাজ্যপাল।

রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। তাঁর সঙ্গে দলের সাংসদ, বিধায়কেরাও রয়েছেন। অভিষেক ঘোষণা করেছেন, ‘‘যত ক্ষণ না রাজ্যপালের দেখা পাচ্ছি, আমরা ধর্নামঞ্চে থেকে যাব। এখানেই রাত কাটাব। এক চুলও নড়ব না।’’ রাজ্যপাল সকালে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে কলকাতায় না ফিরে আবার চলে গিয়েছেন দিল্লিতে। এর পরেই অবস্থানে বসার সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য বৃহস্পতিবার সময় চেয়েছিল তৃণমূল। অভিষেক রাজভবনের সামনের সমাবেশ থেকে জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ইমেল মারফত রাজ্যপাল তাঁদের জানিয়েছেন, শিলিগুড়িতে গিয়ে দেখা করতে হবে। অথচ, শিলিগুড়ির সার্কিট হাউজে তিনি ছিলেন বিকেল ৪টে পর্যন্ত। অর্থাৎ, দেখা করতে চাইলে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে পৌঁছতে হত অভিষেকদের। একেই ‘জমিদারি মানসিকতা’ বলে কটাক্ষ করেন অভিষেক। উল্লেখ্য, এর আগে তিনি দিল্লি অভিযানের সময় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেও ‘জমিদার’ কটাক্ষ করেছিলেন।

অভিষেকের কটাক্ষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজভবন সূত্রে রাজ্যপালের জবাব মেলে। তিনি বলেছেন, ‘‘জমিতে বা মাটির কাছাকাছি পৌঁছনো জমিদারি নয়। বরং, জমিতে না নেমে শহরের বিলাসী আস্তানায় বসে কৃষকদের নিয়ন্ত্রণ করা হল নব্যজমিদারি। রাজ্যপালের কাছে এই মাটি এবং তার মানুষ পবিত্র।’’ রাজ্যপালের বক্তব্য, ‘‘গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাওয়ার অর্থ তৃণমূলে পৌঁছে যাওয়া। তৃণমূল কি তাহলে অন্যদের তৃণমূলে পৌঁছতে বাধা দিতে চায়? কিসের ভয় তাদের? তারা কি নিজেদের জমিদারি হারানোর ভয় পাচ্ছে?’’

রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক রাজ্যপালের উত্তরবঙ্গ সফরকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘বন্যাবিধ্বস্ত এলাকায় রাজ্যপাল পর্যটক হিসাবে যাচ্ছেন।’’ এরও জবাব দিয়েছেন বোস। সেচমন্ত্রীর প্রতি তাঁর উত্তর, ‘‘মানুষ যেখানে কষ্ট পাচ্ছেন, আমি সেখানে যাব। উনি অন্তত পর্যটক হিসাবে হলেও এখানে থাকতে পারতেন। এখানে এলে উনি বুঝতেন, এখানে রাস্তা নেই। রাস্তা সব ভেসে গিয়েছে।’’

রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের দেখা না পেয়ে তৃণমূল অভিযোগ করেছে, রাজ্যপাল তাঁদের অভিযানকে ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছেন (ফ্লিউ অ্যাওয়ে)। রাজ্যপাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন শুনেই আমি সেখানে ছুটে গিয়েছি। বিমানে উড়ে যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। সে দিক থেকে দেখতে গেলে ‘পালিয়েছি’ (ফ্লিউ অ্যাওয়ে) বটে।’’

উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন বোস। তাঁকে সেখানে কালো পতাকা দেখানো হয়েছে। তবে তৃণমূলের এই বিক্ষোভকে তেমন পাত্তা দিতে চাইছেন না রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ওরা ওখান থেকে চলে যেতে বলছিল। ঠিকই বলেছে। রাজ্যপাল হিসাবে তো আমি সার্কিট হাউসে থেকে যেতে পারি না। চলে এসেছি।’’ অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের রাজভবন ঘেরাও কর্মসূচির কথা শুনে রাজ্যপালের পরামর্শ, ‘‘ঘেরাও নয়, ঘরে এসো।’’

১০০ দিনের কাজ করেও যাঁরা টাকা পাননি, কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁদের নিয়ে প্রথমে দিল্লিতে গিয়েছিলেন অভিষেকরা। সেখানে দু’দিনের কর্মসূচি ছিল। রাজঘাটে ধর্নার পর ৪ অক্টোবর কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে কৃষিভবনে গিয়েছিলেন বাংলার শাসকদলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু অভিযোগ, দীর্ঘ ক্ষণ বসিয়ে রাখার পর পিছনের দরজা দিয়ে মন্ত্রী ‘পালিয়ে’ গিয়েছেন। দেখা করেননি। এর পরই কলকাতায় রাজভবন অভিযান কর্মসূচির ডাক দেন অভিষেক। বাংলায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যপালের কাছেই ডেপুটেশন জমা দেবেন বলে ঘোষণা করেন তিনি। তৃণমূলের এই ঘোষণার সময় রাজ্যপাল ছিলেন কেরলে। সেখান থেকে দিল্লিতে চলে যান। বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে উত্তরবঙ্গ ঘুরে আবার দিল্লিতেই ফিরে গিয়েছেন তিনি। কলকাতায় ফেরেননি। রাজভবন সূত্রে খবর, শুক্রবার রাজধানীতে তাঁর কর্মসূচি রয়েছে। অভিষেকদের কত দিন ধর্নাস্থলে থাকতে হবে, রাজ্যপাল কবে ফিরবেন, এখনও স্পষ্ট নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE