Advertisement
E-Paper

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সরকারের দেওয়া ১৬ কোটি টাকা পড়ে আছে দেড় বছর

উন্নয়নের জন্যে সরকারের কাছে অর্থের আবেদন করা হয়ছে, অথচ তা আদায় করতে পার হয়ে গিয়েছে কয়েক মাস। এরকম ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ঘটেছে পুরো উল্টো!

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:২৫

উন্নয়নের জন্যে সরকারের কাছে অর্থের আবেদন করা হয়ছে, অথচ তা আদায় করতে পার হয়ে গিয়েছে কয়েক মাস। এরকম ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ঘটেছে পুরো উল্টো!

রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, প্রায় দেড় বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর উন্নয়নের স্বার্থে দফতর থেকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু উন্নয়নের কোনও কাজ শুরুই হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও বা নতুন করে দরপত্র ডেকে কিছু কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানেও শুরু হয়েছে বিতর্ক।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে বেশ কিছু অর্থের দাবি জানানো হয়। সে সময় জানানো হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গোটা ক্যাম্পাসকে ‘ওয়াইফাই জোন’ হিসাবে পরিণত করা হবে। এ ছাড়া বিদেশি ভাষার পাঠ দেওয়ার জন্যে ডিজিটাল বন্দোবস্ত, পাঠাগারে উন্নত ধরনের ইলেকট্রনিক্স ব্যবস্থা নিয়ে আসা, টেকনোলজি ভবন তৈরি করা থেকে একাধিক প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপরে ওই বছরের নভেম্বর মাসে রাজ্যের শিক্ষা দফতর থেকে ওয়াইফাই জোন ছাড়া প্রায় প্রতিটি প্রকল্পের জন্যে প্রায় ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু কাজ এতটুকু এগোয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

কিন্তু কেন? টাকা বরাদ্দ থাকলেও কীসের এত বিলম্ব?

বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসমিতির এক সদস্য জানান, অর্থ পাওয়ার পরেই রাজ্য সরকারের নোডাল এজেন্সি ‘ওয়েবেল’-কে দিয়ে কাজ করানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকেই ওয়েবেলকে প্রস্তাব পেশ করা গোটা প্রকল্পের বাস্তব রূপায়নের জন্যে। কিন্তু তখনও কোনও চুক্তি হয়নি। এরপর হঠাৎই পরিস্থিতি ঘুরে যেতে শুরু করে।

কী রকম?

ওয়েবেল সূত্রের খবর, ২০১৫-র মার্চ মাস নাগাদ সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের ওই সমস্ত কাজ করার মতো ওয়েবেলের সামর্থ্য রয়েছে কিনা তা বিশদে জানাতে। এমনকি উচ্চশিক্ষা দফতরকে এ বিষয়ে শংসাপত্র দেওয়ার কথাও জানানো হয়। যে সংস্থার চেয়ারম্যান খোদ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, সে রকম একটি সংস্থাকে কাজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে বলায় শোরগোল পড়ে যায়। কিন্তু ওয়েবেল ওই দাবি মেনে উচ্চশিক্ষা দফতরের মাধ্যমে শংসাপত্র দেয়। কিন্তু কোনও ‘অদৃশ্য’ কারণে ওয়েবেলকে কার্যত বয়কটই করে রেখে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আদৌ পরিকাঠামোর কাজ ওয়েবেলকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করাতে ইচ্ছুক কিনা তা জানতে চেয়ে একাধিকবার ওয়েবেলের তরফ থেকে চিঠি পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু তার কোনওটিরই উত্তর দেয়নি কর্তৃপক্ষ। যে কারণে বরাদ্দ অর্থ এসেও তা পড়ে থাকে।

কেন ওয়েবেলের সঙ্গে চুক্তি না করে বিলম্ব করল কর্তৃপক্ষ?

রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষের জবাব, ‘‘সেটা কেন হয়েছে বলতে পারব না। নিশ্চই কোনও জায়গা থেকে আপত্তি ছিল।’’ কোন জায়গা থেকে তা অবশ্য খোলসা করেননি রেজিস্ট্রার।

এরপরে চলতি বছরে ওই প্রকল্পের একটি অংশের কাজ শুরু করার জন্যে উদ্যোগী হন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে দরপত্র প্রকাশ করা হয়। এবার সেই দরপত্রকে ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে।

কী রকম?

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির অন্য আরেক সদস্য জানান, ওই দরপত্রটিতে একটি বড়সড় ভুল রয়ে গিয়েছে। দরপত্র নিয়ম অনুযায়ী যা করা যায় না বলে দাবি ওই সদস্যের। ওই দরপত্রে উল্লেখ রয়েছে কোনও লাইব্রেরি সফটওয়ার কোম্পানিই পরিকাঠামোর উন্নয়নের প্রকল্পে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু কোনও দরপত্রে এরকম কোনও উল্লেখ রাখার নমুনা এর আগে নেই। কারণ আরএফআইডি বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি প্রকল্পের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে প্রাধান্য না দিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ করে দেওয়া উচিত নয় বলে জানিয়েছেন ভিজিল্যান্স কমিশনের এক কর্তাও। তিনি জানান নির্দিষ্ট ভাবে কিছু উল্লেখ করার নিয়ম নেই। এমনকি ভিজিল্যান্স কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী ভিজিল্যান্সের কাছে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে তার তদন্ত শুরু হতে পারে।’’

সম্প্রতি খড়্গপুর আইআইটি একইরকম দরপত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে কারা অংশ নিতে পারবে সেরকম কিছুর উল্লেখ নেই। তাহলে এক্ষেত্রে কেন তা করা হল?

এর দায় অবশ্য সরাসরি নিতে চাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্র্রার প্রদীপ ঘোষ। তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘আমি নথি না দেখে হঠাৎ করে কিছু বলতে পারব না। তবে এটুকু বলি দরপত্রের জন্যে একটি কমিটি রয়েছে। যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে ওই কমিটিতেই হয়েছে।’’

কিন্তু দরপত্র প্রকাশ তো করেন রেজিস্ট্রার স্বয়ং। যদি কিছু ভুল থাকে তাহলে তিনি কেন দেখলেন না?

‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাজ। তার মধ্যে একটি বিষয় না দেখে এভাবে বলা সম্ভব নয়।’’—জবাব প্রদীপবাবুর।

কর্মসমিতির বৈঠক এড়িয়ে দরপত্র ডাকার বিষয়ে তাঁর জবাব, ‘‘প্রকল্পের দরপত্র ডাকতে গেলে কর্মসমিতিতে তা পেশ করার দরকার নেই।’’ যদিও কর্মসমিতির এক সদস্যের কথায়, ‘‘সমিতিতে পেশ না করাটা বেআইনি হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পের দরপত্র প্রকাশে কীসের এত গোপনীয়তা?’’ প্রথমে বিলম্ব, তারপরে দরপত্রে অসঙ্গতির অভিযোগ ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্দরে।

government spent money jadavpur university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy