Advertisement
E-Paper

ধাক্কা মেরে কুণালকে গাড়িতে তুলল ৩০ পুলিশের দল

আর কোনও ‘অস্বস্তিকর’ কথা নয়। শনিবার সারদার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তিনি যাতে ফের এ রকম কোনও কথা বলে ফেলতে না পারেন, সে জন্য এ বার তেড়েফুঁড়ে উঠল রাজ্য পুলিশ। রবিবার রাতে সিবিআই অফিস থেকে বের হওয়ার সময় কুণাল যাতে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলতে না পারেন, সে জন্য অন্তত তিরিশ জন পুলিশকে মোতায়েন করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯
সিবিআই অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সময় ধস্তাধস্তি।  নিজস্ব চিত্র

সিবিআই অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সময় ধস্তাধস্তি। নিজস্ব চিত্র

আর কোনও ‘অস্বস্তিকর’ কথা নয়।

শনিবার সারদার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তিনি যাতে ফের এ রকম কোনও কথা বলে ফেলতে না পারেন, সে জন্য এ বার তেড়েফুঁড়ে উঠল রাজ্য পুলিশ। রবিবার রাতে সিবিআই অফিস থেকে বের হওয়ার সময় কুণাল যাতে সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলতে না পারেন, সে জন্য অন্তত তিরিশ জন পুলিশকে মোতায়েন করা হয়। বিধাননগরের একটি থানার আইসি নিজেও হাজির ছিলেন ওই দলে। সিবিআই অফিস থেকে বের হওয়ার পরে পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে রেখে কার্যত ধাক্কা দিতে দিতেই প্রিজন ভ্যানে তোলা হয় কুণালকে।

শনিবার সাংবাদিকদের সামনে কুণাল বলেছিলেন, ‘সারদার মিডিয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধা যদি সব থেকে বেশি কারও কাছে পৌঁছে থাকে, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। এ দিন তাই কুণালের মুখ বন্ধ করতে তৎপর ছিল রাজ্য পুলিশ।

এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ কুণালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয় সিবিআই দফতরে। টানা ১৩ ঘণ্টা জেরার পরে রাত ৮টা নাগাদ তাঁকে বের করা হয় সিবিআই দফতর থেকে। সিবিআই-এর নিজস্ব কোনও লকআপ না থাকায় কুণালকে রাখা হয়েছে বিধাননগর দক্ষিণ থানায়। সেখানে সিবিআই অফিসারদের হেফাজতে রাখা হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু কুণালকে থানা থেকে আনা-নেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই এ দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সল্টলেকের সিবিআই অফিস মুড়ে ফেলা হয় পুলিশ দিয়ে। বিধাননগরের দু’টি থানার পুলিশ ছাড়াও মোতায়েন করা হয় ব্যারাকপুর রিজার্ভ ফোর্সের পুলিশ বাহিনী। কুণাল সিবিআই দফতর থেকে বের হতেই প্রায় ৩০ জনের এই দলটি তাঁকে ঘিরে ফেলে। এই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের কিছুটা ধস্তাধস্তিও হয়।

শনিবার মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্যের পরে তৃণমূলের তরফে কুণালের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ দিন পুলিশি ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই তাঁদের সম্পর্কে কুণালের তীর্যক মন্তব্য, “পার্থদা, সুদীপদা তো দিল্লিতে সারদার মিডিয়ার উদ্বোধন করেছিলেন! সাংবাদিক বৈঠকে এত কথা না বলে তো এটুকু বললেই চলত!” ফিরহাদ সম্পর্কে তিনি বলতে থাকেন, “উনি তো টিকিট না পেয়ে বিক্ষোভও করেছিলেন!” পুলিশ অবশ্য কুণালকে আর কিছু বলতে দেয়নি। কার্যত ধাক্কা মেরেই তাঁকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।

দিল্লিতে সারদা গোষ্ঠীর সংবাদমাধ্যমের একটি অনুষ্ঠানে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে কুণাল আজ ফের সরব হওয়ায় পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু। রবিবার রাতে তিনি বলেন, “আমি ও সুদীপদা ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম সাংবাদিক কুণালের আমন্ত্রণে। এই ভাবে অনেক জায়গাতেই গিয়ে থাকতে পারি। কিন্তু কয়েদি কুণালের ডাকে তো কোথাও যাইনি!”

তৃণমূল নেতা যা-ই বলুন, বিরোধীরা কিন্তু আক্রমণের সুযোগ ছাড়তে নারাজ। রবিবার শিলিগুড়িতে এক সভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কালিম্পঙের ডেলোতে সুদীপ্ত, মমতা এক সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা গিয়েছে। সিবিআই খতিয়ে দেখুক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন এই বিষয়ে মুখ খুলছেন না, তা-ও বিচার করে দেখতে হবে।”

কুণালকে এ দিন কী নিয়ে জেরা করেছে সিবিআই?

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রবিবার সকাল সাতটা থেকে কুণালকে জেরা করতে বসেন তদন্তকারীরা। রেলের সঙ্গে সারদার চুক্তি, সুদীপ্তের সংবাদমাধ্যম ব্যবসার খুঁটিনাটি এবং একটি বাংলা সিনেমায় লগ্নি নিয়ে কুণালকে জেরা করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় উঠে এসেছে সারদার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নিতু এবং ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবালের জড়িত থাকার বিষয়ও।

সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, সারদার সংবাদমাধ্যম ব্যবসায় গ্রুপ মিডিয়া সিইও হিসেবে কর্মরত ছিলেন কুণাল। শীর্ষ পদে কাজ করার ফলে সংস্থার খুঁটিনাটি বিষয় তাঁর জানার কথা। সিবিআইকে লেখা চিঠিতে মিডিয়া ব্যবসা নিয়ে একাধিক অভিযোগ করেছেন সুদীপ্ত সেন। বলেছেন, একের পর এক চ্যানেল ও সংবাদপত্র কিনে ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে তাঁর। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়ে তিনি ঠকে গিয়েছেন বলেও তদন্তকারীদের জানিয়েছেন সুদীপ্ত। তাঁর সেই অভিযোগের কতটা ভিত্তি রয়েছে, তা যাচাই করতেই কুণালকে জেরা করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর।

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে লাস ভেগাসে প্রবাসী বাঙালিদের একটি অনুষ্ঠান এবং একটি বাংলা সিনেমার প্রিমিয়ারের কথাও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রের খবর, কুণাল ঘোষ প্রযোজিত একটি বাংলা সিনেমার নামও উঠে এসেছে। সেই বাংলা সিনেমায় সারদা বকলমে টাকা ঢেলেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। পাশাপাশি বাংলা সিনেমার প্রিমিয়ার কেন বিদেশের মাটিতে হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা। এগুলি যাচাই করতে সকাল থেকে কুণালকে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।

সিবিআই সূত্রের খবর, কলকাতা ময়দানের একাধিক ক্লাবেও সারদার টাকা ঢালা হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে নিতুকে আগেই জেরা করেছেন তদন্তকারীরা। এ বার কুণালকেও একই প্রশ্ন করা হয়েছে বলে খবর। তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, ময়দানে টাকা ঢালার বিষয়টি কুণাল জানতে পারেন। পাশাপাশি সাসপেন্ড হওয়া এই তৃণমূল সাংসদ ময়দানের রাজনীতির হালহকিকৎ সম্পর্কেও সিবিআইকে তথ্য জোগাতে পারবেন বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা। তদন্তে নেমে সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-সহ একাধিক নিয়ামক সংস্থাকে ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে নিতু ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সন্ধির অগ্রবালের কথা জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়। গোয়েন্দারা বলছেন, সন্ধিরের রাজনৈতিক জগতেও যোগাযোগ রয়েছে। কংগ্রেসের এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নেতা এবং তৃণমূলের এক প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সেই প্রসঙ্গেও কুণালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

সিবিআইয়ের একটি সূত্র বলছে, কুণালও তৃণমূলের ওই প্রাক্তন সাংসদের ঘনিষ্ঠ। নিতুর সঙ্গে ওই সাংসদের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলেও তদন্তকারীরা জেনেছেন। ওই সাংসদ ঘনিষ্ঠ আরও অনেক সিবিআই সূত্রের খবর, সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খানকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। আসিফ জানিয়েছেন, আজ, সোমবার তিনি সিবিআই দফতরে যাবেন। তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে আর এক কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও (ইডি)। বুধবার তিনি ইডি দফতরে যাবেন বলে আসিফ জানান। এর আগে অসিফের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। আসিফ-ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ‘আজকের কলম’ নামের একটি সংবাদপত্র চালাতেন। সম্প্রতি তিনি তৃণমূলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনেন।

saradha scam kunal ghosh sudipto sen debjani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy