Advertisement
E-Paper

গুপ্ত সাম্রাজ্য এখনও গো-দখলে

এক দিকে তালগাছের সারি। অন্য দিকে আগাছার জঙ্গল। মাঝে বিশাল জলাশয় জুড়ে পদ্মপাতার চাষ। লাগোয়া শিয়াল কালীতলার ঢিবি। এই ঢিবির তিনটি জায়গায় পরীক্ষামুলক ভাবে খনন কার্য চালিয়ে দেড় থেকে দু’মিটার গভীরতায় রাজ্য প্রত্ন বিভাগ যে সমস্ত দীপ, পুঁতি, বল সহ একাধিক নানা কারুকার্য খচিত মৃৎপাত্র উদ্ধার করেছে, বুধবার সাত সকালেই সেগুলি নিয়ে রওনা দিয়েছেন কলকাতায়।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩১
চলছে উৎখননের কাজ। — নিজস্ব চিত্র

চলছে উৎখননের কাজ। — নিজস্ব চিত্র

এক দিকে তালগাছের সারি। অন্য দিকে আগাছার জঙ্গল। মাঝে বিশাল জলাশয় জুড়ে পদ্মপাতার চাষ। লাগোয়া শিয়াল কালীতলার ঢিবি। এই ঢিবির তিনটি জায়গায় পরীক্ষামুলক ভাবে খনন কার্য চালিয়ে দেড় থেকে দু’মিটার গভীরতায় রাজ্য প্রত্ন বিভাগ যে সমস্ত দীপ, পুঁতি, বল সহ একাধিক নানা কারুকার্য খচিত মৃৎপাত্র উদ্ধার করেছে, বুধবার সাত সকালেই সেগুলি নিয়ে রওনা দিয়েছেন কলকাতায়। মাটি চাপা দিয়ে আপাতত ঢাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে তিনটি খনন করা গর্তই।

রাজ্য প্রত্ন অধিকার এলাকাটিকে ঘিরে রেখে সন্তর্পণে কাজ করেছেন। কিন্তু এ দিনের সংবাদপত্রে শিয়াল কালীতলায় চাপা পড়ে থাকা গুপ্তযুগের সম্ভাব্য ইতিহাস সামনে আসতেই আশপাশের এলাকা থেকে কৌতুহলী মানুষের ভিড় বেড়েছে।

বট, পাকুড় গাছের পাশে বড় বড় গাছ সারি বেঁধে আছে কালীতলার চত্বর জুড়ে। গড়ে উঠেছে যাত্রী প্রতীক্ষালয় সহ একাধিক নির্মাণ কাজ। কালীপুজোর ভাণ্ডার ঘর। প্রতি মঙ্গল ও শনিবার পুজোয় যাত্রীরা আসেন। ফাল্গুন মাসে তিন দিন ধরে চলে মহোৎসব। তাই এই এলাকায় অতীতে অনেক কিছুই উদ্ধার হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে।

ঢিপিতে দাঁড়িয়ে বোধপুরের বাসিন্দা কাজেম আলি বলছেন, “ছোট থেকেই দেখছি প্রায় আধ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কাটনাইয়ের এই মৌজায় ছিল ১০ ফুটেরও বেশি উঁচু ঢিবি। সেই ঢিবির মাটি কেটেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক নির্মাণের জন্য। সেখান থেকে স্বর্ণমুদ্রা মিললেও সেই ঢিবি খোঁড়ার কাজ তখন বন্ধ হয়নি। ফলে সেই ঢিবির সবটাই প্রায় এখন চাষের জমি। শুধুমাত্র ধর্মস্থান বলেই শিয়ালকালীর ঢিবিটি এখনও অক্ষত রয়েছে।”

রাজ্য পুরাতত্ত্ব ও সংগ্রহালয়ের কো ডিরেক্টর বিনয় মণি জানান, বোধপুর, কাটনাই, বিজয়পুর, মির্জাপুর ও গণকর মৌজা এই ৫টি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের সচেতন করে ওই সব এলাকায় কোনও রকম খোঁড়াখুঁড়ির কাজ না করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগটাই ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তাই শিয়াল কালীতলায় যে খননকাজ অতি সহজে করা গিয়েছে, অন্যত্র ততটা সহজে করা যাবে না। এই কারণেই ওই সব এলাকায় সরকারি দফতরের বোর্ড ঝুলিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা সম্ভব হয়নি। প্রাপ্ত প্রত্ন সামগ্রীগুলি সহ রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে দেওয়া হচ্ছে দু’দিনের মধ্যেই। পাশাপাশি তা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছেও পাঠানো হবে। তাঁর কথায়, আশা করছি এই এলাকাগুলিতে খনন কাজ চালালে কয়েক শতাব্দী ধরে জনবসতি সম্পর্কে বহু তথ্য সামনে আসবে।

রাজ্য প্রত্ন দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য বলছেন, “ইতিমধ্যেই এই এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া নানা ধরনের প্রত্ন সম্ভার বেহাত হয়ে গিয়েছে। আহিরণের সড়ক থেকে মাত্র ১১টি স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার হয়েছে। ওই সব মুদ্রাগুলিতে উৎকীর্ণ করা রয়েছে রাজা রানির মূর্তি, যেগুলি প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমলের বলে ধারণা করা হয়। কোনওটিতে ‘চন্দ্র’, সেই সঙ্গে ‘শ্রীবিক্রমঃ’ লেখাও উৎকীর্ণ রয়েছে, যে মুদ্রা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলের। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণমুদ্রার একটিতে লেখা রয়েছে ‘কাচ’ গুপ্ত রাজার নাম। কাচকে কেউ কেউ সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গে অভিন্ন বলে মনে করেন। এই এলাকায় গুপ্তযুগের এই বিস্তারের প্রমাণ মেলার ঘটনা যথেষ্ট গৌরবের। তাই বহু আগেই এই এলাকার ইতিহাস সন্ধানে তৎপরতা দেখালে গুপ্ত যুগ সম্পর্কে বহু কথা জানা সম্ভব হত।”

Farming Gupta empire archaeologist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy