Advertisement
E-Paper

তল্লাশিতে বিপুল অস্ত্র, নোট বোঝাই টাকা উদ্ধারের পর থেকে উধাও গুরুঙ্গ

গত সোমবার থেকে সরকারি অফিস-ব্যাঙ্কে বন্‌ধের ডাক দিয়েছে মোর্চা। বুধবারই অনির্দিষ্টকাল পাহাড় বন্‌ধের হুমকি দিয়েছিলেন গুরুঙ্গ। মোর্চার নেতারা অনেকেই একান্তে মানছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে পাতলেবাসে গুরুঙ্গের বাড়ি তথা দফতরে ঢুকে পড়বে, এটা তাঁরা ভাবতে পারেননি

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০৪:২৭
অভিযান: পাতলেবাসে গুরুঙ্গের বাড়ি লাগোয়া গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দফতরে থেকে উদ্ধার টাকা ও অস্ত্র-ভর্তি ব্যােগ তল্লাশি পুলিশের। ছবি: এএফপি।

অভিযান: পাতলেবাসে গুরুঙ্গের বাড়ি লাগোয়া গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দফতরে থেকে উদ্ধার টাকা ও অস্ত্র-ভর্তি ব্যােগ তল্লাশি পুলিশের। ছবি: এএফপি।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা। দার্জিলিঙের এসপি অখিলেশ চতুর্বেদীর নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী ঘিরে ফেলল সিংমারিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পার্টি অফিস। তার এক ঘণ্টার মধ্যে তারা ঢুকে পড়ল পাতলেবাসে মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গের বাড়িতে। আর সন্ধ্যায় দিল্লি জানিয়ে দিল রাজ্যের চাহিদা মেনে পাহাড়ে আরও চার কোম্পানি আধা-সেনা পাঠাতে তারা রাজি।

গত সোমবার থেকে সরকারি অফিস-ব্যাঙ্কে বন্‌ধের ডাক দিয়েছে মোর্চা। বুধবারই অনির্দিষ্টকাল পাহাড় বন্‌ধের হুমকি দিয়েছিলেন গুরুঙ্গ। মোর্চার নেতারা অনেকেই একান্তে মানছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে পাতলেবাসে গুরুঙ্গের বাড়ি তথা দফতরে ঢুকে পড়বে, এটা তাঁরা ভাবতে পারেননি।

সেই অভিযানের ধাক্কায় এ দিন দিনভর ‘নিখোঁজ’ গুরুঙ্গ। কেউ বলছেন, তিনি নেপাল চলে গিয়েছেন। কেউ বলছেন, জেলাতেই আছেন। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া মোর্চা নেতা রোশন গিরি বলেন, ‘‘আমাদের নেতা সব সময়ে পাহাড়বাসীর পাশে রয়েছেন। প্রয়োজন হলেই সামনে আসবেন।’’ মোর্চা সূত্রে সন্ধ্যায় জানা যায়, গুরুঙ্গ পাতলেবাসের কাছেই একটি গ্রামে লুকিয়ে রয়েছেন। সেখান থেকে পাহাড়বাসীদের প্রতি ‘অন্তিম লড়াইয়ের’ ডাক দিয়েছেন তিনি। অনির্দিষ্ট কালের জন্য পাহাড়ে বন্‌ধ এ দিন থেকেই শুরু হয়ে গেল বলেও জানিয়েছে মোর্চা।

পুলিশি অভিযানের জেরে কোণঠাসা হয়েই গুরুঙ্গের এই ‘চরম’ ডাক— মনে করছেন পাহা়ড় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অনেকেই। এ দিনের তল্লাশিতে পাতলেবাস থেকে প্রচুর ধারালো অস্ত্র, অত্যাধুনিক তির-ধনুক, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোছা গোছা দু’হাজার এবং পাঁচশোর নোট বোঝাই বস্তা বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।

এর আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের উপরে চড়াও হয় মোর্চা সমর্থকেরা। ইটবৃষ্টি থেকে সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে আগুন লাগানো, সবই চলতে থাকে। ইটের ঘায়ে জখম হন কয়েক জন পুলিশ কর্মী।

পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এর মধ্যে কালিম্পঙে পর্যটন দফতরের অতিথি নিবাসে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। কার্শিয়াঙেও গোলমাল পাকাতে গিয়ে গ্রেফতার হন এক মোর্চা নেত্রী। তিনধারিয়ায় এনবিএসটিসি-র বাস জ্বালানো হয়। আগুন দেওয়া হয় পেডং ফাঁড়িতে। গয়াবাড়িতে টয়ট্রেনের স্টেশনে আগুন লাগানো হয়।

আরও পড়ুন: কড়া রাজ্য, কোণঠাসা ‘রবিনহুড’

মোর্চা সূত্র বলছে, তল্লাশির সময় থেকেই গুরুঙ্গ বেপাত্তা। তিনি গা ঢাকা দেওয়ায় কর্মীদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ছড়ায়। সেই ধস সামাল দিতেই পুলিশকে আক্রমণের ছক কষা হয়। ঠিক হয়, বাহিনীকে ঘিরে ফেলে পাহাড়ের চার দিক থেকে ইট-পাথর ছোড়া হবে।

কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ মুখে কাপড় বেঁধে এক দল লোক ব্যাপক ভাঙচুর চালায় গুরুঙ্গের বাড়িতে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাঁর গাড়ি। এই চাপের মুখে গুরুঙ্গ তাঁর গোপন ডেরা থেকে অনুগামী মারফত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাউকে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে আলোচনার রাস্তা খোঁজার বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিতে বলেন। সেই মতো মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সরোজ থাপা বলেন, ‘‘যা হওয়ার হয়েছে। এ বার আলোচনার ব্যাপারে কেন্দ্র-রাজ্য উদ্যোগী হোক।’’

ত্রিপাক্ষিক আলোচনার সম্ভাবনা কিন্তু অঙ্কুরেই বিনাশ করে দেয় নবান্ন। এই অবস্থায় এ দিন সন্ধ্যায় রাজনাথের কাছে গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানান রোশন। সূত্রের খবর, রাজনাথ শুধু খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। উল্টে পাহাড়ে আরও চার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে রাজি হয়েছে দিল্লি। পাহাড়ে একাধিক আইপিএস এবং ডব্লিউবিপিএস অফিসার পাঠিয়ে পুলিশ কার্যকলাপ আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এর পরে অন্তিম লড়াইয়ের ডাক দেওয়া ছাড়া বোধহয় আর পথ ছিল না বিমল গুরুঙ্গের।

Bimal Gurung বিমল গুরুঙ্গ Morcha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy