অধরা ন্যূনতম মজুরি। প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে একশো দিনের কাজের হিসাব সংক্রান্ত নানা অভিযোগে ওই প্রকল্পের টাকা ডিসেম্বর থেকে দেওয়া বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে যা সমস্যা ও অস্বস্তিতে ফেলেছে নবান্নকে। এই পরিস্থিতিতে ১৭ মে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস ছিল, টাকার জন্য কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে না-থেকে একশো দিনের কাজের কার্ডধারীদের বিকল্প রুজির বন্দোবস্ত করবে রাজ্য সরকারই। সেই পথে হেঁটে ২৩ অগস্ট পর্যন্ত ওই খাতে মজুরি বাবদ মোট ৬৬৪ কোটি টাকা খরচও করেছে রাজ্য। কিন্তু অভিযোগ, ওই জব-কার্ডধারীদের গড় ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা যায়নি অর্ধেক জেলাতেই (২২টির মধ্যে ১১টিতে)।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এ হেন পরিসংখ্যান চিন্তার ভাঁজ ফেলছে প্রশাসনের কপালে। বিরোধী শিবিরের একাংশেরও প্রশ্ন, যে সরকার সদ্য দুর্গাপুজোয় অনুদান বৃদ্ধির (২০১ কোটি থেকে ২৪০ কোটি টাকা) কথা ঘোষণা করেছে, তারা ন্যূনতম মজুরি দিতে পিছপা হবে কেন? প্রশাসনিক সূত্রে যদিও দাবি, কেন্দ্র নানা ‘অজুহাতে’ টাকা আটকে রাখা সত্ত্বেও মানবিক দিক থেকে বিচার করে কাজ জোগানোর চেষ্টা করছে রাজ্য। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ফিরলে, সকলকে ন্যূনতম মজুরি দিতে অসুবিধা থাকবে না বলেও সরকারি সূত্রে দাবি।
একশো দিনের কাজে অদক্ষ শ্রমিকদের (যাঁরা রাজ্যের থেকে বিকল্প কাজের সুযোগ পাচ্ছেন) ন্যূনতম মজুরি দিনে ২২৩ টাকা। অর্ধদক্ষ ও দক্ষ শ্রমিকদের তা যথাক্রমে ৩৩৪ এবং ৪৪৬ টাকা। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যের রাজকোষের যা হাল, তাতে এই ব্যয় বহন কার্যত অসম্ভব।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২৩ অগস্ট পর্যন্ত ৪১টি দফতরের বহু কাজে প্রায় ২৪.৫৩ লক্ষ শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়েছে। প্রত্যেককে গড়ে ১৩.১৮ দিন করে কাজ দেওয়া গিয়েছে। গড়ে তাঁরা পেয়েছেন ২০৫.৫৭ টাকা করে। জলপাইগুড়িতে প্রত্যেক শ্রমিক গড়ে মজুরি পেয়েছেন ৫৯.৫১ টাকা। মালদহে ৯৯.৭০ টাকা। ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে গড় মজুরি ১৩৯ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে। হাওড়া, নদিয়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বীরভূমে আবার তা ১৭৫ থেকে ২২২ টাকা। দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, পূর্ব বর্ধমান, কোচবিহার, কালিম্পংয়ে গড় রোজগার ন্যূনতম মজুরির থেকে বেশি। দার্জিলিংয়ে গড় মজুরি সব চেয়ে বেশি, প্রায় ৫৩৪ টাকা। প্রসঙ্গত, প্রতি জেলায় প্রকল্প অনুযায়ী টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য।
জেলা প্রশাসনগুলির অনেকে জানাচ্ছেন, দফতরগুলির কাজ কোনও না কোনও ঠিকাদার সংস্থার অধীনে হয়। তার জন্য রাজ্যের বরাদ্দ নির্দিষ্ট করা থাকে। শ্রমিকরা তা থেকে মজুরি পান ঠিকাদার মারফত। তাই প্রতি জেলায় প্রকল্প ও সেখানে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা অনুয়ায়ী গড় মজুরির অঙ্ক নির্ধারিত হয়েছে। তাই কোথাও তা ন্যূনতম মজুরির থেকে বেশি, কোথাও আবার তা কম। এক কর্তার কথায়, “আগে ১০০ টাকা ১০ জনের মধ্যে ভাগ হত। এখন হয়তো সেই ভাগ করতে হচ্ছে ১৫ জনের মধ্যে।”
১৭ মে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “কেন্দ্র প্রাপ্য টাকা দেয়নি। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি হোক। পূর্ত, ক্ষুদ্র সেচ, সেচ, কৃষি, পঞ্চায়েত, উদ্যানপালন দফতরকে এক জায়গায় করে তাদের লেবারের টাকার একাংশ নিয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ফান্ড করে, জব-কার্ডধারীদের (যাঁরা একশো দিনের কাজ করেন) দিতে পারব।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রতিশ্রুতির পরেও বহু শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি না পাওয়ার বিষয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের অভিমত, রাজ্যের বহু মানুষ একশো দিনের কাজে যুক্ত। দীর্ঘদিন কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধ থাকায় তাঁরা বিপদে পড়েছেন। কারণ, ওই প্রকল্পে অদক্ষ শ্রমিকদের মজুরির পুরোটাই দিত কেন্দ্র। অর্ধদক্ষ শ্রমিকদের মজুরিতে রাজ্যের অংশীদারি ২৫% এবং দক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা ৪০%। প্রকল্পের বরাদ্দ কেন্দ্র ফের চালু করলে, পরিস্থিতি আগের জায়গায় ফিরে যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy