Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চার্জশিটে ‘রাজনীতি’ দেখছেন হরকাবাহাদুর

মদন তামাঙ্গ হত্যাকাণ্ডে মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ-সহ মোর্চার শীর্ষ নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট দেওয়ার পরেই পাহাড় ও সমতলে আলোড়ন সষ্টি হয়েছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শঙ্কিত পর্যটন মহলও। অনেকেই এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখলেও একাংশ আবার এখনই অতটা আক্রমণাত্মক না হয়ে ঘটনার গতিপ্রকৃতির দিক নজর রাখতে চাইছেন।

তখনও জানা যায়নি মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিট দেওয়ার কথা। শুক্রবার দুপুরে দার্জিলিঙে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গ-সহ অন্য প্রতিনিধিরা। ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।

তখনও জানা যায়নি মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিট দেওয়ার কথা। শুক্রবার দুপুরে দার্জিলিঙে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গ-সহ অন্য প্রতিনিধিরা। ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।

অনির্বাণ রায় ও সংগ্রাম সিংহ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

মদন তামাঙ্গ হত্যাকাণ্ডে মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ-সহ মোর্চার শীর্ষ নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট দেওয়ার পরেই পাহাড় ও সমতলে আলোড়ন সষ্টি হয়েছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শঙ্কিত পর্যটন মহলও। অনেকেই এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখলেও একাংশ আবার এখনই অতটা আক্রমণাত্মক না হয়ে ঘটনার গতিপ্রকৃতির দিক নজর রাখতে চাইছেন। রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ সিবিআইয়ের আইনের পথে যাওয়ার ব্যাপারটিকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাইছেন। অন্য একটা পক্ষ অবশ্য এর পিছনে রাজনীতি দেখছে। মোর্চার অন্য নেতারা আপাতত মুখে কুলুপ আঁটলেও চার্জশিটে নাম থাকা মোর্চার বিধায়ক তথা প্রচার সচিব হরকা বাহাদুর ছেত্রীর অভিয়োগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তাঁদের নামে এই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের দাবি, ‘‘সবে চার্জশিট হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হোক। রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অনেক চার্জশিটই দেওয়া হয়। তবে সিবিআই তদন্ত শেষ করুক। আমরা চাই মদন তামাঙ্গ হত্যাকাণ্ডে আসল অপরাধী সাজা পাক।’’ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘মোদী-মমতা যে কাছাকাছি রয়েছেন, তা আমরা আগেই বলেছিলাম। এত দিন নাটক অভিনীত হচ্ছিল। ওঁরা একে অপরকে সাহায্য করে আসছে। মানুষ এ বার বুঝবে।’’

এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু আইনের পথেই সিবিআই যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এটা তো আইনি পথেই তদন্ত হচ্ছে। সেখানে অভিযুক্তপক্ষ কী করবে, সেটা তাঁদের বিষয়।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘মোদী-মমতা সখ্যতার সঙ্গে কোনও ভাবেই সিবিআইয়ের কাজ যুক্ত নয়। পুরোটাই একটা স্বশাসিত সংস্থা। তা হলে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে তৃণমূলের অ্যাকাউন্ট নিয়ে সিবিআই তদন্ত করত না। বর্তমান সরকারের আমলে সিবিআই নিজের মতো কাজ করছে। কংগ্রেসের আমলেই বরং সিবিআই রাজনৈতিক অস্ত্র ছিল। বিভিন্ন তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে আমরা তা দেখেছি।’’

রাজনৈতিক টানাপড়েন যে রয়েছে, তা মোর্চা নেতারাও স্বীকার করছেন। হরকাবাহাদুর যেমন বলেছেন, ‘‘আমি এ সবের সঙ্গে যুক্ত নই। তবে, এর পিছনে যে রাজনীতি রয়েছে তা পরিষ্কার। ‘পাহাড়’কে চাপে রাখতেই হয়তো অনেক কিছু হচ্ছে।’’ মোর্চা নেতাদের অনেকেই এমন ভাবে রাজনীতির প্রসঙ্গেও এ দিন টেনে এনেছেন। তাঁদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের পর পাহাড়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। দিল্লি বা কলকাতার দলগুলিকে পাহাড়ের ক্ষেত্রে সব সময়ই স্থানীয় দলের উপর ভোটের জন্য নির্ভর করতে হয়েছে। তা এক সময় জিএনএলএফ, এখন মোর্চা। ‘‘পাহাড়ের দাবিদাওয়া নিয়ে নেতারা সরব হলেও তা দমিয়ে দিতে নানা প্রশাসনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। মদন তামাঙ্গের খুনের মামলার সিবিআই-র এই চার্জশিট এর ব্যতিক্রম নয় বলেই আমাদের মনে হচ্ছে।’’—মন্তব্য এক মোর্চা নেতার।

পাহাড় হোক বা সমতল, তৃণমূল নেতারাও এ বিষয়ে মন্তব্য করার আগে চূড়ান্ত সাবধানী। এখনই মন্তব্য করার পথে পা বাড়াননি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন। এর বেশি কিছু বলতে চাননি। পাহাড় তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিনি শর্মা বলেন, ‘‘এটা মানুষই বিচার করবে। যা হয়েছিল তা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গণতন্ত্রের উপরে আঘাত বলে আমি মনে করছি। কেউ তার সঙ্গে জড়িত হলে আইনি পথেই তাদের শাস্তি হবে। এর সঙ্গে রাজনীতি রয়েছে কিনা, তা বলার সময় এখনও আসেনি।’’ পাহাড়ের অপর এক তৃণমূল নেতা রাজেন মুখিয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন।

মোর্চার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়েই এক সময়ে আদিবাসী বিকাশ পরিষদে ভাঙন ধরেছিল। সম্প্রতি বেশ কয়েকবার ডুয়ার্সে গিয়ে সভাও করেছেন মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। আদিবাসী রাজ্য সভাপতি তেজকুমার টোপ্পো এ দিন বলেন, ‘‘আইনি পথেই বিচার চলুক। সেটাই কাম্য। এ ক্ষেত্রে যেন নিরপেক্ষতার অভাব না হয়।’’

আশঙ্কার মেঘ রয়েছে পর্যটন মহলেও। কারণ, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পাহাড়, ডুয়ার্সের পর্যটনের ভরা মরসুম হিসাবে চিহ্নিত। হালকা হিমেল হাওয়া, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আবার রোদ ঝলমলে ম্যাল বা টাইগার হিলের কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যটকদের বরাবরই আকর্ষণ করে। তার পরে স্কুল কলেজের ছুটি পড়ে যাওয়ায় পর্যটকদের ঢল আরও বাড়ে। বর্তমানে পাহাড়-সমতল মিলিয়ে দেশ-বিদেশের হাজার-হাজার পর্যটক রয়েছে। প্রায় ২০০৭ সালে মোর্চার উত্থানের পর থেকে ২০১১ সাল পাহাড়ের নাম শুনলেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন, অনেকেই। এমনকী, এই এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীদের অনেকেই ব্যবসা তুলে দেওয়ার মুখে এসেও দাঁড়িয়েছিলেন। ২০১৩ সালে এক দফায় ‘ঘর বৈঠক জনতা’র পর আপাতত দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড় শান্ত। আন্দোলন যা হচ্ছে, সবই দিল্লিতে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নতুন করে কোনও পরিস্থিতি তৈরি হলে তা ফের দার্জিলিঙের জন্য ভাল হবে না বলে মনে করছেন পর্যটন মহল। পাহাড়ের অনেকে যে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন তা সামলানো দুষ্কর হবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন মহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE