ময়দানে বৃষ্টি। বুধবার দুপুরে দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
সীমাহীন পিপাসা তো আছেই। পটভূমিও তৈরি ছিল। ভরদুপুরে ধেয়ে এসে সমস্যার চেয়ে স্বস্তিই বেশি দিল কালবৈশাখী।
বসন্তের প্রায় শুরু থেকেই দাপট দেখিয়ে চলেছে দহন। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধরিত্রীর তৃষ্ণা। মার্চ-এপ্রিলে কালবৈশাখী কৃপণতা করায় স্বস্তি ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছিল। এর মধ্যেই এল জলীয় বাষ্প। সদয় হল কালবৈশাখীও। সব মিলিয়ে পটভূমি প্রস্তুত। বুধবার দুপুরে ঝড়ের হঠাৎ হানা আর বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি দিল কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গকে। তাপমাত্রা নেমে গেল অনেকটাই।
তবে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে কলকাতা, সল্টলেক এবং বিভিন্ন জেলায়। সিউড়িতে বালি-বোঝাই ট্রাক্টরে গাছ ভেঙে পড়ায় শেখ রাজু (২৪) নামে এক যুবক আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। জেলায় জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ি, গাড়ি, রাস্তার হোর্ডিং, মোবাইলের টাওয়ার। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, মুম্বই থেকে আসা ইন্ডিগোর একটি বিমান নামতে না-পেরে রাঁচি চলে যায়। পরে ফিরে আসে। সল্টলেকে গাছ চাপা পড়েও বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন এক ফল বিক্রেতা। ঝড়ে তাঁর ঝুড়িভর্তি আমও রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল। অনেকে যখন তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত, সেই সুযোগে ছড়িয়ে পড়া আম কুড়িয়ে সটকে পড়েন কেউ কেউ।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর বলছে, এ দিনের ঝড়বৃষ্টির পরেও জলীয় বাষ্পের ভাঁড়ার ফুরোয়নি। তাই আজ, বৃহস্পতিবারেও কালবৈশাখীর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
উত্তরপ্রদেশ থেকে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ত্রিপুরা পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। সাগর থেকে হুহু করে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। ‘‘সেই বাড়তি বাষ্পই ঝড়বৃষ্টির রসদ,’’ বলছেন আবহবিদেরা। তাঁরা জানান, সকাল থেকে তাপমাত্রা মাথাচাড়া দিতেই সেই বাষ্প গরম হয়ে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে ওঠে এবং ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করে। সেই মেঘই বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি ও কলকাতায় ঝড়বৃষ্টি নামায়।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানী সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এ দিন দুপুরে আলিপুরে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার। দমদমে ঘণ্টায় ৭২। ‘‘বৃহস্পতিবারেও দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে,’’ পূর্বাভাস ওই আবহকর্তার।
রে়ডার-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা বলছেন, সকাল থেকেই রোদের তেজ বেশি থাকায় গরম মাথাচাড়া দিয়েছিল। তার ফলে বেলা ১১টা নাগাদ ঝাড়খণ্ডের লাগোয়া পশ্চিমাঞ্চলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়। সেটাই বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমানের উপর দিয়ে বয়ে এসেছে কলকাতায়।
ইডেন, ধর্মতলা ও হেস্টিংস এলাকায় অনেক গাছ ভেঙে পড়ে। সেক্টর ফাইভে গাছ চাপা পড়ে মহেন্দ্র যাদব নামে এক ফুচকাওয়ালা জখম হন। পিএনবি মোড়ে একটি গাছ ভেঙে পড়ে একটি খালি গা়ড়ির উপরে। নিকো পার্ক, মিডল্যান্ড পার্ক, করুণাময়ী, কেষ্টপুর, আমুল আইল্যান্ডে অন্তত ১৬টি গাছ ভেঙেছে। গাছ ভেঙেছে পুরভবনের ভিতরেও। কেষ্টপুরের কাছে ভেঙে পড়েছে একটি মোবাইলের টাওয়ার। ভেঙে পড়া গাছের জন্য সল্টলেকে কিছু ক্ষণ যান চলাচল ব্যাহত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy