আজ, শুক্রবার নতুন এক লড়াই দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা হাইকোর্ট।
এ দুই আইনজীবীর মধ্যে আইনি লড়াই নয়। হোলির দিনে হাইকোর্টে এ লড়াই ছুটিপন্থীদের সঙ্গে কাজপন্থীদের। বার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের।
শুক্রবার হোলির দিনে ছুটি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জন্য রাজ্য সরকারি কর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত টানা চার দিন টানা ছুটি উপভোগ করছেন। রাজ্য সরকারি কর্মীরা যদি ছুটি পেতে পারেন, তা হলে কলকাতা হাইকোর্ট কেন শুক্রবার খোলা থাকবে সেই প্রশ্ন তুলে বার অ্যাসোসিয়েশন ওই দিন ছুটি চেয়েছিল। কিন্তু সেই আব্দার পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তবে তাতে পিছু হটছে না বার অ্যাসোসিয়েশন। তারা জানিয়ে দিয়েছে, শুক্রবার আইনজীবীরা কাজে যোগ দেবেন না।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, শুক্রবার হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি-সহ সব বিচারপতি তাঁদের এজলাসে বসবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনও আইনজীবী চাইলে মামলা লড়তে পারবেন। বার অ্যাসোসিয়েশনের একটি সূত্রের দাবি, হাইকোর্টের অধিকাংশ আইনজীবীই শুক্রবার সওয়ালে অংশ নেবেন না। তবে প্রবীণ আইনজীবীদের একাংশ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বার অ্যাসোসিয়েশনের এই কাজে যোগ না দেওয়ার প্রস্তাব মানেন না। তাই তাঁরা শুক্রবার অন্য দিনের মতোই এজলাসে আসবেন এবং সওয়াল করবেন।
সরকারি ছুটিতে হাইকোর্ট ছুটি দেয়নি, এমন নজির আগেও রয়েছে। প্রবীণ আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের অনেকেই বলছেন, যুক্তফ্রন্ট আমলে এক মন্ত্রীর মৃত্যুতে সরকার ছুটি দিলেও হাইকোর্ট ছুটি ঘোষণা করেনি। তা নিয়ে সরকার এবং সরকারপন্থী আইনজীবীরা রুষ্ট হলেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বরং সেই সময়ের অনেক আইনজীবী পরবর্তী সময়ে বলছেন, হাইকোর্টের সিদ্ধান্তই ঠিক ছিল।
বার অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বম্বে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বলেন, “আইনজীবীরা স্বাধীন পেশায় রয়েছেন। তাই তাঁরা ইচ্ছা করলে ছুটি নিতে পারেন। কিন্তু তার জন্য আদালত বন্ধ থাকবে, এর কোনও যৌক্তিকতা নেই।” দু’টি ছুটির দিনের মাঝে একটি কাজের দিন থাকলে সেটিকেও ছুটি হিসেবে গণ্য করতে হবে, এমনটাও মেনে নেওয়া যায় না বলে তিনি জানান।
হঠাৎ ছুটি প্রবণতার বিরোধী আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “আদালত আইনজীবী কিংবা বিচারপতিদের জন্য শুধু নয়, বিচারপ্রার্থীদের জন্যও। এ ভাবে হঠাৎ ছুটি নিলে বিচারের কাজ ব্যাহত হয়।” বিকাশবাবুর মতে, এই ধরনের ছুটি ঘোষণার অধিকার আইনজীবী সংগঠনের নেই। তাঁর কথায়, “হঠাৎ ছুটি ঘোষণার প্রবণতা বর্তমান রাজ্য সরকারের রয়েছে। কিন্তু এ ভাবে তো আদালত চলতে পারে না!”
আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের অনেকেই বলছেন, ইদানীং আইনজীবীদের একাংশ তাঁদের সিদ্ধান্ত আদালতের উপরে চাপিয়ে দিতে চাইছেন। নিম্ন আদালতের একাধিক ঘটনায় তা ফুটে উঠেছে। হাইকোর্টের ক্ষেত্রেও আইনজীবীদের কেউ কেউ তেমন মনোভাব কেন নিচ্ছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছেন হাইকোর্টগুলিকে বছরে ন্যূনতম ২১০ দিন কাজ করতে হবে বলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে। সেই মতো বছরের শুরুতেই হাইকোর্টের কর্মতালিকা তৈরি হয়। সেই তালিকার নড়চড় হবে না। বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবির প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি একটি বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শীতের ছুটি কিংবা গ্রীষ্মের ছুটির মধ্যে কোনও একটি দিন যদি তারা কাজ করেন তা হলে শুক্রবারের ছুটির প্রস্তাব তিনি ভেবে দেখবেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব বার অ্যাসোসিয়েশন মানতে না চাওয়ায় এই লড়াইয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রবীণ আইনজীবীদের একাংশ মনে করেন, প্রধান বিচারপতির শর্ত মেনে গ্রীষ্ম বা শীতের ছুটির একটি দিন কাজ করে শুক্রবার ছুটি নেওয়া যেত। তাতে আইনজীবীদের ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বল হতো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy