শ্রাবণে ছিল অতিবৃষ্টি, আশ্বিনে শুরু হয়ে গিয়েছে শিশির পড়া। দুইয়ে মিলে ফলন কমায় দাম বাড়ছে পদ্মের। বৃহস্পতিবার এক একটি পদ্ম বিক্রি হয়েছে ৮-১০ টাকা করে। অষ্টমীর রাতে যা দ্বিগুণও হয়ে যেতে পারে। প্রতি বছর এই রাজ্যে নবমীর পুজোর জন্য পদ্ম লাগে প্রায় এক কোটি। শুধু এই রাজ্য তার জোগান দিতে পারে না। ওড়িশা থেকেও পদ্ম আমদানি করতে হয়। তবে বাংলার পদ্মের তুলনায় ওড়িশার পদ্মের আকার ছোট, রঙও সাদা। তবু তাতেই সন্তুষ্ট হতে হয়। পুজোয় ১০৮টি পদ্ম যে দিতেই হবে।
এ রাজ্যে পদ্ম ফলে মূলত হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং বীরভূমে। এর মধ্যে হাওড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে পদ্মচাষ হয় রেলের নয়ানজুলিতে। বীরভূমে এই চাষ হয় জলাশয়ে। এ বছর পুজো হচ্ছে সামান্য দেরিতে। এর মধ্যে শিশির পড়তে শুরু করেছে। চাষিদের বক্তব্য, শিশির পড়লে পদ্মের ফলন কমে যায়। তাঁরা জানান, পদ্মের মরসুম হল মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু এ বছর পুজো গড়িয়ে গিয়েছে অক্টোবরের প্রায় শেষে।
এমনিতে পুজোর আগে পদ্মের দাম বাড়তে থাকে। অষ্টমীর রাতে তার দাম হয় গড়ে ১০ টাকা। কিন্তু এ বছর পুজোর আগেই এই দাম হয়ে গিয়েছে। ফলে অষ্টমীর রাতে তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরাই। পুজোর উদ্যোক্তারাও বিষয়টি জানেন। তাঁদের বক্তব্য, এমন পরিস্থিতি প্রায়ই হয় যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অন্য কোনও কারণে ফলন মার খায়। সেক্ষেত্রে ফলন যখন বেশি হয়, তখন পদ্ম হিমঘরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। এ বিষয়ে চাষিদের বক্তব্য, তাঁরাও চান ফুল সংরক্ষণ করতে। পাঁশকুড়ায় বছর দশেক আগে শুধুমাত্র ফুল সংরক্ষণ করে রাখার জন্য উদ্যানপালন দফতর একটি হিমঘর তৈরি করেছিল। কিন্তু সেটি এখন বন্ধ। বড় ব্যবসায়ীরা কিছু পদ্ম চাষিদের কাছ থেকে আগে থেকে কিনে তা বহুমুখী হিমঘরে রেখে দেন। কিন্তু তা খরচসাপেক্ষ হওয়ায় ছোট চাষিরা এর সুবিধা পান না। তাছাড়া বহুমুখী হিমঘরে সব্জির সঙ্গে পদ্ম রাখার ফলে ফুলের মান নষ্ট হয়ে যায়।
চাষিদের আশা, বাগনানে ফুল বাজার এবং তার সংলগ্ন হিমঘর তৈরি করেছে রাজ্য কৃষি বিপনন দফতর। হিমঘরটি চালু হলে সমস্যা অনেকটা মিটতে পারা। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের দাবি, অবিলম্বে হিমঘরটি চালু করতে হবে। কৃষি বিপনন দফতর সূত্রের খবর, হিমঘরটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যৌথ উদ্যোগে চালানোর পরিকল্পন হচ্ছে। দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায় আশ্বাস দিচ্ছেন, শীঘ্রই হিমঘরটি চালু করা হবে। তবে এ বছর পুজোর পদ্ম জোগানো হল না হিমঘরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy