মেলা, সাহিত্যের ইতিহাস আর সিনেমা— এই তিনের নীরব সাক্ষী ঐতিহ্যের তিন দেবত্র সম্পত্তির।
‘বনে এলি গেলি’— এই কথা থেকে ‘বাওয়ালি’। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাওয়ালি রাজার হাজার হাজার জমি নিবেদিত হয়েছিল দেবত্র হিসাবে। তারাতলার মোড় ছুঁয়ে জিঞ্জিরাপোল ছুঁয়ে বজবজ ট্রাঙ্ক রোড-মহাত্মা গাঁধী রোড-চিড়িয়া মোড়-নিশ্চিন্দিপুর-গোবরঝুড়ি হয়ে বাওয়ালির মোড়। এর পর বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে প্রাসাদ আর একগুচ্ছ মন্দির। এর বেশির ভাগটাই দেবত্র। গিয়ে দেখা গেল, বেসরকারি ছোঁয়ায় প্রাসাদের ভোল বদলাচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ অবহেলায় কিছু মন্দিরের হাল খুব খারাপ। গোবিন্দজী এবং লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির, দ্বাদশ শিবমন্দির— প্রতিটিতে প্রাচীন স্থাপত্যের ছাপ। পরিবারের প্রবীণ সদস্য অরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘যতটা সম্ভব দেবস্থান বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’’ পালাপার্বণে কেবল ক’দিনের জন্য জেগে ওঠে বাওয়ালির এই রাজবাড়ির মন্দির।
দক্ষিণ কলকাতায় ৮০ টালিগঞ্জ রোডে রয়েছে বাওয়ালিদের বড় রাসমন্দির, ৫৫ টালিগঞ্জ রোডে ছোট রাসমন্দির। দুই বাড়িতে অবশ্য প্রতি বছর পুজো হয়। প্রথমটিতে কার্তিক পুজো, দ্বিতীয়টিতে চৈত্র পুজো হয়। তিন দিন ধরে মেলা বসে। বাংলা ১২২৩ সালের ফাল্গুন মাসে কৃষ্ণ একাদশীর দিন টালিগঞ্জে বর্তমান দ্বাদশ মন্দিরের মাঝখানে সাজানো চিতায় বংশের এক পূর্বপুরুষ মানিক মণ্ডলের স্ত্রী সহমৃতা হয়েছিলেন। সতী মুক্তকেশীর শাখা-সিঁদুর এখনও রয়েছে টালিগঞ্জে বাওয়ালিদের বাড়িতে। আদিগঙ্গার ধারে এককালে গৃহদেবতার নামে তৈরি হয়েছিল গঙ্গাগোবিন্দের ঘাট, গোপালজীর ঘাট। স্থানীয় হাজার রকম লোক এই সব ঘাট ব্যবহার করছে।