Advertisement
০১ মে ২০২৪
SSC recruitment scam

৯ মাসে মোট কত চাকরি গেল স্কুলে? কোর্টের রায়ে মে মাসে শুরু মন্ত্রীকন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে দিয়ে

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে একের পর এক শুনানিতে শিক্ষক-অশিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। তার মধ্যে যেমন রয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক, তেমনই আছেন নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীও।

How many teachers and staffs lost their job after Calcutta High Court’s direction

শিক্ষক-অশিক্ষক মিলিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে কয়েক হাজারের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ২০:১৪
Share: Save:

শুরুটা ২০২২ সালের ২০ মে। সেটাও আবার রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়ে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ ছিল, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক হিসাবে অঙ্কিতা যত বেতন পেয়েছেন, তা দু’দফায় ফেরত দিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি আর শিক্ষিকা হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে পারবেন না। পরবর্তীকালে একের পর এক শুনানিতে শিক্ষক-অশিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। তার মধ্যে যেমন রয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক, তেমনই নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। সব মিলিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশে এ পর্যন্ত চাকরি খোয়ালেন মোট ৪,৭৮৪ জন।

২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশে এসএসসির গ্রুপ ডি-র ১,৯১১ জন কর্মীর চাকরি যায়। রাজ্যের ১,৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি তাঁদের ৩ সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরতের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে অবশ্য চাকরি হারানো গ্রুপ ডি কর্মীরা সওয়াল করেন যে, তাঁরা কাজ করেছেন। তাই তাঁদের বেতন কেন ফেরত নেওয়া হবে। ওই সওয়ালের পর তাঁদের বেতন ফেরতের নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ১,৯১১ জনের জায়গায় ওয়েটিং লিস্ট থেকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এসএসসিকে। ওয়েটিং লিস্ট থেকে যোগ্য প্রার্থীদের নাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। ৬ মার্চের মধ্যে নথি যাচাই করে সুপারিশপত্র দেওয়ার কাজ শেষ করার চেষ্টা করতে হবে।

গ্রুপ ডির পরে নবম-দশম। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর নির্দেশে চাকরি যায় ৬১৮ ‘অযোগ্য’ শিক্ষকের। পরে আরও ১৫৭ জন শিক্ষক চাকরি হারান। এঁরা সবাই নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক।

এর পর ১০ মার্চ, শুক্রবার গ্রুপ সি’তে কর্মরত ৮৪২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নির্দেশে আদালত জানায় ওই ৮৪২ জন আর স্কুলে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাঁদের বেতন ফেরত দিতে হবে কি না সেই বিষয়ে আদালত পরে সিদ্ধান্ত নেবে।

এর মধ্যে বিচারপতি বসুর এজলাসেও চাকরি বাতিলের মামলা ওঠে। তবে তাঁর রায়ে বাতিল নিয়ে সরাসরি কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বিচারপতি বসু এসএসসিকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে পরামর্শ দেন। এসএসসি তাদের রুল ১৭ অনুযায়ী ৬১৮ জনের তালিকা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই প্রকাশ করে। এর পর গত ১ মার্চ ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে ৬১৮ জনের চাকরি যায়।

এ ছাড়াও হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত বাগ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে চাকরি যায় ৯৯০ জন কর্মীর। গত বছরের মে-জুনে গ্রুপ ডি-র ৬০৯ এবং গ্রুপ সি-র ৩৮১ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের নভেম্বরে এসএসসি পরীক্ষার দ্বিতীয় মেধাতালিকায় অঙ্কিতার নাম ওঠে। অভিযোগ, প্রথম মেধাতালিকায় প্রথম ২০তে নাম না থাকা অঙ্কিতাকে দ্বিতীয় তালিকার একেবারে প্রথমে নিয়ে আসা হয় ‘অবৈধ’ ভাবে। ওই মেধাতালিকার ২০ নম্বরে যে এসএসসি পরীক্ষার্থীর নাম ছিল, তাঁর থেকেও ১৬ নম্বর কম পেয়েছিলেন অঙ্কিতা। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬১। যেখানে ২০ নম্বরে থাকা পরীক্ষার্থী ববিতার নম্বর ছিল ৭৭। অঙ্কিতার নাম মেধাতালিকায় ঢোকানোয় ববিতা চাকরির সুযোগ হারান। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই নির্দেশে শোরগোল ওঠে। তার পর দফায় দফায় চাকরি যাচ্ছে ‘অযোগ্য’ শিক্ষক এবং অশিক্ষকদের।

এ নিয়ে বাগ কমিটির অন্যতম সদস্য আইনজীবী অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা যখন তদন্ত শুরু করি, তখনই আন্দাজ করেছিলাম ওএমআর শিটে কারচুপি হয়েছে। কিন্তু সেই সময় নাইসা (গাজিয়াবাদের সংস্থা) জানায় সব ওএমআর শিট নষ্ট হয়েছে। পরে অবশ্য তা পাওয়া যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE