কলিঙ্গ হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায়, এই ছবিই কি ধরিয়ে দিল?
পুলিশ ট্র্যাক করতে পারে। সেই কারণে দীর্ঘদিন মোবাইল ব্যবহার করছিলেন না অলীক চক্রবর্তী। মাছিভাঙা থেকে যাওয়ার সময়ও কোনও মোবাইল ছিল না তাঁর সঙ্গে। তা হলে নেতার গতিবিধির খবর পেল কী করে পুলিশ? এটাই এখন সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ ভাঙড়ের আন্দোলনকারীদের অন্দরে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয় গত ১৭ মে, শুক্রবার। দু’দিন বাদে রবিবারেই চিকিত্সার জন্য গ্রাম ছাড়েন অলীক। অলীকের এক ঘনিষ্ঠ আন্দোলনকারী বলেন, “সেই রবিবার (২০ মে) ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। সন্ধ্যা বেলায় সেই ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই গ্রাম ছাড়েন অলীক। ঝড়-বৃষ্টির কারণে রাস্তায় লোকজন ছিল না। হাতে গোনা দু’জন বা তিনজন খুব ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছাড়া কেউ জানত না যে অলীক গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছেন।”
সেই রাতে, লোকজনের নজর এড়াতে খালপাড়ের রাস্তা দিয়ে বাইকে করে এই নেতাকে পৌঁছে দেওয়া হয় নিরাপদ জায়গায়। কিন্তু তার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের কাছে খবর পৌঁছে যায় যে অলীক গ্রামে নেই। মাছিভাঙা বা খামারআইটের দু-তিনটি বাড়িতে পালা করে থাকতেন তিনি। কমিটির বাকি নেতাদের এখন এটাই মাথা ব্যথা— ঠিক কোন পথে কার মাধ্যমে অলীকের গ্রাম ছাড়ার খবর গেল পুলিশের কাছে!
আরও পড়ুন
সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ-আগুন-অবরোধে উত্তপ্ত ভাঙড়
অলীক গ্রামে নেই, এই তথ্যটাই পুলিশকে মোটামুটি নিশ্চিত করে দেয় যে— তিনি চিকিৎসার জন্যই কোথাও গিয়েছেন। এর আগে মার্চ মাসেও অলীক চিকিৎসার জন্য লুকিয়ে ভাঙড়ের বাইরে গিয়েছিলেন। সেই খবর পুলিশ দেরিতে পেলেও, তাঁরা খোঁজ খবর করে জেনে নিয়েছিলেন হায়দরাবাদের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছিলেন তিনি। প্রথমেই সেখানে খোঁজ খবর নেয় পুলিশ। কিন্তু অলীকের হদিশ মেলেনি। তার পর শুরু হয় হায়দরাবাদের রাস্তায় যত বড় শহর আছে সব জায়গায় খোঁজখবর। ভুবনেশ্বরের সম্ভাবনা বাড়ে, যখন গোয়েন্দাদের মাথায় আসে ওড়িশাতে অলীকের দলের যথেষ্ট সংগঠন আছে। সেই সূত্র ধরেই শুরু হয় খোঁজ খবর।
আরও পড়ুন
বিভাজনের সমাজে কে ধরবে জঙ্গলমহলে ‘ছাতা’?
কলিঙ্গ হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীদের সন্দেহ হয় সেখানেই চিকিৎসা করাচ্ছেন অলীক। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতালের আউটডোরে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে অলীকের ছবি। চিকিৎসার কাগজ নিয়ে এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে যাচ্ছেন। তার পরই শুরু হয়ে যায় ধরার কসরৎ। সাদা পোশাকে বাইরের চায়ের দোকানে অপেক্ষা করছিল পুলিশ। অলীক সেই দোকানেই চা খেতে ঢুকলে পুলিশ আর দেরি করেনি। যদিও পুলিশের দাবি, গত ১১ দিনে কয়েকবার ঘনিষ্ঠদের বিভিন্ন ব্যক্তির ফোন থেকে ফোন করেছিলেন অলীক। আর সেখান থেকেই পুলিশের নিশ্চিত হয় যে তিনি ভুবনেশ্বরেই আছেন। কিন্তু অলীক ঘনিষ্ঠদের দাবি, অলীক যথেষ্ঠ সাবধানী। এই ভুল সে করবে না। পুলিশের কাছে খবর গিয়েছে নিজেদের মধ্যে থেকেই। সেই ব্যক্তি কে, এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন কমিটির কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy