Advertisement
E-Paper

১০০ কোটি উঠবে কী করে? কে কত পাবেন? বেহালার বাড়িতে বসে অঙ্ক বুঝিয়েছিলেন ‘কাকু’, বলছে কথাবার্তার প্রতিলিপিই

কুন্তল, শান্তনুদের সঙ্গে সুজয়কৃষ্ণের ৭২.৫৯ মিনিটের কথোপকথনের সিবিআইকৃত প্রতিলিপি হাতে পেয়েছে আনন্দবাজার ডট কম। কী ভাবে অনায়াসে ১০০ কোটি টাকা তোলা যায়, তার হিসাব বুঝিয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ।

Sujay Krishna Bhadra planned to collect 100 crore rupees

বেহালার বাড়িতে বসে ১০০ কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫ ১৭:৪৬
Share
Save

১০০ কোটি টাকা তুলে তা কাদের মধ্যে কী ভাবে ভাগ করে দেওয়া হবে, বেহালার বাড়িতে বসে হুগলির তৃণমূল নেতা (অধুনা বহিষ্কৃত) শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষকে সেই অঙ্ক বুঝিয়েছিলেন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ২০১৭ সালে কুন্তল, শান্তনুদের সঙ্গে সুজয়কৃষ্ণের ৭২.৫৯ মিনিটের কথোপকথনের সিবিআইকৃত প্রতিলিপি হাতে পেয়েছে আনন্দবাজার ডট কম। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কী ভাবে ১০০ কোটি টাকা তোলা যায়, তার পরে কী ভাবে সেই টাকা কাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে, তা নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছিল। কথোপকথনে ওই টাকা ভাগাভাগির প্রসঙ্গে এসেছে মানিক ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও।

অডিয়োর মোট ২৩ পাতার সিবিআই-কৃত প্রতিলিপির ১১নম্বর পৃষ্ঠা।

অডিয়োর মোট ২৩ পাতার সিবিআই-কৃত প্রতিলিপির ১১নম্বর পৃষ্ঠা।

কথোপকথন অনুযায়ী, সাত থেকে আট হাজার শূন্যপদের খোঁজ সুজয়কৃষ্ণকে দিয়েছিলেন কুন্তল। ওই শূন্যপদগুলিতে নিয়োগের মাধ্যমে পার্থ ২০০ কোটি টাকা ‘কামাতে’ পারবেন বলে দাবি করেন সুজয়কৃষ্ণ। তবে পার্থের হাত থেকে ওই কাজের দায়িত্ব মানিকের হাতে দিয়ে দিলে তা আরও নির্বিঘ্নে এগোবে বলে জানান কুন্তল। পার্থকে চুপ করিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

কী ভাবে টাকা তোলা হবে, সেই পরিকল্পনা করতে গিয়ে সুজয়কৃষ্ণ জানান, তিনি অনায়াসে এমন চাকরিপ্রার্থীদের জোগাড় করতে পারবেন, যাঁরা চাকরির জন্য কেউ ১০ লাখ, কেউ আট লাখ বা কেউ পাঁচ লাখ টাকা দিতে প্রস্তুত। কথাবার্তার প্রতিলিপি বলছে, ‘‘১০ লাখ টাকা দেবে, এমন ১০টা কেস এখনই এনে দেব।’’ প্রাথমিক ভাবে দু’হাজার শূন্যপদের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা করে তুলে ১০০ কোটি টাকা জোগাড়ের পরিকল্পনা করেন সুজয়কৃষ্ণ। জানান, সেই টাকা থেকে অভিষেক এবং মানিককে ২০ কোটি টাকা করে এবং পার্থকে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। যাঁরা এই সংক্রান্ত কাজ করেছেন, বাকি ৪০ কোটি টাকা তাঁদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।

টাকা তোলা এবং তার ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে শান্তনু, কুন্তলদের যে কথা হয়েছিল, তা অডিয়োর সিবিআইকৃত প্রতিলিপির ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় রয়েছে। কথোপকথনের সেই অংশ তুলে দেওয়া হল—

সুজয়কৃষ্ণ: কুন্তল আমাকে বলছিল, কাকু, সাত-আট হাজার লোক নিতে পারে। এই সাত-আট হাজার লোক তারা স্মুদলি (নির্বিঘ্নে) নিক। পার্থ আরও ২০০ কোটি কামাক।

শান্তনু: নিতে পারে মানে নেওয়ার প্রভিশন (সুযোগ অর্থাৎ, শূন্যপদ) আছে।

কুন্তল: এটা একটু পার্থ চ্যাটার্জির হাত থেকে মানিক ভট্টাচার্যের হাতে দিন। কাজটা খুব নির্বিঘ্নে হবে।

সুজয়কৃষ্ণ: আরে ভাই, আমাকে তো পার্থকে আশ্বাস দিতে হবে, যে আপনাকে ৫০ কোটি টাকা দেব।

শান্তনু: হ্যাঁ, সে আশ্বাস দিন না, অসুবিধার কী আছে?

সুজয়কৃষ্ণ: আমি তো সেই জন্য তোমাকে বার বার বলছি।

কুন্তল: সে আপনি দিন না। যে কোনও ব্যাপারে আপনি নাক গলাবেন না, আপনি চুপচাপ থাকুন, কাজটা হয়ে যাক আপনি এই টাকা পাবেন।

সুজয়কৃষ্ণ: সাত-আট হাজার আছে বলছে। আমি অনেক পারব না, ঠিক আছে? ১০ লাখ টাকা দেবে, এমন ১০টা কেস এখনই এনে দেব। আট লাখ দেবে এমন ২৫টা এনে দেব। ছ’লাখ দেবে, এমন ১০০-২০০ লোক এনে দেব। পাঁচ লাখ দেবে, এমন ১০০ জন এনে দেব। কথার কথা বলছি। তো তুমি যদি পাঁচ লাখ টাকা ধরো আর ২০০০ চাকরি ধরো, ১০০ কোটি টাকা উঠে যাবে। এর মধ্যে মানিক ভট্টাচার্য ২০ কোটি নিক। পার্থ চট্টোপাধ্যায় যা লোভী লোক, ২০-২৫ কোটি নিক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২০ কোটি দিয়ে দেব। আর বাকি ৪০ কোটি যারা কাজ করল, তারা ভাগ করে নিয়ে নেবে। কত হচ্ছে, না পার্থ অভিষেককে বলবে, না মানিক পার্থকে বলবে, না পার্থ মানিককে। কেউ কিছু বলবে না, ব্যস।

প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে সুজয়কৃষ্ণ, কুন্তল, শান্তনুদের গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সুজয়কৃষ্ণ অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে আপাতত বেহালার সেই বাড়িতেই রয়েছেন। জামিন পেয়ে গিয়েছেন কুন্তলও। শান্তনু এখনও জেল হেফাজতে। তিন জনের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করেছে সিবিআই। সেই নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। অডিয়োর সঙ্গে ওই কণ্ঠস্বরের নমুনা মিলিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা। এই অডিয়ো কথোপকথনে বার বার নাম এসেছে অভিষেকের। যদিও তাঁকে তলব করেনি সিবিআই। তাঁকে নিয়ে যে দাবিগুলি করা হয়েছে, তা-ও তদন্তসাপেক্ষ।

প্রসঙ্গত, সিবিআইয়ের তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিটে অভিষেকের নামোল্লেখের খবর প্রথম প্রকাশ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। তার পরেই অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসু বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, সিবিআই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর মক্কেলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার মরিয়া চেষ্টা করছে। অভিষেক নিজেও নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের সাংগঠনিক সভা থেকে ওই বিষয়ে সিবিআইকে পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন। ওই খবরের সূত্র ধরে তৃণমূলের সাংসদ বলেছিলেন, ‘‘চার্জশিটে দু’বার আমার নাম আছে। কিন্তু কোনও পরিচয় নেই। সিবিআই ভাববাচ্যে কথা বলছে কেন? এই অভিষেক কে?’’

Primary Recruitment Case Sujay Krishna Bhadra Kalighater Kaku CBI

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}