Advertisement
E-Paper

বাড়ি বাড়ি কার্তিক ফেলছে বৈদ্যবাটি পুরসভা, চাওয়া হচ্ছে টাকাও! কাউন্সিলরের কাণ্ডে অস্বস্তিতে তৃণমূল

কাউন্সিলর পৌষালী ভট্টাচার্য ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বৈদ্যবাটি পুরসভা অনুমোদিত কার্তিক ঠাকুর পড়ল শ্যামল মাইতির বাড়ি।’’ হাসির ইমোজি দিয়ে লেখেন, ‘‘সৌজন্যে— ১৯ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল পরিবার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪১
(বাঁ দিকে) ‘পুরসভা অনুমোদিত’ কার্তিক। (ডান দিকে) কাউন্সিলরের প্যাডে লেখা সেই চিঠি।

(বাঁ দিকে) ‘পুরসভা অনুমোদিত’ কার্তিক। (ডান দিকে) কাউন্সিলরের প্যাডে লেখা সেই চিঠি। ছবি: তৃণমূল কাউন্সিলর পৌষালী ভট্টাচার্যের ফেসবুক থেকে।

সকাল সকাল ঘরের দরজা খুলতেই অবাক বাড়ির কর্তা। সামনে বসানো কার্তিকের মূর্তি। ভেবেছিলেন পাড়ার ছেলেপুলেরা মশকরা করছেন। কিন্তু কার্তিক প্রতিমার সঙ্গে একটি কাগজ দেখে বিস্মিত হয়ে যান কর্তা। কারণ, কাগজটি বৈদ্যবাটি পুরসভার এক কাউন্সিলরের প্যাড। তাতে কাউন্সিলরের সইও রয়েছে। উপরে গৃহকর্তার উদ্দেশে লেখা হয়েছে, কার্তিকের জন্য কত টাকা খরচ হয়েছে এবং সেই টাকা কার কার হাতে দিতে হবে। বাড়ি বাড়ি কার্তিক ফেলছে পুরসভা, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল এলাকায়। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে তৃণমূল। বিজেপির কটাক্ষ, ‘‘আর একটি জায়গাই বাকি ছিল কাটমানি নেওয়ার। এ বার সেটাও পূরণ করে দিল তৃণমূল।’’ বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, এই কাজ করে হিন্দু ধর্মকে অপমান করেছে পুরসভা। অন্য দিকে, পুরসভার চেয়ারম্যান জানাচ্ছেন, কাউন্সিলর এমন কিছু করে থাকলে সেটা পুর কর্তৃপক্ষের অজান্তে করেছেন। পুরসভার তরফ থেকে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্যামল মাইতি বাড়িতে কার্তিক ফেলে যান এলাকার কয়েক জন। মূর্তির সঙ্গে একটি চিঠি রাখা ছিল। তাতে লেখা, ‘‘বাবা শ্যামল, অনেক কষ্টে নিজের বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পেলাম পার্টি অফিসের কাকু-কাকিমাদের সহযোগিতায়। আমি মেদিনীপুরে ঘোরাঘুরি করছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে দেখা হয়...’’ এর পর কয়েক জনের নাম লেখা হয়েছে কাউন্সিলরের প্যাডে। শ্যামলের উদ্দেশে বলা হয়েছে তাঁদের টাকাপয়সা দিতে। শেষের দিকে লেখা, ‘ইতি কার্তিক’ এবং প্যাডের পিছনে লেখা, ‘সব কিছুর উদ্যোগে পৌষালী আন্টি, পুরসভা অনুমোদিত’, সঙ্গে তৃণমূল কাউন্সিলরের নামাঙ্কিত স্ট্যাম্প।

তৃণমূল কাউন্সিলর পৌষালী ভট্টাচার্য কার্তিক ফেলার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘‘বৈদ্যবাটি পুরসভা অনুমোদিত কার্তিক ঠাকুর পড়ল শ্যামল মাইতির বাড়ি।’’ কয়েকটি হাসির ইমোজি দিয়ে লিখেছেন, ‘‘সৌজন্যে— ১৯ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেস পরিবার।’’ তার পরেই বিতর্ক তুঙ্গে। কী ভাবে পুরসভা কার্তিক পুজোর ‘অনুমোদন’ দিতে পারে এবং তার জন্য টাকা চাওয়া হয়, প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

যে চিঠি ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত।

যে চিঠি ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত। ছবি: তৃণমূল কাউন্সিলর পৌষালী ভট্টাচার্যের ফেসবুক থেকে।

বৈদ্যবাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পিন্টু মাহাতোর কানে এই খবর যেতেই তিনি কাউন্সিলরকে কড়া ধমক দিয়েছেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর। পিন্টু মেনে নিয়েছেন, কাজটা ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘কাউন্সিলরের প্যাড পুরসভার কাজে ব্যবহার করার জন্য। এই ভাবে ব্যক্তিগত কোনও কাজ বা নিছক মজা করার জন্যও ওই প্যাড ব্যবহার করা যায় না। যে কাউন্সিলর ওই কাজ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আগামিদিনে যাতে এমন কাজ আর না করেন, সে জন্য তাঁকে সতর্ক করা হবে।’’ এ নিয়ে কাউন্সিলর পৌষালী কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তবে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বিজেপি। পদ্মশিবিরের যুবমোর্চার মুখপাত্র হরি মিশ্র বলেন, ‘‘যে চিঠিটি পুরসভার প্যাডে লিখে পাঠানো হয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে কার্তিক ঠাকুরের জন্য ২০০০ টাকা দিতে হবে! তৃণমূল এমন জায়গায় গিয়েছে যে, তারা কার্তিক ঠাকুরকে হাতিয়ার করেও কাটমানি বাগানোর সুযোগ হাতছাড়া করছে না।’’ চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইন অবশ্য বিষয়টিকে এ ভাবে দেখতে নারাজ। তিনি জানাচ্ছেন, ভুল হয়েছে ঠিকই। তবে বিষয়টি মজা করার উদ্দেশ্যে কেউ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নিছকই বন্ধুদের মধ্যে মশকরা করতে গিয়ে এটা ঘটেছে। এর মধ্যে বিরোধীরা রাজনীতি খোঁজার চেষ্টা করছে। তবে এটাও ঠিক যে, পুরসভার প্যাড ব্যবহার করা উচিত হয়নি। সেই দিকে নজর দিতে হবে।’’

Baidyabati Municipality TMC BJP Kartik Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy