Advertisement
E-Paper

মৃতের দেহ লোপাটে অভিযুক্ত হাসপাতাল

মৃতদেহ লোপাটের অভিযোগ উঠল খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩৬
আসরফ আলি মিদ্যা

আসরফ আলি মিদ্যা

মাত্র কয়েক দিন আগেই কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ঘটেছিল ঘটনাটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক রোগীকে মৃত ঘোষণা করার পরে সেই রোগীই ওয়ার্ডের জানলা দিয়ে পরিবারের এক সদস্যকে হাত নেড়ে ডেকেছিলেন। এ বার এক করোনা রোগীকে মৃত ঘোষণা করার পরে পরিবারকে তাঁর দেহ দেখাতে না পারায় মৃতদেহ লোপাটের অভিযোগ উঠল খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই। হাওড়ার অন্যতম কোভিড হাসপাতাল বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছে।

যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ওই হাসপাতালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মর্গ নেই। সেই সঙ্গে মৃতের পরিবার প্রথমে দেহ নিতে চায়নি। তাই অন্য মৃতদেহের সঙ্গে কোভিড-বিধি মেনে দাহ করে দেওয়া হয়েছে ওই দেহটিকে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা, ৬৫ বছরের আসরফ আলি মিদ্যাকে বালিটিকুরি ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করান তাঁর ছেলে মোর্তাজা আলি মিদ্যা। মোর্তাজা জানান, শনিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয় যে, তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। খবর পাওয়ার পরে মৃতদেহ আনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সে সময়ে হাসপাতাল থেকে শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি রীতিমতো ‘হুমকি’র স্বরে ফোন করে অবিলম্বে মৃতদেহ নিয়ে যেতে বলেন বলে দাবি মোর্তাজার।

মোর্তাজা জানান, রাত হয়ে যাওয়ায় তাঁরা শনিবার দেহ আনতে হাসপাতালে যেতে পারেননি। পরের দিন, রবিবার তাঁরা বালিটিকুরি হাসপাতালে গেলে আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব কাগজপত্রে সই করিয়ে নেন। এর পরে মর্গের দায়িত্বে থাকা শাহ আলম নামে ওই ব্যক্তির কাছে পাঠানো হয় তাঁদের।

মোর্তাজার কথায়, ‘‘সেখানে আমাদের তিনটি মৃতদেহ দেখানো হয়। যার মধ্যে আমার বাবা ছিলেন না। এর পরেই আমি হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করি। কিন্তু উনি দেখা করেননি। আমার ধারণা, বাবার দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়েছে।’’ এর পরে রবিবারই দাশনগর থানায় অভিযোগ জানান মোর্তাজা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মৃতদেহ দেখতে না পেয়ে সোমবার সকালে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের পরিবারের লোকজন। এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। মৃতের পরিবারের দাবি, তাঁদের দেহ দেখাতে হবে। যদি কোনও ভাবে দেহ হাতবদল হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সেটাও জানাতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এ দিন বিকেল পর্যন্ত এই সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

গোলমালের খবর পেয়ে বালিটিকুরি হাসপাতালে ছুটে যান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস-সহ জেলার পদস্থ কর্তারা। তাঁরা কথা বলেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে। মাত্র তিন দিন আগেও সুপারের দায়িত্বে থাকা রোসিনা মণ্ডল বসাকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, গত শুক্রবার থেকে তিনি দায়িত্বে নেই। স্বাস্থ্য দফতরের প্রশাসনিক আধিকারিক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ওই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কী হয়েছে, তা তিনি জানেন না।

তবে মৃতদেহ না পাওয়া নিয়ে হাওড়ার স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘মৃতের পরিবারকে যে দেহ দেখানো হয়েছিল, তা লিখিত ভাবে রয়েছে। আসলে পরিবারটি মৃতদেহ নিতে চায়নি। এ দিকে হাসপাতালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মর্গ নেই। তাই পচন ধরার আগে হাওড়া পুরসভার মৃতদেহবাহী ভ্যানে করে আরও চারটি দেহের সঙ্গে ওই দেহটিও নিয়ে গিয়ে শিবপুর শ্মশানঘাটে কোভিড-বিধি মেনে দাহ করে দেওয়া হয়েছে।’’

যদিও এ কথা মানতে নারাজ মৃতের পরিবার। তাঁদের দাবি, যে ভ্যানে করে পাঁচটি মৃতদেহ শ্মশানে পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে আশরাফের দেহ যে ছিল না, তা তাঁরা দেখেছেন। তা হলে দেহ কি আগেই বদল হয়েছে অথবা হাতবদল হয়েছে— সেই প্রশ্ন তুলছে পরিবার। যদিও রাত পর্যন্ত উত্তর মেলেনি।

Death Corona COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy