Advertisement
০৩ ডিসেম্বর ২০২৩
Boatwrights of Balagarh

যাওয়া হল না প্রশিক্ষণে, ক্ষোভ নৌ-শিল্পীদের

গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নয়াদিল্লিতে ‘পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা’ ঘোষণা করেন। উদ্দেশ্য, দেশের সব ধরনের নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কারিগরদের একটা বড় মঞ্চ দেওয়া।

নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা।

নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা। নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বজিৎ মণ্ডল
বলাগড় শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৪
Share: Save:

বার্তা পৌঁছল না? নাকি সমন্বয়ের অভাব? এখনও জবাব খুঁজে চলেছেন বলাগড়ের নৌ-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। তাঁদের আফসোস, আমন্ত্রণ এল, কিন্তু মনোনয়ন পাঠানোর পরে শেষ পর্যন্ত যাওয়া হল না কেন্দ্রের ‘বিশ্বকর্মা প্রকল্পের’ প্রশিক্ষণে। তাঁদের দাবি, যোগাযোগের অভাব ঘুচিয়ে যদি সেই মঞ্চে সত্যিই যাওয়া সম্ভব হত, তা হলে ধুঁকতে থাকা এই শিল্প বাড়তি অক্সিজেন পেতে পারত।

বলাগড়ের থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের সপ্তগ্রামে এক কালে গড়ে উঠেছিল বন্দর। ভারতে ইউরোপীয়দের বাণিজ্য মূলত জলপথে হওয়ায় গঙ্গা তীরের এই গ্রামটি ঘিরে নৌ-শিল্প গড়ে উঠতে সময় লাগেনি। একটা সময়ে এখানে নৌকা তৈরির কারখানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫-৪০টিতে। এলাকায় অনেকে আছেন, যাঁরা কয়েক পুরুষ ধরে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে।

নৌকার বিক্রি কমে যাওয়ায় কারখানার সংখ্যা এখন ঠেকেছে ১৭-১৮টিতে। ‘বিশ্বকর্মা প্রকল্পে’র প্রশিক্ষণে ডাক পড়ায় নৌ-শিল্পীরা ভেবেছিলেন, নিজেদের কথা দেশের শিল্পী মহলে তুলে ধরতে পারলে তাঁরা পরে ‘জিআই’ তকমা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। তা হলে সমস্যা কিছুটা হলেও ঘুচত। এখন কার্যত হতাশায় তাঁরা।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নয়াদিল্লিতে ‘পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা’ ঘোষণা করেন। উদ্দেশ্য, দেশের সব ধরনের নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কারিগরদের একটা বড় মঞ্চ দেওয়া। এই যোজনায় কারিগরদের প্রাথমিক ও উচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ এবং ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। পরে আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

উৎপল বারিক নামে বলাগড়ের এক নৌ-শিল্পী জানান, ক’দিন আগে হুগলি জেলাশাসকের দফতর ও রাজ্যের কারিগরি দফতর থেকে ওই প্রশিক্ষণে যোগদানের জন্য তাঁদের কয়েক জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, “আধার কার্ড, ই-মেল আইডি ও ফোন নম্বর-সহ চার জনের নাম পাঠানো হয়। ১১ সেপ্টেম্বর আধিকারিদের সঙ্গে শেষ কথা হয়। এর পরে প্রশাসন আর যোগাযোগ করেনি আমাদের সঙ্গে।”

স্থানীয় ইতিহাস গবেষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্বকর্মা প্রকল্পে এখানকার নৌ-শিল্পীদের ডাক এসেছে শুনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্তরের সঙ্গে সমস্ত কথার পরেও তাঁদের যাওয়া হল না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”

এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শাসক-বিরোধীদের তরজা শুরু হয়েছে। হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শিল্পীদের কাছ নেওয়া কাগজপত্র রাজ্য সরকার আদৌ পাঠিয়েছে কি না, সন্দেহ রয়েছে। নৌ-শিল্পীদের কাছে যদি প্রকল্প সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র এসে থাকে, তা নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে খতিয়ে দেখব— কেন তাঁরা যেতে পারলেন না।”

বলাগড় ব্লক তৃণমূল সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পকে গুরুত্বই দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, “লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র এ সব করে প্রচারের আলোয় আসতে চাইছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে কি না প্রশ্ন রয়েছে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এখানে কারিগরদের ‘পিএম বিশ্বকর্মা পোর্টালে’ যুক্ত করা হবে। মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। দেশের ১৮টি শিল্পের কারিগরেরা এই সুযোগ পাবেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন, কামার, স্বর্ণকার, মৃৎশিল্পী, ভাস্কর, নৌ-কারিগর, পুতুল-খেলনার কারিগর প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE