ভূগর্ভস্থ জলের স্তর কমছে। মাটির নীচের জল বাঁচাতে নানা পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। এ বার তারা চাইছে, মানুষের ব্যবহার করা জল সংরক্ষণ করতে।
এই লক্ষ্যে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে জলের বর্জ্যের মধ্যে ‘ধূসর জল’ (গ্রে ওয়াটার) পুনর্ব্যবহারে বিশেষ জোর দেওয়া হল। ধূসর জল হল, রান্নাঘরে ব্যবহৃত, স্নান, পোশাক, বাসন আসবাবপত্র ধোয়া তুলনামূলক কম দূষিত জল। ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমাতে এবং একই সঙ্গে গ্রামের নির্মলতার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ওই সংক্রান্ত নির্দেশিকা সোমবার রাজ্য থেকে জেলা এবং ব্লকে পাঠানো হল।
মঙ্গলবার থেকে হুগলি জেলায় সেই কাজ শুরু হয়েছে জানিয়েছেন জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক। তিনি বলেন, “প্রথম দফায় কাজটি রূপায়ণের জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে বিদ্যালয়-সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামের বাড়িতেও এই প্রক্রিয়া চলবে। প্রতিটি পরিবারে শৌচাগার নির্মাণে যেমন জোর দেওয়া হয়েছে, তেমনই প্রতি বাড়িতে ধূসর জল ফের পরিস্রুত করে ব্যবহারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এতে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হবে। তাতে ভূগর্ভে জলের স্তর বাড়বে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ধূসর জল বড় সম্পদ। আবার সেই জলই যেখানে সেখানে ফেলার প্রবণতায় গ্রামে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ নিয়ে সচেতনতার ব্যবস্থা হচ্ছে। যত্রতত্র ওই ধূসর জল জমে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি তাতে মশা জন্মে নানা রোগের প্রকোপ হতে পারে। সে কথা মানুষকে জানানো এবং ওই জল পুনর্ব্যবহারের ভাল দিকগুলির বিষয়ে মানুষকে অবহিত করা হচ্ছে। ওই জল ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কিচেন গার্ডেন, সম্প্রদায়গত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে। সর্বোপরি সোক পিট, লিচ পিট ইত্যাদি তৈরি করে ভূগর্ভে জলের সঞ্চয় করা জরুরি।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতি দিন ১ হাজার লোকসংখ্যার গ্রামে স্বচ্ছ জল ব্যবহার হয় (মাথা-পিছু ৫৫ লিটার) মোট ৫৫ হাজার লিটার। গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহারের পরে সেই জলের মধ্যে ধূসর জল উৎপন্ন হয় ৪৪ হাজার লিটার। এই জলই সম্পদ হিসাবে পুনর্ব্যবহার করা যাবে।
ধূসর জলের পুনর্ব্যবহার কঠোর ভাবে কার্যকর করার পক্ষে রায় দিচ্ছেন জেলার কৃষি, কৃষিজ সেচ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, এমনিতেই মাটির নীচে জলের জোগানের ব্যবস্থা বিশেষ নেই বলে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক বার বার সতর্ক করছে। এই অবস্থাতেও মানুষের সচেতনতার অভাবে পানীয় এবং চাষের কাজে তোলা ভূগর্ভস্থ জলের ৬০ শতাংশের বেশি নষ্ট হয়। হুগলির বিভিন্ন ব্লকে মাটির নিচের জলের স্তর নিয়ে চিন্তা রয়েছে প্রশাসনের। এই প্রকল্প যথাযথ ভাবে কার্যকর হলে, ভূগর্ভে জলের ঘাটতি অনেকটাই মিটবে বলে তাঁরা মনে করেন।
প্রসঙ্গত, ভূগর্ভে সঞ্চিত জলের উপর চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় বেশ কিছু প্রকল্প ইতিমধ্যেই কার্যকর রয়েছে। যেমন, প্রতি জেলায় সর্বনিম্ন তিন বিঘা এলাকা নিয়ে ৭৫টি করে ‘অমৃত সরোবর’ থাকার কথা। তাতে জলধারণ ক্ষমতা হবে প্রায় ১০ হাজার ঘনমিটার। এ ছাড়া ‘আদমি’ (অ্যাক্সিলারেটেড ডেভেলপমেন্ট অব মাইনর ইরিগেশন) প্রকল্পে পুকুর তৈরি করে সেচ ব্যবস্থা হচ্ছে। ‘জলশক্তি অভিযান’ প্রকল্পে পুকুর, ‘জল বিভাজিকা অভিযান’ কর্মসূচিতে উঁচু জমির জন্য জল শোষণ পরিখা, ছোট ছোট কুয়ো তৈরি-সহ জল সংরক্ষণের নানা আধার তৈরি করা হয়। ধূসর জল সংরক্ষণ করা গেলে, ভূগর্ভস্ত জলের ব্যবহার অনেকটাই কমবে বলে সংশ্লিষ্ট দফতরের আশা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)