Advertisement
E-Paper

Bagnan: ‘প্রণামী’ দিলেই কাজ, না হলে ভোগান্তির অভিযোগ

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে, হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় ১০ কাঠার নীচে যখন জমি কেনাবেচা করা হয় তখনই বিপাকে পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতা।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২২ ০৬:৩৯
হাওড়ার একটি ব্লক ভূমি ও  ভূমি সংস্কার দফতর।

হাওড়ার একটি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। নিজস্ব চিত্র।

জমি রেজিস্ট্রি থেকে শুরু করে তা মিউটেশন করা পর্যন্ত মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই হাওড়া গ্রামীণ এলাকায়। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। জমি কেনাবেচা করার ক্ষেত্রে ভোগান্তির যে অভিযোগ উঠেছে সেটা মূলত রেজিস্ট্রি খরচ বাড়ানোর জন্য নানা ফন্দির। অন্য দিকে, জমির মিউটেশনের বিষয়ে দেরির অভিযোগও ওঠে অহরহ।

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে, হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় ১০ কাঠার নীচে যখন জমি কেনাবেচা করা হয় তখনই বিপাকে পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতা। অভিযোগ, যদি শালি (চাষযোগ্য) জমিও কেউ কি‌নতে চান তখন বিভিন্ন সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে জমিটিকে বাস্তু হিসাবে বদলে রাজস্ব দিয়ে রেজিস্ট্রি করাতে হবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শালি জমির রাজস্ব অনেক কম। সেই জমি যদি বাস্তু জমি হিসাবে রেজিস্ট্রি করাতে হয়, সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি বাবদ রাজস্ব দিতে হয় অনেক বেশি।

বাগনান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করাতে এসেছিলেন বাগনানের সুবল বসু। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সাত কাঠা জমি কিনতে চাই। জমিটি শালি হিসাবে রেকর্ড করা। কিন্তু সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানানো হয়েছে এটিকে বাস্তু হিসাবে রেজিস্ট্রি করাতে হবে। তাতে রেজিস্ট্রি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বাড়তি রেজিস্ট্রি খরচ দিতে হওয়ায় বিক্রেতাকে জমির দাম কমাতে বলেছি।’’

জমি রেজিস্ট্রির কাজে যুক্ত মুহুরিদের একাংশ জানান, জমি রেজিস্ট্রি বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায় হয়। বিভিন্ন শালি জমিকে বাস্তু হিসাবে রেজিস্ট্রি করাতে বাধ্য করিয়ে জেলার বিভিন্ন সাব রেজিস্ট্রাররা সরকারকে বাড়তি আয় দেখানোর প্রতিযোগিতায় নামেন। এতে সরকারের লাভ হয় বটে। কিন্তু কোপ পড়ে গরিব মানুষের উপরে। আরও অভিযোগ, সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ‘প্রণামী’ দিলে অবশ্য ঝামেলা পোহাতে হয় না। শালি জমি হিসাবেই তা রেজিস্ট্রি হয়ে যায়।

শুধু তাই নয়, দলিলের সার্টিফায়েড কপি তুলতে গেলেও ঝামেলায় পড়তে হয়। সার্টিফায়েড কপি তুলতে হয় সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকেই। এর জন্য লাগার কথা গোটা পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু বেশিরভাগ সাব রেজিস্ট্রি অফিসেই বাড়তি টাকা গু‌নতে হয়। সেটা নেওয়ার জন্যও আলাদা লোক আছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এই ঝামেলার হাত থেকে বাঁচতে এখন বহু মানুষ হাওড়া থেকে জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন। হাওড়াতেও জমি রেজিস্ট্রি করানোর জন্য একাধিক সাব রেজিস্ট্রার আছেন। তাই সেখানে ভিড় বাড়ছে।

জমি কেনার পরে আসে মিউটেশন-পর্ব। এখানেও একাধিক সমস্যা। এখন প্রতিটি ব্লকে অনলাইনে মিউটেশন হচ্ছে। আবেদন জমার পরে ১৫ দিনের মধ্যে সেই জমি মিউটেশন করানোর কথা। কিন্তু অভিযোগ, সময় লেগে যাচ্ছে কমপক্ষে একমাস। অনেক সময় তা দু’মাসেও গড়িয়ে যায়। শুধু তাই নয়, উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে ফেলার নজিরও আছে।

বহু সময়ে যিনি জমি বিক্রি করেননি তাঁর জমিও অন্যের নামে রেকর্ড করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মিউটেশন বা রেকর্ড করার কাজটি করে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। অভিযোগ, ওই দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের একাংশের যোগসাজসেই এইসব অপকর্ম হয়। রেকর্ড সংশোধনের জন্য এই দফতরেই মামলা করতে হয়। মামলা হলেও রেকর্ড সংশোধন করাতে কেটে যায় মাসের পর মাস। বাগনান-২ ব্লকের এক ব্যক্তির অভিযোগ, ‘‘আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার জমি অন্যের নামে রেকর্ড করে দেওয়া হয়েছে।ভূমি দফতরে বিষয়টি জানালেও সুরাহা হয়নি। জীবিত থাকার প্রমাণপত্র নিয়ে দিনের পর দিন দফতরে গেলেও রেকর্ড সংশোধন হয়নি।’’ শুধু তাই নয়, শালি জমিকে বাস্তুতে পরিণত করে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। বাস্তুতে পরিণত করার জন্যও অনেক সময় লাগে বলে অভিযোগ। এখানেও ‘টাকার খেলা’ চলে বলে অভিযোগ।

জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘জমি রেজিস্ট্রির জন্য যে রাজস্ব নেওয়া হয় তার জন্য এলাকাভিত্তিক ধাপ আছে। অনলাইনে মিউটেশন এবং জমিকে শালি থেকে বাস্তুতে পরিণত করতেও অনেক কম সময় লাগছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে মিউটেশনের আগে তদন্ত করে দেখে নিতে হয়। এই কাজের জন্য অনেক ব্লকেই কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম আছে। সেই কারণেই কিছুটা দেরি হয়।’’

Bagnan Land Mutation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy