বাগনানে সংক্রমণ রোধে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতিপক্ষ গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। তাঁরাও পিছু হটার নন।
অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক এবং জীবাণুনাশক স্প্রে— তিন হাতিয়ারে সজ্জিত হয়ে করোনার বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়েছেন বাগনানের কালিকাপুর গ্রামের দম্পতি সৈকত পাত্র এবং স্বপ্না মিদ্যা। সঙ্গে নিয়েছেন কয়েকজন উৎসাহী যুবককে। কালিকাপুর, জোকা এবং বাঙালপুর— আপাতত বাগনানের এই তিন গ্রামেই চলছে তাঁদের মরণপণ লড়াই।
কিশোরী অবস্থা থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ান স্বপ্না। নানা ধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করছেন স্বামী, পেশায় ব্যবসায়ী সৈকত। দু’জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও আছে। সেই সংস্থার হয়েই কোমর বেঁধে তাঁরা করোনা ঠেকাতে নেমেছেন।
১৬ হাজার টাকায় দু’টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া করেছেন দম্পতি। ফেসবুকে ‘হেল্পলাইন নম্বর’ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন অক্সিজেনের প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। নিখরচায় দেওয়া হচ্ছে ওই পরিষেবা। গ্রাম ও বাজারগুলিকে জীবাণুমুক্ত করার কাজও চলছে। বাজারে ‘মাস্ক বক্স’ বসিয়েছেন। যাতে যাঁরা বাজারে আসছেন, তাঁদের মাস্ক না থাকলে ওই বাক্স থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
স্বপ্না বলেন, ‘‘এই পর্যায়ে প্রধান সমস্যা অক্সিজেন। তাই অক্সিজেনের জোগানকেই আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। আরও দু’টি সিলিন্ডার আমরা খুব শীঘ্র ভাড়া নেব।’’ সৈকতের কথায়, ‘‘মূলত যে সব সংক্রমিতের বাড়িতে চিকিৎসা হচ্ছে, তাঁদেরই প্রয়োজনমতো অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকজন আমাদের এই পরিষেবা নিয়ে উপকৃত হয়েছেন।’’
করোনার প্রথম পর্যায়েও মানুষের সঙ্গে থেকেছেন ওই দম্পতি। তখন তাঁরা মূলত মানুষকে খাবার দেওয়া, বাড়িঘর জীবাণুমুক্ত করার কাজ করেছেন। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আরও জটিল। ফলে, তাঁদের কাজও বেড়েছে।
কালিকাপুর গ্রামকে তাঁরা জীবাণুমুক্ত করছেন। বাজারেও এই কর্মসূচি পালন করছেন। গত শনিবার তাঁরা বাঙালপুর বাজারে প্রতিটি দোকান জীবাণুমুক্ত করেন। পাশের হারোপ বাজারেও তাঁরা এই কাজ করবেন বলে সৈকতবাবু জানান।
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন মহল থেকে প্রচার করা হলেও এখনও অনেকে মাস্ক না-পরে বাজারে আসছেন। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে। বাঙালপুর বাজার কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে শনিবার দম্পতি একটি ‘মাস্ক বক্স’ বসিয়েছেন। সৈকত বলেন, ‘‘মাস্ক না পরে যাঁরা বাজারে আসবেন, তাঁরা এই মাস্ক-বক্স থেকে বিনামূল্যে মাস্ক পেয়ে যাবেন। বাজার কমিটিকে বলা আছে, তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট জায়গায় বাজার শুরুর সময়ে বাক্সটি বসিয়ে দেবেন। বাজার শেষ হয়ে গেলে ফের তা তুলে রাখবেন। মাস্ক শেষ হয়ে গেলে আমরা ফের মাস্ক ভরে দিয়ে আসব।’’
এর জন্য যা খরচ হচ্ছে তার সবই তাঁরা করছেন চাঁদা তুলে। খরচের খুঁটিনাটি হিসাব তাঁদের কাছে আছে বলেও স্বপ্না জানান। তাঁদের সঙ্গে আছেন আকাশ পাত্র, নির্মল পালের মতো যুবকেরা। সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন করোনা মোকাবিলায়। সৈকত বলেন, ‘‘যে তিনটি গ্রামে আমরা কাজ করছি, সেখানে একজন করোনা রোগীও যাতে অক্সিজনের অভাবে বিপদে না পড়েন সেটা সুনিশ্চিত করাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy