পুর-প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার জন্য তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছে। সেই অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার নামে তাঁদের থেকে ‘কাটমানি’ নেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার আরামবাগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধপাড়ার বাসিন্দা, তাপস দাস নামে এক তৃণমূল নেতার ঘেরাও করলেন গরিব মানুষেরা। ফেরতের আশ্বাস দিয়েও তাপস টাকা ফেরত দেননি বলে অভিযোগ।
টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তাপসের সাফাই, ‘‘পুরসভার কর্তাদের জানিয়েই এই কাজ করেছি। দলের উপরতলার নেতারা বাড়ির অনুমোদন হলেই ১৫-২০ হাজার টাকা করে উপভোক্তাদের কাছে নিয়েছেন। আমি এলাকার দিনমজুর, পরিচারিকার কাজ করা মানুষদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে দু’হাজার টাকা করে নিয়েছি। তাঁদের দেওয়া ৩ হাজার টাকার মধ্যে এক হাজার টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টেই জমা আছে। বাকি দু’হাজার টাকা ফেরত দেব বলে অঙ্গীকার করেছি।” এরপরে তাঁর হুমকি, “এরপরেও যদি আমাকে গ্রেফতার হতে হয়, সব উপরতলার নেতাদের নাম থানায় বলব।” তাপসকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীন পুরসভা এলাকায় ‘সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। উপভোক্তার অবদান ২৫ হাজার টাকা। রাজ্যের অবদান ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা এবং কেন্দ্রের ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। বাকি রাস্তা, নিকাশি ইত্যাদি পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার জন্য পুরসভা পৃথক ভাবে ১৮ হাজার টাকা খরচ করবে। ওই প্রকল্পে বাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ’খানেক উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তাপস ‘কাটমানি’ নেন বলে অভিযোগ।
ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে বাপ্পা সর্দার, উর্মিলা মালিকের অভিযোগ, “বাড়ি না পেয়ে গত এক বছর ধরেই আমরা টাকা ফেরত চাইছি। গত চার মাস ওই নেতা ঘর ছেড়ে পালিয়েছিল। ভোটের পর তৃণমূলের রমরমা ফিরে এসেছে। আমাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনও প্রমাণপত্র নেই বলে হুমকি দিচ্ছিলেন উনি। অগত্যা আজ বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাই।’’
সংশ্লিষ্ট ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সমীর ভান্ডারির অভিযোগ, “এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়টা আমি বছর চারেক ধরেই পুরসভার নজরে এনে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিন্তু দলের প্রভাবশালী কিছু নেতার প্রশ্রয়েই এই তোলা আদায়ের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি।” তা হলে বিষয়টি কি কিছুই জানতেন না? পুরপ্রশাসক স্বপন নন্দীর সাফাই, ‘‘না, জানতাম না। ক্ষতিগ্রস্তদের থানায় অভিযোগ করতে বলেছি। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবও বলেন, ‘‘দল কাউকে অন্যায় করার অনুমতি দেয় না। কেউ এই কাজ করলে বা যুক্ত থাকলে শাস্তি পেতেই হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানিয়েছি। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’