খানাকুলের ময়াল গ্রামের জলকর রায়দের পুজো। —নিজস্ব চিত্র।
মহিষাসুর নেই। দুর্গার দু’টো হাত। সিংহ দু’টো। দুই সিংহ মূর্তির উপরে সিংহাসনে উপবিষ্ট দুর্গা। দ্বারকেশ্বর নদ সংলগ্ন খানাকুলের বন্যাপ্লাবিত ময়াল গ্রামের এই পুজোর সূচনা প্রায় ৩৫০ বছর আগে। নবাবি আমলেজলকরের আদেশনামা পাওয়া জমিদার বাণীকণ্ঠ রায় জলকর আদায়ের টাকায় পুজোর সূচনা করেছিলেন বলেই বংশানুক্রমে জেনে এসেছেন পরিবারের সদস্যেরা।
দ্বারকেশ্বর নদ থেকে শুরু করে অধুনা পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক পর্যন্ত বিভিন্ন নদ-নদী থেকে জলকর আদায়ের আদেশনামা পাওয়া পরিবারটি এলাকায় ‘জলকর রায়’ পরিবার নামে পরিচিত। পরিবারের প্রাচীন পুজোর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় জিতা অষ্টমীর পর দিন। আড়ম্বর শুরু হয় প্রতিপদ বোধনের দিন থেকে। রীতি অনুযায়ী, ওই দিন পরিবারের কুলদেবী অষ্টধাতুর ভুবনেশ্বরী মূর্তিটি মূল মন্দির থেকে এনে দুর্গা দালানে স্থাপন করেন রায় বংশের কুল পুরোহিত। ঢাক-ঢোল, সানাই বসে। প্রতিমায় ডাকের সাজ। চালচিত্রের উপরে বিভিন্ন পৌরাণিক গল্পগাথার চিত্র আঁকা। বংশানুক্রমে আরও যে সব রীতি অবিকল আছে, তা হল প্রতি বছর মূর্তির মুখের আদল একই থাকে। পুজোর সঙ্গে যুক্ত ঢাকি, ঢুলি, মূর্তি শিল্পী, নাপিত ইত্যাদি সব পরিবারকেই পূর্বপুরুষ জমি দিয়ে রাখায় বংশানুক্রমে কাজ করছেন এঁরা। ছাগ বলির পাশাপাশি আখ এবং কুমড়ো বলি হয়।
তবে বেশ কিছু প্রথা প্রায় বছর পঞ্চাশ ধরে আর পালন করা যায়নি বলে আক্ষেপ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের। জলকর রায় পরিবারের প্রবীণ সদস্য অরবিন্দ বলেন, ‘‘প্রথা ছিল, বেলা থাকতে প্রতিমা বিসর্জনের পর শঙ্খচিল দর্শন করে ঠাকুর দালানে ফিরে শান্তি জল নিতে হবে। কিন্তু শঙ্খচিলের এখন দেখা মেলে কোথায়? তাই শঙ্খচিলের স্মরণ নিয়ে দ্বারকেশ্বর নদের ঘাট থেকে ফিরতে হয়। এ ছাড়া, আর্থিক কারণে দরিদ্রনারায়ণ সেবা এবং বস্ত্রদানও বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’ তিনি জানান, পরিবারটি বাড়তে বাড়তে এখন ৫০টির বেশি হয়েছে। এই শরিকি পুজোর খরচের সবটাই আসে দেবোত্তর জমি এবং দু’টি পুকুরের মাছ চাষের আয় থেকে। প্রাচীন দুর্গা দালান সংস্কার হয় পরিবারগুলির চাঁদায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy