E-Paper

দৌদীপের ক্যামেরায় দেশ দেখল সুড়ঙ্গের শ্রমিকদের

বৃহস্পতিবার ফোনে দৌদীপ জানান, উত্তরাখণ্ডের সরকারের তরফে তাঁদের সংস্থাকে ওই ক্যামেরা পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। সংস্থার নির্দেশে এক সহকর্মীকে নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছন।

কেদারনাথ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২৩
উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারকাজে দৌদীপ খাঁড়া (ইনসেটে)।

উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারকাজে দৌদীপ খাঁড়া (ইনসেটে)। ছবি: সংগৃহীত।

দেশজোড়া উদ্বেগের মধ্যে তিনি উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে পৌঁছন ২০ নভেম্বর। পাইপের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন এন্ডোস্কোপিক ক্যামেরা। তাতেই গোটা দেশ দেখল, সুড়ঙ্গে আটক ৪১ জন শ্রমিককে। মঙ্গলবার রাতে শ্রমিকদের বের করার সময়েও ছিল সেই ক্যামেরার ভূমিকা।

এই কাজের পিছনে দৌদীপ খাঁড়া নামে এক বঙ্গসন্তান। সিঙ্গুরের ওই যুবক একটি বেসরকারি সংস্থার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কর্মরত কর্নাটকের বেলগ্রামে। উদ্ধারকাজে অংশীদার হতে পেরে তিনি খুশি।

সিঙ্গুরে না-হওয়া মোটরগাড়ি প্রকল্পে দৌদীপদের জমি পড়েছিল। এক সময় তাঁদের পরিবার প্রকল্প এলাকার পাশেই বাজেমিলিয়ায় থাকত। বছর তিরিশ ধরে সিঙ্গুরেরই কিসমতপুর-অপূর্বপুরে থাকে। টাটা-বিদায়ের পরে ওই চৌহদ্দিতে থাকা জমি ফেরত পেয়েছেন। তবে, চাষাবাদ করা হয় না।

বৃহস্পতিবার ফোনে দৌদীপ জানান, উত্তরাখণ্ডের সরকারের তরফে তাঁদের সংস্থাকে ওই ক্যামেরা পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। সংস্থার নির্দেশে এক সহকর্মীকে নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তবে, সারা দেশ যেখানে ওই শ্রমিকদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেখানে কাজের শুরুতে বেশ চাপে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘তিন বারের চেষ্টায় ক্যামেরা পাঠিয়ে আমরাই প্রথম ওঁদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি। দেখাতে পারি, প্রত্যেকে ভাল আছেন। ওঁদের পরিবারের লোকজন-সহ দেশবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।’’ তিনি জানান, ছয় ইঞ্চির
একটি পাইপের মধ্যে দিয়ে ক্যামেরা ঢোকানো হয়েছিল। পরে পাশ দিয়ে বড় পাইপ ঢোকানো হয়। মঙ্গলবার সেই পাইপ দিয়েই শ্রমিকদের বের করে আনা হয়।

দৌদীপের বক্তব্য, উদ্ধারকাজে প্রচুর বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ক্যামেরার ছবি দেখে পরবর্তী ধাপের কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘এই উদ্ধারকাজ কারও একার সাফল্য নয়। প্রায় ৬০০ জন ১৭ দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আটকে থাকা শ্রমিকদের সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করতে সফল হয়েছেন। তাতে সামান্য কিছু অংশের কাজে নিযুক্ত হতে পেরে আমি খুব খুশি। এমন কাজে ডাক পেলেই যাব।’’

সিঙ্গুরে বাড়িতে বসে বাবা ‌দীনেশচন্দ্র জানান, উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হওয়ার পরে দৌদীপ হুগলি টেকনিক্যাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ২০১৫ সালে ডিপ্লোমা করেন। তার পরে গুজরাতে চাকরি পান। এখন চাকরির পাশাপাশি হাওড়ার ধূলাগড় সি কম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বি টেক পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরকাশীতে উদ্ধারকাজে ছেলের যাওয়া নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। তবে, বিশ্বাস ছিল। ছেলে উদ্ধারকাজে নিযুক্ত অন্যদের সাহস জুগিয়েছে। ভবিষ্যতে ছেলে আরও এ ধরনের কাজে সাফল্য পাক, এটাই চাইব।’’ মা সবিতা বলেন, ‘‘খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ, ছেলে ভীতু ছিল। ভিন্‌ রাজ্যে চাকরি পাওয়ার পরে সাহস বেড়েছে। উদ্ধারকাজে ছেলের ভূমিকায় আমি গর্বিত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Singur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy