নিম্নচাপের অকাল বৃষ্টিতে আলু চাষ মার খেয়েছে। জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বহু জমির সদ্য বসানো আলুবীজ পচে গিয়েছে হুগলিতে। বাধ্য হয়ে নতুন করে আলুবীজ কিনে ফের চাষের তোড়জোড় শুরু করেছেন চাষি। তাতেও রক্ষে কই! অভিযোগ, চাহিদার সুযোগে খারাপ মানের আলুবীজের বস্তায় পঞ্জাবের নামী সংস্থার স্ট্যাম্প সেঁটে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এমন নকল আলুবীজ ধরাও পড়েছে।
ওই বীজ চাষ করলে আলুর মান ভাল হবে না বলে চাষি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই মনে করছেন। তাতে ক্ষতি আখেরে চাষিরই। নকলের বিষয়টি জেনে পঞ্জাবের জালন্ধর থেকে একটি নামী আলুবীজ সংস্থার প্রতিনিধিরা এ রাজ্যে এসেছেন। পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। রাজ্যের সংশ্লিষ্ট আমলা এবং আলুবীজ ব্যবসায়ী সমিতির কর্তাদের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলেছেন।
আলুবীজ ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক স্বপন সামন্ত বলেন, ‘‘সব ক্ষেত্রেই অসাধু চক্র থাকে। এ ক্ষেত্রেও আছে। আড়তে সিসি ক্যামেরা
লাগানো থেকে চালানে সংস্থার নাম দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে চাষিকে সতর্ক করতে। তারপরেও এমন ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তারকেশ্বরেই একটি আড়তে এবং উত্তরবঙ্গেও মিলেছে নকল আলুবীজ। আমরা চাষিদের বলেছি, সন্দেহ হলেই আমাদের জানাতে।’’
জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, নকল আলুবীজ নিয়ে চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি পুলিশ দেখছে।
পশ্চিমবঙ্গ আলু চাষে দেশের প্রথম হলেও বীজের জন্য পঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশের উপরে নির্ভরশীল। দিন কয়েক আগে অভিযোগ ওঠে, উত্তরপ্রদেশের কিছু ছোট আলু পঞ্জাবের নামী সংস্থার স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তায় চালানো হচ্ছে। যদিও ওই সংস্থার বীজ বেশ কিছুদিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের কাছে খবর ছিল। বর্তমানে খোলা বাজারে সেই আলুবীজ পাওয়ার কথাও নয়। হুগলির তারকেশ্বর, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি ও ধূপগুড়িতে এই অসাধু ব্যবসা ধরা পড়ে। আলুবীজ ব্যবসায়ী সমিতির তরফে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। খোলা বাজারে যে তাঁদের আলু নেই, সেই বিষয়ে প্রশাসনকে নিশ্চিত করে জানান জালন্ধরের ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা। আলুবীজ ব্যবসায়ীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও সবাইকে সতর্ক করা হয় বিষয়টি নিয়ে।
তারকেশ্বরের রামনগরের এক চাষি বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে জমিতে আলু পচে যাওয়ায় চাষিরা হন্যে হয়ে চড়া দামে বীজ কিনছেন যখন, তখনই অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র সুযোগ বুঝে ঠকানো শুরু করেছে। এই আলুবীজ জমিতে বসালে চাষিরা ফের সর্বস্বান্ত হবেন। নামী সংস্থার স্ট্যাম্প দেওয়া বস্তা দেখে ভুললে চলবে না। কিন্তু সব ক্ষেত্রে আমরাই বা নকল ধরব কী ভাবে?’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)