মেয়ে সম্রাজ্ঞী, স্ত্রী দেবযানীর সঙ্গে অভিজিৎ দাস। —নিজস্ব চিত্র।
লিলুয়ায় একই পরিবারের তিন জনের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় উঠে এল ভয়াবহ তথ্য। মেয়ে যখন অনলাইন ক্লাসে ব্যস্ত তখন তার মাথায় হাতুড়ি মেরে খুন করেন স্বয়ং বাবা। এমনটাই ধারণা করছে পুলিশ। মৃত্যুর সময় মেয়ের পরনে ছিল স্কুলের পোশাক। তা দেখেই এই অনুমান পুলিশের। পাশাপাশি ওই কাণ্ডে আরও বেশ কিছু তথ্য হাতে এসেছে তদন্তকারীদের।
গত শনিবার হাওড়ার লিলুয়া থানার বেলগাছিয়া কে রোডের বাসিন্দা অভিজিৎ দাস (৪৭) নামে এক ব্যবসায়ী, তাঁর স্ত্রী দেবযানী (৪২) এবং তাঁদের মেয়ে সম্রাজ্ঞী (১৩)-র রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনার দু’দিনের মাথায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। রবিবার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, দেবযানী এবং সম্রাজ্ঞীর মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। অভিজিৎ এবং দেবযানীর বছর তেরোর মেয়ে সম্রাজ্ঞী সে একটি অভিজাত ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করত। মৃত্যুর সময় তার পরনে ছিল স্কুলের পোশাক। তা দেখে পুলিশের ধারণা, সম্রাজ্ঞীকে যখন খুন করা হয়েছে তখন সে স্কুলের অনলাইন ক্লাসে ব্যস্ত ছিল। ঠিক সেই সুযোগেই তাকে মাথায় হাতুড়ির মারেন অভিজিৎ। এর পর তিনি স্ত্রীকেও একই কায়দায় খুন করেন। সব শেষে অভিজিৎ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
স্ত্রী এবং মেয়েকে অভিজিৎই যে খুন করেছেন তা একরকম নিশ্চিত তদন্তকারীরা। খুনের কারণ হিসাবে উঠে আসছে আর্থিন অনটনের তত্ত্বই। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, অভিজিৎ স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার করেছিলেন। সেই টাকা শোধ না করতে পারার জন্য প্রায়শই অশান্তি হত দেবযানী এবং অভিজিতের মধ্যে। সম্প্রতি ওই গয়না নিলাম করে দেওয়ার কথাও ছিল ব্যাঙ্কের। কিন্তু তার আগে ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। পুলিশের ধারণা, মূলত ব্যাঙ্কের গয়না ছাড়িয়ে আনা নিয়েই সে দিন অভিজিৎ এবং দেবযানীর তুমুল অশান্তি হয়েছিল। তার জেরেই ওই কাণ্ড বলে মনে করা হচ্ছে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের ব্যবসা ছিল অভিজিতের। কিন্তু লকডাউনে সেই ব্যবসায় কোপ পড়ে। অতিমারি পরিস্থিতিতে বহু জায়গায় অক্সিজেন সরবরাহ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন অভিজিৎ। কিন্তু সেই ব্যবসাতেও তাঁর অনেক টাকা বকেয়া থেকে যায়। আবার ওই সময়েই কোভিডে আক্রান্ত হন দেবযানী। সেরে উঠলেও কোভিড পরবর্তী নানা শারীরিক সমস্যাতেও ভুগছিলেন তিনি। অভিজিতের মা-ও শয্যাশায়ী। তাঁরও চিকিৎসারও খরচ ছিল। পাশাপাশি মেয়ের পড়াশোনাার খরচও ছিল বিপুল পরিমাণ। তদন্তকারীরা জেনেছেন, শ্বশুরবাড়ির থেকেও টাকা নিতে হয়েছিল অভিজিৎকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy